যমুনায় বাড়ছে পানি, বিলীন হচ্ছে বসতভিটা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৩৭ পিএম, ১৯ জুন,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৩৮ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
গত কয়েক দিন ধরে যমুনা নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, চৌহালী ও এনায়েতপুর থানার বেশ কয়েকটি গ্রামের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার ভোর থেকে শুরু করে রবিবার সকাল পর্যন্ত যমুনা নদীতে তীব্র ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে মুহূর্তের মধ্যে শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান। এলাকাবাসী জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার অভ্যন্তরীণ নদনদীসহ নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার ভোর থেকে হঠাৎ করে চৌহালী উপজেলাধীন খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণে ব্রাহ্মণগ্রাম, আরকান্দি, কৈজুরী এলাকায় যমুনা নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে ভাঙন শুরু হয়। এতে শতাধিক বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে বহু বসতবাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে স্থানীয় আব্দুর মতিন বলেন, ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ করা হোক। এখনই ভাঙন বন্ধ না হলে বিলীন হয়ে যাবে বিশাল এলাকা। জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ জানান, ভাঙন এলাকা রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী বাঁধের কাজ দ্রুত করা হোক। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ভাঙন এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আতঙ্কের কিছু নেই। এদিকে শনিবার পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার সিরাজগঞ্জের নদী ভাঙন ও বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন শেষে বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, সারা দেশে সৃষ্ট আগাম বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রস্তুত আছে।
তিনি বলেন, এ বছর অতি বৃষ্টিপাতে আগাম বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। সিলেট সহ অনেকগুলো জেলা শহরে পানি ঢুকে গেছে। মানুষ চরম কষ্টে আছে। এছাড়া যমুনা ও পদ্মাতেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেই সাথে নদী ভাঙন চলছে। সব কিছু মিলে এবার মনে হচ্ছে একটা শক্ত বন্যা মোকাবিলা করতে হবে। এজন্য সরকার পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। কবির বিন আনোয়ার আরও বলেন, এনায়েতপুরে যমুনার ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে সাড়ে ৬শ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজও চলমান রয়েছে। তবে নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্রাহ্মণগ্রামসহ দুই এক জায়গায় কিছুটা ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে কাজ চলছে। এসময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম, বগুড়া পওর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক শাহজাহান সিরাজ ও সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সিরাজগঞ্জ যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি কাজিপুর পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে সিরাজগঞ্জ শহরের হার্ডপয়েন্ট ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে রবিবার সকালে বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে জেলার অভ্যন্তরীণ করতোয়া, ফুলজোড়, ইছামতি, বড়ালসহ অন্যান্য নদী ও খাল-বিলের পানি বেড়েই চলেছে। ইতোমধ্যে যমুনার বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চলের নিম্নভূমি প্লাবিত হতে শুরু করেছে। তলিয়ে যাচ্ছে চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ ও উল্লাপাড়া উপজেলার নিম্নাঞ্চলও। এছাড়া পানি বৃদ্ধির কারণে জেলা সদরের বিয়ারাখাট এলাকায় পানির স্রোতে রাস্তা ভেঙে গেছে। অন্যদিকে শাহজাদপুর উপজেলায় রাউতারা রিং বাধ ভেঙ্গে গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, যমুনায় পানি দ্রুত বাড়ছে। ২২ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করলেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। স্বাভাবিক প্লাবন হলেও বন্যা বা আশংকাজনক অবস্থা সৃষ্টির সম্ভাবনা কম বলে জানান তিনি।