সাদা কাগজে স্বাক্ষরে ‘বিয়ের’ পর পাঁচদিন আটকে রেখে শিশুকে ধর্ষণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০২ পিএম, ৩ আগস্ট,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৩১ এএম, ১৪ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
যশোরের অভয়নগরে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে ‘বিয়ের ফাঁদে’ আটকে পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিশুকে পাঁচদিন ধরে ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। ধর্ষণে অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান ও তার সহযোগী আল হেলাল ইসলামী একাডেমির শিক্ষক রুহুল আমিনকে পুলিশ আটক করেছে। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) আটকদের আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। একইদিন ভুক্তভোগী শিশু আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সম্পা বসু আসামিদের জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। আটক হাফিজুর রহমান বুইকারা জগবাবুর মোড়ের মৃত শাহ আলমের ছেলে এবং শিক্ষক রুহুল আমিন মৃত খোরশেদ আহম্মেদের ছেলে।
বাদী মামলায় বলেছেন, তার মেয়ে আল হেলাল ইসলামী একাডেমিতে পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। বাদী বেঙ্গল টেক্সটাইল মিলে কাজ করেন। আসামি হাফিজুর রহমানের স্ত্রী ও ৯ বছরের একটি মেয়ে আছে। বেশ কিছুদিন ধরে হাফিজুর রহমান বাদীর মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাব অস্বীকার করেন বাদী। সে কারণে মাঝেমধ্যে মেয়েটিকে হাফিজুর উত্ত্যক্ত করতেন। ১৩ জুলাই হাফিজুরের খালা রোকেয়া বেগম বাদীর বাড়িতে আসেন এবং হাফিজুরের সঙ্গে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দেন। বরাবরই বাদী বিয়েতে রাজি হননি। এ সময় রোকেয়া বেগম বলেন হাফিজুরের সঙ্গে বিরোধ রাখার দরকার নেই। বিষয়টি মীমাংসার উদ্দেশ্যে বাদী ও তার মেয়েকে হাফিজুরের বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যান। ওই সময় হাফিজুরের বাড়িতে মেয়েটির স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক রুহুল আমিন উপস্থিত ছিলেন। তিনি স্কুলের প্রয়োজনের কথা বলে একটি সাদা কাগজে মেয়ে ও তার মায়ের স্বাক্ষর করান। এরপর বলেন হাফিজুরের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এখন থেকে মেয়েটি হাফিজুরের স্ত্রী। এ সময় মেয়ের মা ও মেয়ে প্রতিবাদ করলে হাফিজুর ও তার সহযোগীরা হত্যার হুমকি দেন। এরপর মেয়েকে রেখে তার মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। ৫ দিন পর ১৬ জুলাই রাত ১১টার দিকে অসুস্থ অবস্থায় মেয়েটিকে বাড়ির সামনে ফেলে রেখে চলে যান আসামিরা। এরপর মেয়েটিকে চিকিৎসা করিয়ে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়। নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। এই ঘটনায় মামলা করা হলে পুলিশ মঙ্গলবার সকালে হাফিজুর রহমান ও শিক্ষক রুহুল আমিনকে আটক করে। এদিনই আসামিদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। পাশাপাশি মেয়েটি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।এ ব্যাপারে আটক হাফিজুর রহমান বিয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, উভয় পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হয়েছে। জোরপূর্বক বিয়ে করা হয়নি। ৫ম শ্রেণির ছাত্রী ও বাল্যবিয়ে করার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো কথা বলেননি। আল হেলাল ইসলামী একাডেমির ধর্মীয় শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, ‘হাফিজুরসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এ কাজ করিয়েছিল। প্রাণ বাঁচানোর স্বার্থে আমি বাধ্য হয়েছিলাম। তবে বিয়ের কোনো রেজিস্ট্রি হয়নি।
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম শামীম হাসান বলেন, সোমবার মধ্যরাতে মামলা দায়েরের পর আসামি দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। শারীরিক পরীক্ষার জন্য স্কুলছাত্রীকে যশোর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।