বৈদেশিক ঋণে নানা শর্ত, এডিপিতে কমছে বরাদ্দ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২৪ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারী,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০২:০২ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) অর্থ ব্যবহার করতে না পারায় বিদেশি ঋণ সহায়তা কমলেও ঠিক থাকছে দেশীয় অর্থের পরিমাণ। সরকারি তহবিল থেকে বেশি বেশি নতুন বরাদ্দ নিচ্ছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। নতুন বরাদ্দের অধিকাংশই অনুমোদনহীন প্রকল্পে যাচ্ছে। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পে (এডিপি) সেসব অনুমোদনহীন নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্তি নিয়ে চাপে রয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। তবে এসব খাতে বিদেশি ঋণ সহায়তার পরিবর্তে সরকারি তহবিল থেকে অর্থায়নে আগ্রহী কমিশন। কয়েক বছরের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পে বৈদেশিক অর্থায়ন কাটছাঁটে এবার রেকর্ড হয়েছে। এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। চলতি (২০২১-২২) অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বিশাল পরিমাণ অর্থ কাটছাঁট করা হচ্ছে। তবে বৈদেশিক ঋণের টাকা কাটছাঁট করা হলেও আরএডিপিতে ঠিক থাকছে সরকারি অংশ। নতুন অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা ব্যয় সংবলিত এডিপি অনুমোদন করা হয়েছিল। তার মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস বা সরকারি খাত থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ২৯৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা মেটানো হবে। সংশোধিত এডিপিতেও এটা ঠিক থাকছে। প্রতি বছরই এডিপিতে বৈদেশিক বরাদ্দ কমানোর একটা প্রবণতা থাকে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এতো বেশি হারে কমানো হয়নি। গত বছর সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছিল।
অর্থাৎ এ বছর গত অর্থবছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি কমছে। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে কাটছাঁট করার অন্যতম কারণ করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রম, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এডিপিতে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ থাকলেও বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে খরচ করতে না পারায় এই অর্থ ফেরত দিয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। চলতি অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ ছিল ৮৮ হাজার ২৪ কোটি টাকা। এখন সংশোধিত এডিপির জন্য এ বরাদ্দ কমিয়ে ধরা হয়েছে ৭০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অর্থ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) একটা খসড়া এডিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। ইআরডি ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে চলতি অর্থবছর এডিপি থেকে এডিপিতে (সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস রয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহে এডিপি চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে পারে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এনইসি সভায় প্রস্তাবিত আরএডিপির অনুমোদন দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে কাজ করছে পরিকল্পনা কমিশন।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, নানা কারণে বৈদেশিক ঋণ কমেছে সংশোধিত এডিপিতে। কারণ বৈদেশিক ঋণের টাকা খরচে ওই সংস্থার নিয়ম নীতি মানতে হয়। এছাড়া বৈদেশিক পরামর্শকের মতামত নিতে হয়। প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থছাড়ের বিষয়ে বিদেশি সংস্থার মতামত নিতে হয়। অনেক সময় উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে পৌঁছাতে সময়ক্ষেপণ করতে হয়। কিন্তু দেশীয় অর্থ খরচে দেশীয় নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়। প্রকল্প পরিচালকেরা দেশীয় নিয়ম নীতি বেশি জানেন। তবে উন্নয়ন সহযোগীদের নানা ধরনের নিয়মনীতি থাকে, যা অনেক সময় বুঝতে পারেন না প্রকল্প পরিচালকরা। এসব কারণেই মূলত দেশীয় অর্থ খরচ বেশি হলেও সেইভাবে বৈদেশিক অর্থ খরচ করা যায় না।
পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কৃষি, শিল্প ও সমন্বয় উইং) মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক ঋণ কমলেও কমছে না সরকারি অর্থের পরিমাণ। দেশীয় অর্থ ঠিক থাকলেও বৈদেশিক ঋণ সহায়তার অর্থ খরচ কেন কমছে?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদেশি অর্থ খরচের নানা নিয়ম কানুন আছে। আমরা কোনো প্রকল্প বিশ্বব্যাংকের ঋণে যখন বাস্তবায়ন করবো, তখন বিশ্বব্যাংকের নিয়মনীতি মেনে কাজ করতে হবে। তাদের পরামর্শক যেভাবে বলবেন সেইভাবে করতে হবে। কিন্তু দেশীয় অর্থ খরচের ব্যাপারে এমনটা হয় না। দেশীয় আইন কানুন মেনে হয়। প্রকল্প পরিচালকদের বৈদেশিক ঋণের বিষয় বুঝতেও সময় লাগে। মূলত এসব কারণে বৈদেশিক ঋণ কমলেও সংশোধিত এডিপিতে ঠিক থাকছে সরকারি অংশ। নতুন এডিপিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। এ খাতে বরাদ্দ ৬১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এরপর বিদ্যুৎখাতে গুরুত্ব দিয়ে ৪৫ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২৩ হাজার ৪২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে গৃহায়ণ খাতে। নতুন এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে চতুর্থ স্থানে শিক্ষা। এ খাতে ২৩ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা মোট এডিপির ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ। এছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগে ১৪ হাজার ২৭৪ কোটি, পরিবেশ ও পানি উন্নয়নে ৮ হাজার ৪৭০, কৃষিতে ৭ হাজার ৬৪৬, শিল্পখাতে ৪ হাজার ৬৪৩, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিখাতে ৩ হাজার ২০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়াও পাবলিক অর্ডার অ্যান্ড সেফটি খাতে ৩ হাজার ২০৪ কোটি, সাধারণ সেবা খাতে ২ হাজার ৯২৩, সাংস্কৃতিক খাতে ২ হাজার ১৯০, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে এক হাজার ৬৪৮ কোটি এবং ডিফেন্স খাতে ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সংশোধিত এডিপিতেও এসব খাত গুরুত্ব পাবে বলে দাবি পরিকল্পনা কমিশনের।