২১ কোটি টাকার রাস্তা ১৫ মাসে ভেঙ্গেচুরে একাকার!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৪৮ এএম, ২৩ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ১১:২১ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
প্রায় ২১ কোটি টাকার রাস্তা মাত্র ১৫ মাসে ভেঙ্গে গেছে। রাস্তার অনেক স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ৩ বছর নির্মিত রাস্তার রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের হলেও তারা রাস্তাটি মেরামতে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। ঝিনাইদহের ডাকবাংলা ত্রিমোহনী থেকে কালীগঞ্জ নিমতলা ভায়া বাজারগোপালপুর সড়টির চিত্র দেখে বোঝার উপায় নেই রাস্তাটি মাত্র ১৫ মাস আগে নির্মিত। গান্না বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন সড়কটি নির্মানের সময় একদফা পিচ উঠে যায়। ২৩ কিলোমিটার সড়কের মাত্র ৩ কিলোমিটারের কাজ শেষ হতে না হতেই চাক চাক পিচ-পাথর উঠে গিয়েছিল। সে সময় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হলে একাধিক বিশেষজ্ঞ দল ও দুর্নীতি দমন কমিশনের যশোর অফিসের কর্মকর্তারা এসে বিষয়টি তদন্ত করেন। বন্ধ করে দেন রাস্তার কাজ।
জানা গেছে, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহর থেকে গান্নাবাজার, গোপালপুর হয়ে ডাকবাংলা বাজার পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার সড়ক সংষ্কার কাজ করে ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কাজের জন্য ২০ কোটি ৫৪ লাখ ৩৯১ টাকা চুক্তি হয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। কাজটি খুলনার মোজাহার এন্টারপ্রাইজ (প্রাঃ) লিমিটেড নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পেলেও কাজ করেন ঝিনাইদহের ঠিকাদার মিজানুর রহমান ওরফে মাসুম। ২০১৯ সালে কাজ শুরু করে ২০২০ সালের ২৭ মে শেষ করা হয়। সড়কটি বর্তমানে একটি ব্যস্ততম সড়কে পরিনত হয়েছে। এই সড়ক দিয়ে যশোর থেকে ঝিনাইদহ হয়ে যানবাহনগুলো চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর যাচ্ছে।
সরেজমিনে ওই সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সড়কটির পূর্ব প্রান্ত ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের সংযোগ স্থান কালীগঞ্জের নিমতলা বাসষ্টান্ড থেকে ভাঙ্গতে শুরু করেছে। নিমতলা থেকে আলাইপুর পর্যন্ত একাধিক স্থানে ভেঙ্গে গেছে। গোটা সড়কের ২৩ কিলোমিটারে কমপক্ষে ২০ স্থানে এই ভাঙ্গন রয়েছে। যার মধ্যে নিমতলা, শ্রীরামপুর, আলাইপুর এলাকায় বড় বড় গর্ত তৈরী হয়েছে। এই ভাঙ্গন গত ৬ মাস পূর্বে থেকে শুরু হলেও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
ওই সড়কে চলাচালকারী ইজিবাইক চালক আলম হোসেন জানান, কাজটি নিম্নমানের হওয়ায় অল্পদিনেই রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। ভ্যান চালক মনিরুল ইসলাম জানান, সড়কটি সংষ্কারের পর ব্যাস্ততম সড়কে পরিনত হয়েছে। সড়কটি দ্রুত ভেঙ্গে যাওয়ায় তাদের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।
শ্রীরামপুর গ্রামের ঝুমুর আলী জানান, সড়কটির কাজ শুরু থেকেই নিম্নমানের ছিল। শুরুর সময় একদফা পিচ পাথর উঠে যায়। যা মিডিয়াতে প্রচারের পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়। কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারকে সেই সব স্থান মেরামতের সুযোগ দিয়ে কাজটি শেষ করে। গত ৬ মাস আগে থেকে রাস্তার বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হরেও মেরামত করছে না।
সড়ক বিভাগের একটি সুত্র বলছে, পিএমপি (প্রিয়ডিক মেন্টেনেস প্রোগ্রাম) প্রকল্পের কাজে তিন বছর পর্যন্ত দায়িত্ব থাকে ঠিকাদারের উপর। এই সময়কালে সড়কের কোনো ক্ষতি হলে ভেঙ্গেচুরে গেলে তা মেরামত ঠিকাদারকেই করে দিতে হয়। এখনও দেড় বছর ঠিকাদারকে রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বে রয়েছে। এ বিষয়ে ঠিকাদার মিজানুর রহমান মাসুম জানান, সড়কটির কয়েকটি স্থানে সমস্যা দেখা দিয়েছে। দ্রুত সড়কটি মেরামত করা হবে বলে তিনি জানান। ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এস.ডি) মুকুল জ্যোতি বসু জানান, ঠিকাদরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি দ্রুত মেরামত করে দেবেন বলে আমাদের কথা দিয়েছেন।