পাইকগাছায় স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজের টাকা আত্মসাৎতের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৫৪ পিএম, ২৩ মে,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:৪৬ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
মহামারি করোনাকালীণ সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাওয়া সাধারণ কর্মীদের বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সয়ং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ নিতিশ চন্দ্র গোলদারের বিরুদ্ধে এমপি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক, খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), খুলনা সিভিল সার্জন, খুলনা বিভাগীয় দূর্নীতি দমন কমিশন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মরত সাধারণ স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারীরা।
প্রাপ্ত অভিযোগে জানানো হয়, মহামারী করোনাকালীন সময়ে তৃণমূলের সাধারণ মানুষের মাঝে করোনা টিকা প্রদানে সরকার মাঠ পর্যায়ে কর্মীদের অতিরিক্ত ঝুঁকিসহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ দেন। অথচ বরাদ্দের অর্থ প্রথমত কাউকে না দিয়ে সমুদয় অর্থ আত্নসাতের অপচেষ্টা করেন পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নিতীশ চন্দ্র গোলদার। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি শুধুমাত্র দু'দিনের জন্য গত ৬/১১/২১ ও ৮/১১/২১তারিখে কমিউনিটি ক্লিনিক ভিত্তিক ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত ১৩,৫০০টাকার স্থলে মাত্র ৯,৭০০ টাকা প্রদান করেন। এ ছাড়া ওয়ার্ড ভিত্তিক করোনা টিকা প্রদানে বরাদ্দকৃত ৩২,৮০০ টাকার স্থলে মাত্র ১৭,০০০টাকা প্রদান করে বাকি টাকা তিনি নিজেই আত্নসাৎ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয় ঐ অভিযোগপত্রে।
এছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, ডা: নিতীশ চন্দ্র তাদের সাথে কারণে-অকারণে খারাপ আচরণ করেন। একারণে তার সাথে অনেকেই কথা বলতে পর্যন্ত সাহস পাননা। গত বুধবার এ ব্যাপারে তুষার সরকার, আবু জাফর, জেবুন্নেছা খানম,নিখিল চন্দ্র ঘোষ,কাজল কুমার সরকার,মফিজুল ইসলাম,ধীরাজ মোহন,কবির আহম্মেদ,অনিমা মন্ডল, সঞ্জয় দাশ ও শাহানারা সহ ভুক্তভোগী ও অসহায় স্বাস্হ্য সহকারিরা জানান, বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরােধে গ্রাম পর্যায়ে ডাের টু ডাের বাদ পড়া মানুষের তালিকা করে জনগণের দোড় গোড়ায় সেবা পৌছাতে ইপি আই কেন্দ্রে ১৬ দিনের জন্য কোভিড-১৯ টিকা কার্যক্রমের পদক্ষেপ নেন। যার ফলশ্রুতিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে ৬ জন টিকাদান কর্মী, ৯ জন স্বেচ্ছাসেবী, ১ জন সুপার ভাইজার ও ১ জন ঔষধ পরিবহন কারীর উল্লেখ করে বাজেট ব্রেক আপ প্রজ্ঞাপন জারি করেন।ব্রেক আপ বাজেটের আওতায় টিকাদান কারী ৬X৫০০X১৬ =৪৮,০০০টাকা, স্বেচ্ছাসেবী ৯X৩৫০X১৬ =৫০,৪০০টাকা,পরিবহনকারী ১x৫০০X১৬ =৮,০০০টাকা ও সুপার ভাইজার ১জন =২,০০০টাকা মিলিয়ে সর্বমোট ১,০৮,৪০০টাকার বাজেট এর উপর বিল ভাউচার অফিস সহকারি নার্গিস বানুর মাধ্যমে জমা দিয়ে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্হ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃনিতীশ চন্দ্র গোলদার তার একান্ত বিশ্বস্ত ও অধীনস্হ কর্মচারী দিয়ে অপর দুই বিশ্বস্ত ও অধীনস্হ কর্মচারী রুহুল কুদ্দুস ও সিরাজুল ইসলামের মাধ্যমে ইউনিয়ন প্রতি ৬০,০০০ টাকা করে দিয়ে নিরীহ স্বাস্থ্য সহকারীদের বদলীর ভয় দেখিয়ে অর্ধেক টাকা নিতে বাধ্য করেন।
