ঋণের চাপে উধাও তিন পরিবার, ১৪ দিনেও মেলেনি খোঁজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৪২ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০২:২৬ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
নীলফামারীর সৈয়দপুরের বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ভুজারী পাড়ায় ১৪ দিন ধরে হদিস নেই তিন পরিবারের ১৫ সদস্যের। নিখোঁজ ওই তিন পরিবার প্রধানদের নামে বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ঋণের পরিমাণ প্রায় তিন কোটি টাকা। দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় তারা বাড়ি-ঘর ফেলে উধাও হয়েছেন বলে দাবি স্থানীয়দের। এদিকে যমুনা ব্যাংক লিমিটেড সৈয়দপুর শাখা তাদের বাড়িতে নোটিশ বোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অনুসন্ধান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে থানা-পুলিশ। অপরদিকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বাড়িগুলোতে রাতে গ্রাম পুলিশ দিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের খোর্দ্দ বোতলাগাড়ী গ্রামের মৃত গনেশ চন্দ্র সূত্রধরের তিন ছেলে কমল চন্দ্র সূত্রধর, পরিমল চন্দ্র সূত্রধর ও নির্মল চন্দ্র সূত্রধর। এদের মধ্যে বড় ভাই কমল পেশায় দিনমজুর। অন্য দুই ভাই পরিমল ও নির্মল ব্যবসায়ী। তাদের বাড়ির পাশে পোড়ারহাটে পরিমলের মিষ্টির দোকান এবং নির্মলের ধান-চালের পাইকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারা উভয়ই ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে ব্র্যাক, আশা, গার্ক এনজিওসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে ঋণ নেয়। ঋণের টাকা পরিশোধে ওইসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি তাগাদা দিলে গত মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) রাতের কোনো এক সময় বাড়ি ছেড়ে পরিবার নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। সেই থেকে ওই পরিবারগুলোর হদিস মিলছে না। সরেজমিনে ওই গ্রামে দেখা গেছে, কমল, পরিমল ও নির্মলের বাড়িতে তালা ঝুলছে। এ সময় কথা হয় প্রতিবেশী গীতা রায় সূত্রধরের সঙ্গে।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার দিনে ওই তিন পরিবারের সদস্যরা বাড়িতেই ছিল। কিন্তু পরের দিন বুধবার সকালে বাড়িগুলোর প্রধান ফটকে তালা ঝুলতে দেখা যায়। শুনেছি তাদের অনেক দেনা রয়েছে। তাই হয়তো পাওনাদারের চাপে রাতের কোনো এক সময় তারা বাড়ি ছেড়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছে। ওই গ্রামের যুবক রাব্বী ইসলাম বলেন, প্রতিদিনই বিভিন্ন পাওনাদার তাদের খোঁজে বাড়িতে আসছেন। এদের মধ্যে বিভিন্ন এনজিওর লোকজনই বেশি। এদের বাড়ি-ভিটেমাটি ছাড়া আর কোনো সম্পদ নেই। এছাড়া গ্রামের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই তিন পরিবারের ঋণের পরিমাণ প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা। যমুনা ব্যাংক লিমিটেড সৈয়দপুর শাখায় যোগাযোগ করা হলে সাইনবোর্ড টাঙানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তারা।
অপরদিকে উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের নীলফামারী সদরের কাজিরহাট শাখার ব্যবস্থাপক আইয়ুব আলী বলেন, নির্মল চন্দ্র সূত্রধর ব্যবসার জন্য ৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। যার মাসিক কিস্তি ৩৮ হাজার টাকা। কিস্তি আদায় করতে গিয়ে ঋণ গ্রহীতার আত্মগোপন করার বিষয়টি জানা যায়। পাওনাদার ধান ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন শাহ জানান, তিনি শুভ ট্রেডার্সের মালিক নির্মল চন্দ্রের কাছে ধান বিক্রির ৩০ লাখ টাকা পাবেন। তিনি ছাড়াও পাওনাদারের মধ্যে নুরজামান জানু ৮ লাখ, নুর আমিন ৩ লাখ, সোহেল চৌধুরী ২০ লাখ, আমু চৌধুরী ১০ লাখ, আব্দুল আলিম নামে এক কৃষক ধান বিক্রির সাড়ে ৩ লাখ টাকা পাবেন। পাওনাদারের তালিকায় রয়েছেন প্রায় ২৫-৩০ জন ক্ষুদ্র ধান ব্যবসায়ী।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জুন বলেন, এলাকায় বড় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পাওয়ায় নির্মল চন্দ্র সূত্রধর স্থানীয় ব্র্যাক, আশা, গার্ক, পল্লি দারিদ্র্য বিমোচন, টিএমএসএস নামে নানা এনজিওসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের ঋণ নিয়েছেন। এতে ঋণের বোঝা ভারী হয়ে যায়। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য হিসেবে ঋণের পরিমাণ প্রায় তিন কোটি টাকা। পরবর্তীতে পাওনাদার এবং ওইসব প্রতিষ্ঠান ঋণের কিস্তির টাকা আদায়ে চাপ দিলে গত ২৩ আগস্ট রাতের কোনো এক সময় ওই তিন ভাই পরিবার নিয়ে পালিয়ে যান। পরে ২৪ আগস্ট যমুনা ব্যাংক লিমিটেড সৈয়দপুর শাখা কর্তৃপক্ষ তিন ভাইয়ের বাড়িতে সাইনবোর্ড দিয়ে উক্ত সম্পত্তি ব্যাংকে দায়বদ্ধের বিষয়টি দৃশ্যমান করেছে। তবে যমুনা ব্যাংক ছাড়াও সৈয়দপুর শহরের আরও একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার কথা জানা গেছে।
সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাটি আমাকে অবগত করেছেন। তাদের অনুসন্ধানে পুলিশ কাজ করছে। ওই তিন পরিবারের সদস্যদের সন্ধান এখনো মেলেনি।