সিরাজগঞ্জের ৬ গুদামে এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৪০ এএম, ৯ জানুয়ারী,সোমবার,২০২৩ | আপডেট: ১০:৫৪ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
সিরাজগঞ্জে সাতটি সরকারি খাদ্যগুদামে এবার তিন হাজার ৯৭৭ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে আজ সোমবার (৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত শুধুমাত্র একটি গুদামে ২০০ কেজি ধান সংগ্রহ হয়েছে। বাকি ছয়টি গুদামে এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি।
খাদ্য বিভাগের তথ্য মতে, বর্তমান বাজার দরের চেয়ে সরকারি দাম প্রতি কেজিতে তিন থেকে চার টাকা কম হওয়ায় কৃষকেরা গুদামে ধান দিচ্ছেন না। এছাড়া ধানের মানের বিষয়ে কড়াকড়ি ও টাকা পাওয়া নিয়ে ব্যাংকে ঘোরাঘুরিসহ বিভিন্ন ঝামেলার কারণে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর আমন মৌসুমে নয় হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন চাল এবং তিন হাজার ৯৭৭ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ১৬৩ দশমিক ৯৬০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হলেও প্রায় দুই মাসে ২০০ কেজির বেশি ধান কিনতে পারেনি খাদ্যগুদাম।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গত বছরের ১৭ নভেম্বর ধান ও চাল সংগ্রহ শুরুর আগে প্রতিটি ইউনিয়নে মাইকিং করা হয়। ধান সংগ্রহ ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। সরকারিভাবে প্রতি কেজি ধানের মূল্য ২৮ এবং চাল ৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
রায়গঞ্জ উপজেলার কৃষক আকবর আলী বলেন, খাদ্যগুদামে দেওয়া ধান একটু কম শুকানো হলে নিতে চায় না। তখন ধান নিয়ে আবার ফেরত আসতে হয়। আবার পরিবহন খরচ, গুদামের শ্রমিকদের চাঁদা, এসব বাড়তি খরচ তো আছেই। আর বাজারের পাইকারদের কাছে ধান বিক্রিতে কোনো ঝামেলা নেই। কিছু কিছু পাইকার ধান মাড়াইয়ের পর বাড়ি থেকে কিনে নিয়ে যান। সার্বিকভাবে বর্তমানে সরকারি মূল্যের চেয়ে বাজারে বিক্রি করলে ভালো দাম পাচ্ছি। গুদামে ধান দিলেও টাকা তুলতে সময় লাগে। সংসারের কাজ ছেড়ে টাকার জন্য অফিসে ঘোরার সময় নেই।
সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল মমিন বলেন, এ আমন মৌসুমের ধান মাড়াইয়ের পর বাড়ি থেকেই বিক্রি করেছি। পাইকার এসে নিয়ে গেছে। দামও ভালো পেয়েছি।
একই ঝামেলার কথা জানিয়ে ব্রম্মগাছা ইউনিয়নের জানকিগাঁতী গ্রামের কৃষক আজিজুল শেখ বলেন, খাদ্যগুদামে ধান দিতে গেলে এক টন ধান গাড়ি থেকে নামার জন্য খাদ্যগুদামের লেবাররাই ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা নেয়। গাড়ি ভাড়া যায় ৫০০ টাকা। তার উপর আরও ঝামেলা অনেক। সেজন্য দেইনি।
জেলা মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকারি মূল্যের চেয়ে খোলা বাজারেই ধান ও চালের মূল্য বেশি। বাজারে পর্যাপ্ত ধানও নেই। বেশি দামে ধান কিনে গুদামে কম দামে চাল সরবরাহ করবো কিভাবে। এ বছর আবার মোট বিলের ওপর ২ শতাংশ উৎস কর ধরা হয়েছে। এজন্য অনেক মিলাররা চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন না।
রায়গঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. নিয়ামুল হক বলেন, কৃষকদের ধান দিতে মাইকিং করা হলেও আমরা এখন পর্যন্ত এক কেজি ধানও সংগ্রহ করতে পারিনি।
কাজীপুর উপজেলার খাদ্য সংরক্ষন ও চলাচল কর্মকর্তা (এলএসডি) পলাশ চন্দ্র সূত্রধর বলেন, প্রায় দুই মাস আগে উদ্বোধনের দিন মাত্র ২০০ কেজি ধান সংগ্রহ করেছি। এরপর আর কোনো ধান আমরা সংগ্রহ করতে পারিনি।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা এস এম সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা চাল কিছুটা সংগ্রহ করতে পারলেও ধান সংগ্রহ করতে পারছি না। কারণ কৃষকরা খোলা বাজারেই ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন। তবে চাল সংগ্রহের বিষয়ে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।