আজ ছাতনী গণহত্যা দিবস, ১০ গ্রামে চলে নৃশংস হত্যা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৯ পিএম, ৪ জুন,মঙ্গলবার,২০২৪ | আপডেট: ০১:২৪ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
আজ ৪ জুন, নাটোর ছাতনী গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের ৪ জুন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি রেড লেটার ডে। এই দিন নাটোরের ছাতনী গ্রামসহ ১০ গ্রামে রাতে ঘটে মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় নৃশংস হত্যাকাণ্ড।
মঙ্গলবার (৪ জুন) সকালে নাটোর সদর উপজেলার ছাতনীতে স্থাপিত স্মৃতিসৌধে শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক করেন জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভুঁঞা।
এ সময় শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত ও শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আখতার জাহান সাথী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদদের পরিবার, সাংবাদিকসহ ইউনিয়নের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
৪ জুন রাতে ছাতনী, নারীবাড়ি, শিবপুর, পণ্ডিতগ্রাম, বারোঘড়িরা, ভাটপাড়া, আমহাটি, ভাভনি, হাড়িগাছা, রঘুনাথপুর ও বনবেলঘরিয়াসহ ১০টি গ্রামে রাতে ঢুকে ঘুমন্ত মানুষদের হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনীসহ কয়েকশ বিহারী।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালে এদিনে রাতে পাক হানাদার বাহিনীসহ কয়েকশ বিহারী নাটোর সদরের ছাতনী গ্রামসহ আশপাশের ১০টি গ্রামে প্রবেশ করে শতাধিক ঘুমন্ত বাঙালিকে ধরে ছাতনী স্লুইচ গেটে এনে একত্রিত করে হাফেজ আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে গুলিসহ ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে এবং জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল। তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করতে মুখে এসিড দিয়ে ঝলসানো হয়। পরে এসব শহীদদের লাশ ছাতনী স্লুইচ গেটসহ আশপাশের পুকুর ও ডোবায় মাটিচাপা দেওয়া হয়।
১৯৭১ সালের নাটোরের ছাতনী গ্রামের গণহত্যার সেই নৃশংস ও হৃদয় বিদারক কথা আজও এ এলাকার মানুষের মনে নাড়া দেয়। মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর উত্তরাঞ্চলের হেড কোয়ার্টার ছিল নাটোরে। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা নাটোরের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চালিয়েছে। এরমধ্যে নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী গ্রামের গণহত্যা ছিল নৃশংস ও হৃদয়বিদারক।
প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা তৎকালীন এমসিএ শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর বাড়ি ছাতনী গ্রামে হওয়ায় এই জনপদের অধিকাংশ মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। এ কারণে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা অবাঙালিদের আক্রোশে পড়ে এই গ্রাম।
পরবর্তীতে ২০১০ সালে ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে জেলা পরিষদের অর্থায়নে নতুন করে স্মৃতি ফলকের নির্মাণ করা হয়।
প্রতিবছর স্থানীয় লোকজন দিবসটি পালন করলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে দিনটি পালন করার কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। সবার নাম সংগ্রহ করতে না পারায় মোট ৬৪ জনের নাম খোদাই করে লেখা রয়েছে। স্বাধীনতার ৫২ বছরেও সরকারি স্বীকৃতি না পাওয়ায় আক্ষেপ করেন স্থানীয়রা। এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, ছাতনী গণহত্যার দিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
স্মৃতিস্তম্ভের শহীদের তালিকা নামগুলো হলো- ছাতনী গ্রামের মনির উদ্দিন সরকার, কালা মিয়া, নূরুজ্জামান, আব্দুল হান্নান, নূর মহাম্মদ, শফিউল্লাহ, আবু বকর, আব্দুল্লাহ মুন্সী, হোসেন পাটোয়ারী, আব্দুল জব্বার, কালা পাল, নিমাই চৌধুরী, শুকুমার চৌধুরী, জসিম উদ্দিন শাহ, আজাহার উদ্দিন শাহ, মনতাজ উদ্দিন শাহ, আবুল কালাম, শাহাবুদ্দিন, কালাম প্রাং, ইসমাইল, ইব্রাহিম, শুটকা, আজাহার, আব্দুর রহমান, কফিল উদ্দিন।
বনবেলঘড়িয়া গ্রামের সেকেন্দার, কোরবান আলী, নরেশ ঠাকুর, কালু মিয়া, সুলতান মিয়া। গোকুলপুর গ্রামের আব্দুস সামাদ, আব্দুল কাদের।
পণ্ডিতগ্রামের মনোয়ার হোসেন মনু, ডা. আব্দুল হামিদ, সোনা চৌকিদার, চতু মন্ডল। ভাবনী গ্রামের মেছের প্রাং, শুকবাস মন্ডল, ওসমান শেখ, এছার উদ্দিন হোসেন মন্ডল, কছির উদ্দিন মোল্লা, বাদেশ প্রাং, সুলতান পাটোয়ারী, কেয়ামত মোল্লা, রুহুল আমিন ভূঁইয়া, আছের শেখ, কেকু প্রাং, আব্দুর রহমান, কাঁচু প্রাং।
ছাতনী দিয়াড় গ্রামের আয়ুব আলী মন্ডল, ছাতনী পূর্বপাড়া গ্রামের সৈয়দ আলী মুন্সী, ছাতনী শিবপুর গ্রামের পচাই দফাদার, হামিদ দফাদার, ভাটপাড়া গ্রামের ময়দান মোল্লা, শিবপুর গ্রামের সাধু প্রাং, খলিল মন্ডল, শুকুর প্রাং, হাড়িগাছা গ্রামের কালা চাঁদ, রঘুনাথপুর গ্রামের শুকলাল, বড়গাছা গ্রামের জঙ্গী, আব্দুল জব্বার, জসিম উদ্দিন ও আব্দুল কাশেম। এছাড়া নাম না জানা আরও প্রায় তিনশ শহীদ রয়েছেন।