মোড়লগঞ্জে পানগুছির অব্যাহত ভাঙ্গনে হাজারও পরিবার দিশেহারা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩৫ পিএম, ১৫ জুন,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:৩৩ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে পানগুছি নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনের প্রভাবে দিশেহারা এ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ। ৮০ দশক থেকে নদীর তীরবর্তী দু’পাড়ে ৯টি ইউনিয়নে ২০টি গ্রামের হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি, বসতবাড়ি, কাঁচাপাকা রাস্তাঘাট, নদীগর্ভে বিলীন হয়ে প্রতিনিয়ত শত শত পরিবার হচ্ছেন অভিবাসন। রয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, জেলা শহর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের কোল ঘেষে বয়ে যাওয়া পানগুছি নদীর তীরে অবস্থিত মোরেলগঞ্জ উপজেলা। ব্রিটিশ শাসন আমলে রবার্ট মোরেল সাহেবের নামের প্রতিষ্ঠিত মোরেলগঞ্জ শহর। এ বন্দরটি নদীর তীরবর্তী হওয়ায় এক সময়ে আমদানি রপ্তানি উল্লেখযোগ্য একটি বৃহৎ ব্যবসায়ীক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিলো। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে ৭ই নভেম্বর মোড়েলগঞ্জ উপজেলা সরকারিভাবে রুপান্তিত হয়। ৪৩৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে ১৬টি ইউনিয়নসহ পৌরসভা নিয়ে এ উপজেলাটি। জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ৪ লাখ। এ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের কৃষি পেশার উপর নির্ভরশীল। ৮০ দশকের ছোট আকারে পানগুছি নদীটি এখন প্রতিনিয়ত অব্যাহত ভাঙ্গনের কারনে বৃহত আকার ধারন করেছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে খাউলিয়া ইউনিয়নের খাউলিয়া, সন্ন্যাসী, মধ্য বরিশাল, পশুরবুনিয়া, মোড়েলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গাবতলা, কাঠালতলা, বারইখালী ইউনিয়নের বারইখালী, কাশ্মির, তুলাতলা, উত্তর বারইখালী, উত্তর সুতালড়ী, বহরবুনিয়ার ইউনিয়নের বহরবুনিয়া, ফুলহাতা, ঘষিয়াখালী।
এছাড়াও তেলিগাতি, পঞ্চকরণ, পুটিখালী, বলইবুনিয়া ও হোগলাবুনিয়ার নদীর দু’পাড়ের তীরবর্তী ৯টি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি অর্ধশত কাচাপাকা রাস্তা বসতবাড়ি নর্দীগভে বিলীন হয়েছে। প্রতি বছরই নতুন নতুন কাচা রাস্তা নির্মাণ করা হলেও ভাঙ্গনের কারনে তা কাজে আসছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ এলাকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা কাটে প্রকৃতিক দুর্যোগ বন্যা, জ্বলোচ্ছাস, অতি বৃষ্টি, অতিরিক্ত খরা, নদী ভাঙ্গন, লবণাক্ততার সাথে সংগ্রাম করে বসবাস করতে হচ্ছে। নদীর তীরবর্তী গ্রামের শত শত বাসিন্দারা তাদের সর্বস্ব হারিয়ে চলে যাচ্ছে বিকল্প কর্মসংস্থানের তাগিদে বিভিন্ন উপজেলা ও শহরে। আবার অনেকেই অন্যের জমিতে আশ্রয়ে রয়েছে। বসবাস করছে ভেরিবাঁধের পাশে ও ঝুঁকিপূর্ন স্থানে। প্রতিবছর এই প্রকৃতিক বিপর্যয় হরন করে নিচ্ছে জমির উর্বরতা। লবণাক্ততার বৃদ্ধির ফলে ৪৪ হাজার ৪শ’ ৮০ হেক্টর জমির মধ্যে আবাদ হচ্ছে মাত্র ২৮ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনতা কমে গিয়ে অনাবাদি পতিত জমি সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে এ উপজেলায় বেসরকারি সংস্থা সুশিলন, পানিই জীবন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২১ সালে পহেলা অক্টোবর থেকে ৬টি ইউনিয়নে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠির আর্থ সামাজিক মান উন্নয়নে কাজ করছেন।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামতে উপজেলা কৃষি অফিসার আকাশ বৈরাগী বলেন, এ উপকূলীয় মানুষের ফসলী জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন করতে হলে লবণাক্ততা কাটিয়ে এক ফসলী জমিগুলোকে সরজান পদ্ধতিতে চাষাবাদ জোয়ার ভাটা পানিবাহিত স্থানে স্থায়ী ভেরিবাধ পলিপড়ে ভরাট হয়ে যাওয়া খাল গুলোকে পুনর্ঃখনন, শীত মৌসুমে লবণাক্ত খাল গুলোতে বাঁধ দিলে রবি সর্ষ্য ফসলসহ একাধিক ফসল ফলানো সম্ভব।
এ সর্ম্পকে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম জানান, এ অঞ্চলে সুপেয় পানি ব্যবহারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা অনুযায়ী লবণাক্ততার মাত্রা দূর করার লক্ষে বৃষ্টির পানি সংরক্ষনে পানি সরবারাহ প্রকল্প ইতোমধ্যে একনেকে পাশ হয়েছে। উপকূলীয় ১০টি জেলায় ২২২ টি ইউনিয়নে ১ লাখ আর ডব্লিউ এইচ পানির ট্যাংকি সরবারাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ উপজেলার ফসলী জমি বৃদ্ধি করার লক্ষে ৩ ফসলী জমি লজিক প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৪টি ইউনিয়নের ১ হাজার হেক্টর জমি এর আওতায় নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে রবি সর্ষ্য ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করছেন।