ব্যাংকের লকার থেকে এবার দেড়শ ভরি সোনা গায়েব
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০৫ এএম, ২ জুন,রবিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৩:৩১ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে সোয়া এক কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন ক্যাশিয়ার। এ খবরের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার আরেক শাখার লকার থেকে ১৪৯ ভরি সোনা গায়েব হয়ে গিয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের চকবাজার শাখায়। বর্তমানে এক ভরি সোনার বাজারমূল্য ১ লাখ ১৭ হাজার ১৭৭ টাকা। সে হিসেবে খোয়া যাওয়া সোনার দাম ১ কোটি ৭৪ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭৩ টাকা।
তবে সোনার মালিকের দাবি, এসব সোনা ব্যাংকের কর্মকর্তা, কর্মচারীরাই সরিয়ে ফেলেছেন। এদিকে ব্যাংক থেকে সোনা চুরির বিষয়টি চট্টগ্রাম নগরীতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
জানা যায়, নগরের চকবাজার এলাকার ইসলামী ব্যাংকে গেল ২৯ মে লকার খুলে চুরির বিষয়টি বুঝতে পারেন সোনার মালিক রোকেয়া বারী। এরপর তিনি চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সাধারণ ডায়েরি এন্ট্রি করেনি চকবাজার থানা। তাই আগামী সোমবার (৩ জুন) চট্টগ্রাম আদালতে একটি মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। রোকেয়া বারী নগরের চট্টেশরী রোডের বিটিআই বেভারলী হিলসের বাসিন্দা।
তার চুরি হওয়া ১৪৯ ভরি সোনার মধ্যে রয়েছে ৪০ পিস হাতের চুরি (বড় সাইজ)। যার ওজন ৬০ ভরি। গলা ও কানের ৪টি জড়োয়া সেট। যার ওজন ২৫ ভরি। ১০ ভরি ওজনের একটি গলার সেট। ২৮ ভরি ওজনের ৭টি গলার চেইন। ১৫ ভরি ওজনের ৪টি আংটি। ৩০ জোড়া কানের দুল। যার ওজন ১১ ভরি।
রোকেয়া বারী বলেন, গত ১৬ থেকে ১৭ বছর ধরে চকবাজারের ইসলামী ব্যাংকের একটি লকার ব্যবহার করি। পাশাপাশি আমার নামে একটি অ্যাকাউন্টও রয়েছে। কিন্তু গত বুধবার (২৯ মে) দুপুর দেড়টায় আমি কিছু সোনা লকার থেকে আনতে যাই। এসময় লকারের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে লকার খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানাই। তিনি তার চাবি দিয়ে লকার রুমে দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে আমার জন্য বরাদ্দ রাখা লকার খোলা পাই। পরে আমি বিষয়টি দ্রুত চকবাজার থানার ওসিকে জানাই। তিনি দ্রুতই ঘটনাস্থলে আসেন, দেখতে পান আমার লকারে মাত্র ১০-১১ ভরি সোনা অবশিষ্ট রয়েছে। আমার ধারণা, ব্যাংকের লোকজনই এ ঘটনায় জড়িত।
তিনি কালবেলাকে আরও বলেন, এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ব্যাংকই যদি আমাদের কাছে নিরাপদ না থাকে, তাহলে আর কাকেই বা বিশ্বাস করব।
ভুক্তভোগী রোকেয়া বারীর ছেলে রিয়াদ মোহাম্মদ মারজুক শুক্রবার (৩১ মে) বিকেলে কালবেলাকে বলেন, এ ঘটনায় চকবাজার থানার একটি সাধারণ ডায়েরি করতে যাই, কিন্তু ওসি সাহেব বলেছেন জিডি হবে না মামলা করতে হবে। তাই আগামী সোমবার চট্টগ্রাম আদালতে আমরা মামলা দায়ের করব। সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এই বিষয়ে জানতে ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখার ম্যানেজার শফিকুল মওলাকে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটেছে, তবে মোবাইলে কিছুই বলা যাবে না। অফিসে আসেন, কথা বলব।’
এই বিষয়ে জানতে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবরের অফিসিয়াল নম্বরে কয়েকবার কল দিলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে চকবাজার থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) তৌহিদ কবিরের অফিসিয়াল নম্বরে কল দিলে তিনিও কল রিসিভ করেননি।
ইসলামী ব্যাংকের সোয়া কোটি টাকা নিয়ে উধাও ক্যাশিয়ার
সম্প্রতি বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার চাঁপাপুর ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট শাখা থেকে গ্রাহকের ১ কোটি ২০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হন ক্যাশিয়ার সুজন রহমান ও তার পরিবার। এ ঘটনায় ২৮ মে চাঁপাপুর ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট শাখার স্বত্ত্বাধিকারী নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আসামিরা হলেন, ব্যাংকের ক্যশিয়ার গোবিন্দপুর গ্রামের সুজন রহমান, তার বাবা এনামুল হক ও মা রুবিয়া খাতুন।
মামলা সূত্রে থেকে জানা যায়, আদমদীঘি উপজেলার চাঁপাপুর বাজারে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ এজেন্ট শাখার ত্ত্ত্বাবধায়ক গোবিন্দপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম ছয়জন কর্মচারী নিয়ে পাঁচ বছর ধরে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। সুজন রহমান ওই ব্যাংকের ক্যাশিয়ার ছিলেন। ৩ হাজার ৫০০ জন গ্রাহক অনলাইন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ব্যাংকটিতে লেনদেন করে আসছিলেন।
গত ২৩ মে সকাল থেকেই ক্যাশিয়ার সুজন রহমান কর্মস্থলে অনুপস্থিত। ২৬ মে গ্রাহকরা টাকা তুলতে এসে দেখেন, তাদের অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলে নুরুল ইসলাম অনলাইন অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখেন, মাতাপুর গ্রামের ফরিদা বেগম, পালনকুড়ি গ্রামের রেহেনা, দিঘিরপাড় এলাকার এমদাদুল হক, ঝাকইড় গ্রামের আজিজার রহমান, বাহাদুরপুর গ্রামের মাহফুজা বেগমসহ ৪০ জনের অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা জমা না করে সেই টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।