গজারিয়া গণহত্যা দিবস আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৩৯ এএম, ৯ মে,বৃহস্পতিবার,২০২৪ | আপডেট: ০১:৫৪ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
আজ ৯ মে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়াবাসীর জন্য এক শোকাবহ দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গজারিয়ার ইসমানিরচর, গোসাইরচরসহ ১০ গ্রামের প্রায় ৩৬০জন নিরীহ নিরপরাধ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। মুন্সিগঞ্জ জেলার মেঘনা ও মেঘনার শাখা নদী ফুলদী তীরের গোসাইরচর, নয়নগর, বালুরচর, বাঁশগাঁও জেলেপাড়া, ফুলদী, নাগের চর, কলসেরকান্দি, দড়িকান্দি ও গজারিয়া গ্রামে এ দিনটিতে কান্নার রোল পড়ে যায়। ১৯৭১ সালের এই দিনে রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি বাহিনীর হামলায় শহীদ হন ৩৬০ জন নিরীহ গ্রামবাসী।
এদিন প্রায় ১১০ জন ছাত্র, মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবীকে গজারিয়া ইউনিয়নের সোনালি মার্কেট এলাকায় পাশে রাস্তার ওপর সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে সকাল ৬টায় একে একে ১১০ জনকে হত্যা করা হয়। ৯ মে নীরব-নিস্তব্ধ রাতের মৌনতা শেষে ভোরের সূর্য ওঠার সময় পাকিস্তানী বাহিনী মর্টার ও কামানের আওয়াজ এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত করে তোলে। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ে প্রায় ৩৬০ জন এলাকাবাসী পাকিস্তান সেনাদের হাতে শহীদ হন। সঙ্গে সঙ্গেই এ হত্যার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন গজারিয়ার আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল শহীদদের আত্মীয়স্বজনের কান্নায়। ১০ থেকে ১২ জন করে এক কবরে মাটি দেওয়া হয় পাকবাহিনীর হাতে শহীদদের। পাকিস্তানি বাহিনী ওই দিন শুধু নিরীহ নিরস্ত্র মানুষদের হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি। চালিয়েছিল গ্রামবাসীদের ওপর নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ অর্থ সম্পদ লুণ্ঠন।
১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যভাগে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার কিছু মুক্তিকামী তরুণ গোসাইচর গ্রামে একটি মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্প গড়ে তোলেন। স্থানীয় রাজাকারদের মাধ্যমে খবর পেয়ে পাক হানাদার বাহিনী ভোরে ঘুমন্ত গ্রামবাসীর ওপর হামলা চালায়। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যুর মুখে পতিত হন গ্রামবাসী। সেদিন কলাপাতা আর পুরনো কাপড় পেঁচিয়ে নিহতদের ১০টি গণকবরে দাফন করা হয়। গজারিয়া উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের এ গ্রামগুলোতে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ চালায় ঘাতকরা। তখন নির্মমতার স্বীকার শহীদদের দাফন করার লোকও পাওয়া যায়নি গ্রামগুলোতে। তাই বাধ্য হয়ে গণকবর দেওয়া হয়।
চারিদিকে এভাবে নির্বিচারে বাঙ্গালিদের হত্যা করার খবর ছড়িয়ে পরার পরদিন ১০ মে গজারিয়ার মুক্তিপাগল জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধারা শক্তিশালী ক্যাম্প গঠন করেন সোনালি মার্কেট এলাকায়। পরে উপজেলার (তৎকালীন থানার) বেশ কয়েকটি জায়গায় শুরু হয় প্রতিরোধ সংগ্রাম আর যুদ্ধ। টানা ৮ মাস যুদ্ধ করে শত্রুমুক্ত হয় গজারিয়া। তাই প্রতিবছর ৯ মে গজারিয়াবাসী এ দিবসটি পালনে নানা কর্মসূচি নেয়।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের যেসব অঞ্চলে গণহত্যা সংঘটিত হয়, এর মধ্যে গজারিয়া গণহত্যা অন্যতম। সেই থেকে গজারিয়াবাসী এই দিনটিকে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করে আসছেন। রাজধানী ঢাকার মাত্র ৩৮ কিলোমিটার অদূরে সেই বধ্যভূমিগুলো আজও যথাযথভাবে সংরক্ষিত হয়নি।