অ্যাকাউন্ট থেকে কেন টাকা কেটে রাখছে ব্যাংক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১২ পিএম, ৩ জানুয়ারী,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:৪৭ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
নতুন বছরের শুরু এবং গেল ডিসেম্বরে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকের অনেক গ্রাহক তাদের মোবাইলে ম্যাসেজ পেয়েছেন। বার্তাটিতে তার যে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে সেই অ্যাকাউন্ট থেকে একটা নির্দিষ্ট অংকের টাকা কেটে রাখার কথা বলা হয়েছে। এক্সাইজ ডিউটি বা আবগারি শুল্ক নামে এই টাকা রাখা হয়েছে।
তবে গ্রাহকদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে কেন এই টাকা কাটা হচ্ছে। অনেকে আবার তার অ্যাকাউন্টে জমা থাকা অর্থের সাথে যে পরিমাণ শুল্ক কেটে রাখা হয়েছে সেটা বেশি বলে মন্তব্য করছেন।
তেমনি একজন গ্রাহক সুমাইয়া নিশাত। তিনি বলছেন, ডিসেম্বরের ৩০ তারিখে তিনি একটা এসএমএস পান তার ব্যাংক থেকে।
‘আমার মোবাইলে প্রায় মধ্য রাতে একটা এসএমএস আসে। সেখানে লেখা রয়েছে ৩০০০ টাকা কেটে রাখা হয়েছে এক্সাইজ ডিউটি হিসেবে। আমি প্রথমে ভাবলাম হয়ত আমার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে। কিন্তু পরে আরো কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানলাম তাদেরও টাকা কাটা হয়েছে। তবে আমার টাকার অংকটা বেশি। এর কারণ আমি এখনো বুঝতে পারছি না।’
ব্যাংক থেকে এমন ম্যাসেজ পেয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। তারা জানতে চাচ্ছেন, কেন এই টাকা কাটা হয়েছে। সুলতানা মৌসুমি নামে আরো একজন গ্রাহক জানিয়েছেন, এক্সাইজ ডিউটির সঙ্গে তিনি আরো একটা এসএমএস পেয়েছেন।
‘আমি দুটা এসএমএস পেয়েছি। একটাই ডেবিট ট্যাক্স ডিডাকশন, আরেকটা এক্সাইজ ডিউটি। সব মিলিয়ে আমার তিন হাজার দুই শ’র মতো টাকা কেটে রাখা হয়েছে,’ জানান তিনি।
কেন টাকা কেটে রাখা হয়?
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহাবুবুর রহমান বলছেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বছরে দুইবার-একবার জুনে এবং একবার ডিসেম্বরে টাকা কেটে রাখা হয়।
‘এটা সরকারের রেভিনিউ জেনারেট করার একটা প্রসেস। সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইন্টারনাল রিসোর্স ডিভিশন যেটাকে আইআরডি বলে তাদের নির্দেশনামতো হয়। এখানে ব্যাংকের কোনো আয় নেই। পুরোটাই ব্যাংক সরকারের হয়ে কালেক্ট করে সরকারের অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়।’
কোন কোন ক্ষেত্রে টাকা কাটা হয়?
এক লাখ টাকা পর্যন্ত কাউকে এক্সাইজ ডিউটি বা আবগারি শুল্ক দিতে হবে না। এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫০ টাকা কাটা হবে। যার ১০ লাখ টাকা থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত আছে তার ৩ হাজার টাকা কাটা যাবে।
রহমান বলেন ‘একটা নির্দিষ্ট বছরে কোনো একটা সময় যদি আপনার অ্যাকাউন্টে ১০ লাখ টাকার বেশি থাকে তাহলে বছর শেষে যদি ৫০ হাজার টাকা থাকে তাহলেও একসাইজ ডিউটি ৩ হাজার টাকা কাটা হয়।’
ডেবিট ট্যাক্স ডিডাকশন : টিন থাকলে ভ্যাটের ১০ শতাংশ কেটে রাখা হয়। আর টিন না থাকলে ১৫ শতাংশ কেটে রাখা হয়। এই দুইভাবে ব্যাংক গ্রাহকের টাকা সরকারের কোষাগারে জমা করে।
তবে এছাড়া মোবাইল সার্ভিসের জন্য আলাদা টাকা খরচ করতে হয় গ্রাহকদের। ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, এক্ষেত্রে তারা আগেই গ্রাহকের কাছ থেকে জানতে চান যে, তারা মোবাইল এসএমএস সার্ভিস চান কি না। যদি তারা সেটা চান তাহলে যে টাকা কাটা হয় সেটা ওই মোবাইল কোম্পানির কাছে চলে যায়। তবে এখানে ব্যাংকের কিছুটা লাভ থাকে।
কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, এই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হয়। সরকার সেখান থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহার করে।