এক পর্যায়ে স্বাস্থ্য সহকারী আল আমিন রেজা সিরাজুলের প্রস্তাবে রাজী না হয়ে বাক বিতন্ডে জড়ালে তাকেও আদালা ভাবে ডেকে সমাধান করে নেয়। পরবর্তীতে অসহায় স্বাস্থ্য সহকারীরা কোন উপায়ন্ত না পেয়ে তাদের ন্যায্য পাওনা বুঝে পেতে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সোলাদানা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারী আল আমিন রেজা জানান,ইউনিয়ন সুপার ভাইজার সিরাজুল ইসলাম প্রথমে তাকে ২০,০০০টাকা দিলে পাইকগাছা বাজারে তার সাথে এক প্রকার বাক-বিতন্ডা হয় এবং এ বিষয়টি তিনি উপজেলা স্বাস্হ্য ও পঃপঃকর্মকর্তা কে জানালে পরবর্তীতে ইউনিয়ন সুপার ভাইজার সিরাজুল তাকে আয়কর ভ্যাট বাদে বাকী ৯,৬০০টাকা দিয়ে সর্বমোট ২৯,৬০০টাকার বিল ভাউচারে সই করে নেন।
সোলাদানা ইউনিয়ন সুপার ভাইজার সিরাজুল ইসলাম জানান, আমার সাথে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারী আল আমিন রেজার কোন বাক-বিতন্ডা হয়নি। কোন কোন ইউনিয়নের স্বাস্হ্য সহকারিরা জুরুরী ভিত্তিতে ১৭,০০০টাকা নিয়েছিল তবে ঈদুল ফিতরের আগের দিন তাদের টাকা নিতে আসার কথা থাকলে ও কেউ আসেনি। আর এ বিষয়ে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই, মাঠ কর্মীরা কাজ করেছে তারাই ভালো বুঝবে, আমার কোন কিছু বলার নেই আর স্যার এব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন। গদাইপুর ইউনিয়ন স্বাস্হ্য পরিদর্শক নুর আলী মোড়ল জানান,অভিযোগটি আমার জানা মতে সত্য। এ ইউনিয়ন থেকে স্বাস্থ্য সহকারী বেবি রানী সরদার ও প্রজিত রায় কে উপজেলা স্বাস্হ্য ও পঃপঃকর্মকর্তা টাকা আনার জন্য ডাকলে আমি তাদের কে টাকা নিয়ে আসার জন্য যেতে বলি। পরে তারা জানায় তাদের কে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করে ১৭,০০০টাকা নিতে বাধ্য করা হয়েছে। তবে এঘটনার পরে অন্যদের ডাকলেও পরে আর কেউ যায়নি বলেও তিনি জানান।
উপজেলা স্বাস্হ্য পরিদর্শক মীর আব্দুস সেলিম জানান, যোগদানের প্রায় ৯মাস অতিবাহিত হয়েছে। যোগদানের কিছুদিন পর কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও সচেতনতায় ১লাখ ৪৪হাজার টাকার একটি বাজেট আসলে উপজেলা স্বাস্হ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা তাকে ৯৭,০০০টাকা দিয়ে সম্পূর্ণ টাকার বিল ভাইচারে সই করতে বললে তিনি তাতে অস্বীকৃতি জানান এবং এ বিষয়কে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হওয়ায় পরবর্তীতে কোন কার্যক্রম সম্পর্কে তাকে না জানিয়ে তিনি নিজেই তার একান্ত বিশ্বস্ত ও অধিনস্ত কর্মচারী নার্গিস বানু,সিরাজুল ইসলামের মাধ্যমে তিনি এধরনের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, মাঠ পর্যায়ের সহকারি স্বাস্হ্য কর্মীদের অভিযোগটি সত্য। এসব অভিযোগের ব্যাপারে গত বুধবার পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডা: নিতীশ চন্দ্র গোলদারের সাথে কথা বলতে তার কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার অনুগত জনৈক কর্মচারী দাবি করেন, করোনাকালীণ বরাদ্দের টাকা তিনি এখনো উত্তোলনই করেননি। ভারত থেকে দেশে ফেরার পর তা ডিস্ট্রিবিউট হবে।
এছাড়া যারা যারা টাকা পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন তাও নাকি বরাদ্দের টাকা প্রাপ্তির পর পরিশোধ শর্তে তার কাছ থেকে ধার হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক কর্মচারীরা জানান, উপজেলা স্বাস্হ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা বর্তমানে চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থান করছেন। এর আগে প্রায় ৩মাস পূর্বেও তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন। তবে এবারও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ফলোআপের জন্য ভারতে গেছেন। তবে চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার ব্যাপারটি সত্য হলে তার বাংলাদেশী চিকিৎসা ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বারংবার ভারতে যাওয়ার বিষয়টিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
খুলনা সিভিল সার্জন ডাঃ সুজাত আহমেদ জানান,অভিযোগ পেয়েছি তবে উপজেলা স্বাস্হ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ নিতীশ চন্দ্র গোলদার বর্তমানে ভারতে অবস্হান করছেন। তিনি দেশে ফিরলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্হা নেওয়া হবে।