কুড়িগ্রামে বন্যার অবনতি : আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৩ পিএম, ২০ জুন,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৫৩ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
অতি বৃষ্টি ও নদ-নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। ১৬টি নদ-নদীর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের ২টি পয়েন্টে ও ধরলা নদীর ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার প্রায় ৩০-৫০ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার ৯টি উপজেলার ৫০টি ইউনিয়নের প্রায় সোয়া দু’লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিতদের মাঝে শুকনা খাবার,বিশুদ্ধ পানি সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও বানভাসীদের মধ্যে পানিবাহিত চর্ম, ডায়রিয়া, জ্বর দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যার পানিতে দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
পানিতে ডুবে মৃতরা হলেন, শনিবার দুপুরে উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের যমুনা সরকারপাড়া গ্রামের মাঈদুল ইসলামের কন্যা মাকসুদা জান্নাত (১১) এবং রবিবার দুপুরে রৌমারী উপজেলার যাদুর চর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাঁন্দা পাড়া গ্রামের খলিলুর রহমানের দেড় বছরের ছেলে সন্তান সিয়াম বন্যার পানিতে পরে মারা গেছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে যাতে জেলার সকল দপ্তর ও বিভাগ বন্যা সংক্রান্ত তথ্য আপডেট করছেন। সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর বন্যার প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করছেন। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী প্রতিদিনই বন্যার বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক চিত্র ফুটে উঠছে।
শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯টি ৪৯টি ইউনিয়নের ২৮৪টি গ্রামের নিম্নাঞ্চলের ২৭হাজার ১৯৭টি পরিবারের ১লাখ ৮হাজার ৭৮৮জন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলার রাজিবপুর-৭টি, রৌমারী-৪৪টি, চিলমারী-২৬টি, উলিপুর-২০টি, কুড়িগ্রাম সদর-১১টি, নাগেশ্বরী এবং রাজারহাটে ১টি করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং জেলার ২৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭টি মাদ্রাসা এবং ১টি কলেজে সাময়িক পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে ৩৬১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবগুলো উপজেলা ও ইউনিয়নগুলো থেকে তথ্য উঠে না আসায় পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ইউপি সদস্য, সংবাদকর্মী ও বিভিন্ন সূত্রে সংবাদ পাওয়া গেছে।
কুড়িগ্রাম খামার বাড়ীর উপপরিচালক মো. আব্দুর রশীদ জানান, এখন পর্যন্ত বন্যায় ১০ হাজার ৮৯৪ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত রয়েছে। এরমধ্যে ৬ হাজার ৮০৬ হেক্টর জমির পাট ক্ষেত রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে কর্মকর্তাগণ পরামর্শ দেয়াসহ তথ্য সংগ্রহ করছেন।
এদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, জেলাতে ১৫৭দশমিক ৯৯হেক্টর পুকুর-দীঘির ২০৮ দশমিক ৬১ মেট্রিক টন মাছের পোনা ভেসে গেছে। এতে ৭৪২টি পুকুরের ৭০৫জন মৎস্য চাষীর ২০৮ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। যার ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৬২ হাজার টাকা।
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের ৬৭১টি নলকূপ এবং ১৮৩টি ল্যাট্রিন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে ৩১টি নলকূপ উচুকরণ, ১০৯০টি নলকূপ পরিদর্শন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ২৫১০০টি ও ২টি নলকূপ মেরামত করা হয়েছে।
প্রাণী সম্পদ বিভাগের তথ্যে ২৪হাজার ২২৩টি গরু, মহিষ-৩১৮টি, ছাগল-১১হাজার ১০টি, ভেড়া-৩হাজার ৬২৮টি, মুরগি-৫৭, হাজার১৮৭টি, হাঁস-১৫হাজার ৯১৭টি বন্যা কবলিত হয়েছে। তবে গবাদি পশু ৭২০টি, হাঁসমুরগি ৬০৬০টিকে টিকা প্রদান এবং গবাদি পশু ৩৩৯টি ও হাঁসমুরগি ২৬৬১টিকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা.মঞ্জুর-এ-মুর্শেদ জানান, বন্যার্তদের সহয়োগিতায় জেলায় মেডিকেল অফিসারের নেতৃত্বে ৮৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও ৯ উপজেলায় ৯টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগে একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। বন্যা পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ৯০,০০০টি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ৯০,০০০টি ও আর এস, ৪,৫০০ব্যাগ স্যালাইন এবং প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ১,০০,০০০টি মজুদ রয়েছে। মেডিকেল টিমের সদস্যরা বন্যা কবলিত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন, কলেরা স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে। বন্যার পানিতে দু জন মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যার প্রস্তুতি হিসেবে জেলা প্রশাসক দপ্তরে একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জেলার সকল দপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতিদিনের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য প্রদান করতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০ লক্ষ টাকা এবং ৪০৭ মেট্রিকটন চাল মজুদ রয়েছে। এছাড়াও আরো ৫০০ মেট্রিকটন চাল ও ২০লক্ষ টাকার চাহিদা দেয়া হয়েছে।