মিয়ানমারে গোলাগুলি-বিস্ফোরণ, কেঁপে উঠছে টেকনাফ সীমান্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:১৬ পিএম, ২৬ জুন,
বুধবার,২০২৪ | আপডেট: ০৫:৩৪ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সংঘাতের জেরে আবারো কাঁপছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফ। কয়েকদিন শান্ত থাকার পর বুধবার (২৬ জুন) ভোর রাত থেকে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মিয়ানমারের সীমান্ত।
মিয়ানমারের ওপারের বিস্ফোরণে টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন ও শাহপরীরদ্বীপ, মিস্ত্রীপাড়া, জালিয়াপাড়া সাবারাং ইউনিয়নের আঁচার বনিয়া সিকদার পাড়া, ও সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, হাংকার ডেইল পৌরসভার জালিয়াপাড়া, নাইথ্যাং পাড়া খায়ুক খালীপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে।
জানা গেছে, মিয়ানমার মংডু, বুথেডং ও রাথেডংয়ের কয়েকটি গ্রামে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা নাফ নদ ও সীমান্ত সড়কে টহল বৃদ্ধি করেছে।
সদর ইউনিয়ন এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আমিন জিসান বলেন, ভোর থেকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এখনো চলমান। শিশুরা শব্দগুলো শুনে ভয় পাচ্ছে।
জানতে চাইলে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, সীমান্তে সকাল থেকে খুব বেশি গুলির শব্দ হচ্ছে বলে সীমান্তের লোকজনের কাছে শুনেছি। তবে ওপারে ঠিক কোন এলাকায় এ ঘটনা ঘটছে এপারে নাফ নদ থাকায় সেটা বলা যাচ্ছে না।
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের গোলার শব্দে দ্বীপের সীমান্ত এলাকা কাঁপছে। আধঘণ্টা পরপর ওপারের গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। আজকের গোলাগুলির শব্দ শাহপরীর দ্বীপ বাজারে পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। এতে সীমান্তে বসবাসকারী শিশু-নারীরা ভয়ভীতির মধ্যে আছেন।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান বলেন, বুধবার দিবাগত রাত থেকে মর্টারশেল ও গুলির শব্দে দ্বীপের ঘরবাড়িগুলো কেঁপে উঠেছে। এখনো কিছুক্ষণ পরপর শব্দ শুনতে পাচ্ছি, আমরা দ্বীপের লোকজন খুবই আতঙ্কে আছি।
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা গৃহিণী আমিনা খাতুন বলেন, ফজরের নামাজের পর থেকে গোলাগুলির শব্দ শুনেছি। প্রথমে বজ্রপাতের শব্দ মনে করেছি। পরে নিশ্চিত হয়েছি মিয়ানমারে ফের যুদ্ধ শুরু হয়েছে।
টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভোর ৫টার দিকে বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে। ভেবেছি বাড়ির ছাদ ভেঙে পড়েছিল। এরপর নিশ্চিত হয়েছি, মিয়ানমারের গোলার শব্দ এপারে এসেছে। ঘণ্টাখানেক সময়ে বেশ কয়েকটি বড় গোলার শব্দ শুনেছি। এর আগে আমাদের সীমান্ত থেকে এভাবে শব্দ শোনা যায়নি। এতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, সীমান্তে রাত থেকে থেমে থেমে গোলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিনের তুলনায় আজ গোলার শব্দ বিকট। এতে সীমান্তের লোকজনের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদারের পাশাপাশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিরা গোলাগুলির শব্দের বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। মিয়ানমারে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তে বসবাসরত বাংলাদেশের নাগরিকদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে।