৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি ভবনটি এখন মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০৮ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:১৯ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ফরিদপুর জেলা পরিষদ কার্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বসবাসের জন্য ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়। এ ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ২০০৯ সালে। এরপর ভবনটি অযত্ন-অবহেলায় ১৩ বছর ধরে পড়ে আছে। কোনো প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এক দিনের জন্যও বসবাস করেননি ভবনটিতে। ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত জেলা পরিষদের দায়িত্বপালনকারী কোনো নির্বাহী কর্মকর্তা এক দিনের জন্যও ওই ভবনে বসবাস করেননি। পাশাপাশি জেলা পরিষদের কোনো নজরদারি না থাকায় দ্বিতল ভবনটি এখন নেশাগ্রস্তদের নিরাপদ আবাসনস্থল হয়ে উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে মাদকের পাশাপাশি বিভিন্ন অসামাজিক কাজ হচ্ছে ওই ভবনটিতে।
জেলা পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শহরের টেপাখোলা এলাকায় সোহরাওয়ার্দী সরোবরের পূর্বপাশে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন ওই জায়গায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বসবাসের জন্য ভবনটি নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০৬-২০০৭ অর্থ বছরে। ওই সময় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। এডিবির অর্থায়নে জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবনটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করে মেসার্স আর আর কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরে নির্মাণকাজ শেষ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জেলা পরিষদকে ভবনটি বুঝিয়ে দেয়। ওই সময় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন ইয়াসমিন আফসানা। তবে জেলা পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে ওই ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত ফাইলটি পাওয়া যায়নি। ফলে কোন প্রেক্ষাপটে এবং জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তার বসবাসের জন্য ভিন্ন অবাসন ব্যবস্থা থাকা পরও এ ভবনটি কেন নির্মাণ করা হয়েছে সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ফরিদপুর জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফজল জানান, ওই ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত ফাইলটি খুঁজে পাইনি। অনেক দিন আগের ব্যাপার, ওই সময়ের কর্মকর্তারাও কেউ নেই। তাই এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়া সম্ভব নয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতল ওই ভবনের মূল ফটকে কলাপসিবল গেটের সঙ্গে তালা ঝুলছে। তবে ভবনের চারপাশে জানালার থাইগ্লাস ভাঙা। ভবনের পূর্বপাশে একটি জানালার গ্রিল কাটা। ভেতরের কাঠের দরজা জানালাগুলোও ভাঙা। ফ্যান-লাইটসহ সকল প্রকার ইলেক্টিক্যাল সামগ্রী চুরি হয়ে গেছে।
ওই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভবনের পূর্বপাশের জানালার গ্রিলের কাটা অংশ দিয়ে সন্ধ্যার পর এলাকার নেশাগ্রস্ত তরুণ ও যুবকরা দলে দলে এসে ভেতরে ঢুকে মাদক নেয়, গাঁজা ও ইয়াবা সেবন করে। মাঝে মাঝে তারা নারীদের নিয়ে এসে অসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। ভেতরে মেয়ে থাকলে বাইরে আরেক তরুণ পাহারা দেয়। এভাবে শুরু থেকে পরিত্যক্ত ৩৭ লাখ টাকার ওই ভবনটি নেশাগ্রস্ত ও অসামাজিক কর্মকান্ডের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। ওই ভবনের চত্বরে একটি ছাপড়া ঘর তুলে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে বসবাস করেন ভূমিহীন শাহানা বেগম (৫৪)।
তিনি বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে তিনি ওই এলাকায় আছেন। এক দিনের জন্যও তিনি দেখেননি জেলা পরিষদের কোনো লোককে ওই ভবনের কাছে আসতে। ভবনটি পাহারা দেয়া হলে নেশাগ্রস্তরা ব্যবহার করতে পারত না এবং জানালার কাচ, দরজা জানালা ও ইলেকট্রিক সামগ্রী চুরি করতে পারত না। সরকারি অতগুলো টাকায় নির্মিত ভবনে নির্মাণের এতদিনেও কোনো প্রধান নির্বাহী উঠতে না পারার বিষয়টি সম্পর্কে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান বলেন, এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক বিষয়। আমার আগে যারা ফরিদপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী হয়ে এসেছেন তারা সবাই শহরের বিভিন্ন বাড়িতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভাড়া বাসায় থেকেছেন। সেটা দেখে প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহীর পরিবার নিয়ে বসবাসের জন্য ২০০৯ সালে ওই বাসভবনটি নির্মাণ করা হয়। আগের সব নির্বাহী ওই বাসভবনে কেন উঠেননি বিষয়টি আমার জানা নেই। আর আমি ফরিদপুরে পরিবার নিয়ে থাকি না। একা মানুষ তাই জেলা পরিষদের মালিকানার ডাক বাংলোর একটি কক্ষে থাকি।
তিনি আরও বলেন, আশার কথা হলো শহরের টেপাখোলা মহল্লার সোহরাওয়ার্দী সরোবর এবং তার আশেপাশে জেলা পরিষদের জায়গা নিয়ে শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ওই প্রকল্প শুরু হলে অব্যহৃত ওই ভবনটি কিছু মেরামত করে প্রথমে প্রকল্প কর্মকর্তার আবাসন ও পরবর্তীতে বিশ্রামাগার হিসেবে ব্যবহার করার কথা ভাবা হয়েছে। এজন্য নতুন করে আর বসবাসের সুযোগ নেই বললেই চলে। কারণ ওই ভবনটি এখন অন্য প্রকল্পে চলে গেছে।