ব্যাংক থেকে ওয়ালটন-ইউনাইটেডের ১৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৪৭ পিএম, ২৮ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৩৪ এএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
অনলাইনে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে তাৎক্ষণিক তহবিল স্থানান্তরের (টাকা ট্রান্সফার) বিশেষায়িত পদ্ধতি রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) ব্যবহার করে ডাচ্- বাংলা ব্যাংক লিমিটেডে (ডিবিবিএল) রাখা ওয়ালটন গ্রুপের সাড়ে ৬ কোটি ও ইউনাইটেড গ্রুপের ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে একটি চক্র।
আর এই কারসাজিতে মূল কলকাঠি নেড়েছেন ডিবিবিএলেরই একজন কর্মকর্তা। তাকেসহ চক্রের ১০ জনকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর আজ শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে তথ্য জানায় পুলিশ।
গ্রেফতার ব্যাংক কর্মকর্তার নাম জাকির হোসেন (৩৫)। তিনি ডাচ্-বাংলার কারওয়ানবাজার শাখায় এসএমই সেলস টিম ম্যানেজার হিসাবে কাজ করছিলেন। পুলিশ বলছে, ডিবিবিএলে চাকরি করার সুবাদে ব্যাংকের সার্ভার থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ করতেন জাকির। যেসব অ্যাকাউন্টে টাকার পরিমাণ বেশি থাকতো তাদের ব্যাংক হিসাবের স্বাক্ষর জাল করে আরটিজিএসের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফারের পরিকল্পনা করেন তিনি।
যেভাবে সামনে এলো ঘটনা : ডাচ্-বাংলার বসুন্ধরা শাখায় থাকা ওয়ালটন গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে ৬ কোটি টাকা আরটিজিএস ফরমে ট্রান্সফারের একটি আবেদন আসে ২৫ জানুয়ারি সকালে। বিডি লি. নামে একটি কোম্পানির এবি ব্যাংকের মতিঝিল শাখার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফারের আবেদনটি করা হয়। আবেদনটি অস্বাভাবিক মনে হয় ডাচ্-বাংলার বসুন্ধরা শাখার ব্যবস্থাপকের কাছে। তিনি তখন ওয়ালটন গ্রুপের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। ওয়ালটনের কর্মকর্তারা ব্যাংকে গিয়ে বিষয়টি যাচাই করেন। সেখানে গিয়ে তারা বুঝতে পারেন এখানে প্রতারক চক্রের হাত রয়েছে। এরপর টাকা ট্রান্সফারের আবেদনটি স্থগিত করা হয়।
এ বিষয়ে আজ শুক্রবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা এই প্রতারক চক্রের ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। চক্রটির কার্যক্রম ব্যাংকের ভেতর থেকে শুরু হয়। এর বাইরে চক্রটির সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে। আমরা যখন তাদের গ্রেফতার করতে যাই তখন তারা ইউনাইটেড গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে ১২ কোটি টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল।’
তিনি বলেন, ‘চক্রটি দুইভাবে কাজ করে। এক অংশ যে গ্রুপ বা ব্যক্তির টাকা তারা ট্রান্সফার করবে সেই নির্দিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে। আরেকটি অংশ যেই শাখায় টাকা ট্রান্সফারের আবেদনটি জমা পড়বে, সেই শাখার ব্যবস্থাপককে তাদের পক্ষে আনার জন্য বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে ম্যানেজ করে।’ চক্রটি এরকম জালিয়াতি আরও করেছে কি না একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ওয়ালটন গ্রুপের টাকাটা তারা ট্রান্সফার করার চেষ্টা করছিল। এছাড়া গ্রেফতারের আগে এরা ইউনাইটেড গ্রুপের ১২ কোটি টাকা ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিল। এর আগে এরা এরকম ট্রান্সফার করেছে কি না তা আমরা জানি না। আদালত তাদের রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি দিলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে।’ এরা কী ধরনের অ্যাকাউন্ট টার্গেট করে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এরা মূলত বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক বা গ্রুপের অ্যাকাউন্টকে টার্গেট করে। এমন প্রতিষ্ঠানকে তারা টার্গেট করে যেখান থেকে অ্যামাউন্ট ট্রান্সফার হলে যেন তাড়াতাড়ি না বোঝা যায়। কেননা বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বড় অংকের টাকা থাকে।
যেভাবে পরিকল্পনা ছিল কাজের : বৃহস্পতিবার জাকির হোসেন ছাড়া আরও যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হলো- ইয়াসিন আলী (৩৪), মাহবুব ইশতিয়াক ভূঁইয়া (৩৫), আনিছুর রহমান সোহান (৪২), মো. দুলাল হোসাইন (৩৫), মো. আসলাম (৫৩), আব্দুর রাজ্জাক (৪৮), জাকির হোসেন (৪৪), মো. আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া (৫৬) ও মো. নজরুল ইসলাম (৫০)। জাকির হোসেন অ্যাকাউন্টের তথ্য নেয়ার পর ও পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার পর ইয়াসিন আলীকে স্বাক্ষর জালিয়াতির কাজ দেয়। পরে ইয়াসিন আলী স্বাক্ষর জাল করে মাহবুব ইশতিয়াক ভূঁইয়ার পরিচালিত অ্যাকাউন্ট এনআই করপোরেশন, বিডি লি. নামে এবি ব্যাংকের মতিঝিল শাখা অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করে জাল ব্যাংক দলিল তৈরি করে। পরে তারা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অন্য আসামিদের ঠিক করে। পুলিশ বলছে, গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ডিবিবিএল-এর সার্ভার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে টাকা আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করছিল।