শেরপুরে গারো পাহাড়ে চলছে হাতি মানুষের যুদ্ধ, ক্ষতি হচ্ছে ফসল-গাছপালার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৪৩ পিএম, ২ জুন,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৫৫ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে দীর্ঘদিন চলছে হাতি মানুষের যুদ্ধ। কিন্তু পাহাড়ে মানুষের বসতবাড়ী গড়ে ওঠায় দেখা দিচ্ছে হাতির খাদ্য সংকট। ফলে হাতি নেমে আসছে লোকালয়ে। সামনে যা পাচ্ছে তাই তারা খাচ্ছে। ক্ষতি করছে ধান, ফলজ ও বনজ বৃক্ষ। ভয় আর আতঙ্কে দিন পাড় করছে মানুষ। কেউ কেউ পাহাড়ে আকাশমনি ও ইউক্লিপটাস বৃক্ষ রোপনকে দায়ী করছেন।
দেশের উত্তর সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুর। ভারত সীমান্তঘেষা এ জেলার তিনটি উপজেলা শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী সীমান্তজুড়ে রয়েছে গারো পাহাড়। এখানে ভারত থেকে নেমে আসা বন্য হাতির বিচরণ প্রতিনিয়তই রয়েছে। তবে বর্তমানে হাতির একাধিক দল স্থায়ীভাবেই গারো পাহাড়ে অবস্থান করছে। কিন্তু মানুষের ঘরবাড়ী পাহাড়ী এলাকায় দিনদিন বাড়তে থাকায় সংকুচিত হচ্ছে বন। দেখা দিয়েছে হাতির খাদ্য সংকট। ফলে খাদ্যের সন্ধানে হাতি নেমে আসছে লোকালয়ে। ক্ষতি করছে ফসল, বাড়ীঘর ও গাছ পালা। যখনই হাতি জঙ্গল থেকে বেড় হচ্ছে তখনই মানুষ তাদেরকে উত্যক্ত করছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে হাতি। আর হাতি তাড়াতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। এজন্য এখন ভয় আর আতঙ্কে দিন চলছে সীমান্তবাসীর।
পাহাড়ে ফলজ ও পরিবেশ সহায়ক বনজ বৃক্ষ এবং হাতির খাদ্য হিসেবে চিহ্নিত গাছপালা রোপন না করে ক্ষতিকর আকাশমনি ও ইউক্লিপটাস বৃক্ষ রোপন করাকে। এতে একদিকে হাতি পাচ্ছেনা খাদ্য, আর খাদ্যের জন্য লোকালয়ে আসায় তাদের প্রানেরও ঝুঁকি বাড়ছে। হাতি যখনই লোকালয়ে আসছে তখনই মানুষ তাদেরকে তাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। এতে হাতিও ক্ষিপ্ত হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে ফসল, ঘরবাড়ী, নষ্ট হচ্ছে বনের গাছ পালা। চলছে হাতি মানুষের দ্বন্ধ। এতে ক্ষিপ্ত হাতির আক্রমনে মারা পড়ছে মানুষ। মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথে সমান তালে মারা পড়ছে হাতি। এ পর্যন্ত অন্তত শতাধিক মানুষের মৃত্যু আর সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়েছে হাতি তাড়াতে গিয়ে। অর্ধশতাধিক হাতিও মারা পড়েছে। নানা কারণে হাতি এখন বিপন্ন প্রাণী হিসেবে দেখা দিয়েছে। এসব হাতি ও মানুষের দ্বন্ধ নিরসন চায় সীমান্তবাসী। আর এটা পাহাড়ে খাদ্য সঙ্কটকে দায়ী করছে স্থানীয়রা।
রাংটিয়া গ্রামের আলম হোসেন বলেন, পাহাড়ে হাতি আইলে হামরা ঘুমাবারও পাই না। কেমনে ঘুমাই নিজের জীবনেরও তো দাম আছে। যদি ঘুমের মধ্যে হাতি আইলে বাচুম কেমনে। হাতি আইলে কামেও যাবার পাই না। কারণ রাত কইরা হাতি পাহাড়া দিবার যাইয়া তো আর ঘুমও য়ই না। তাই দিনের বেলায় ঘুমাই। পাহাড়া না দিলেও তো সব শেষ হইয়া যাবো।
ছোট গজনীর কাশেম মিয়া বলেন, আমি লিচু ও কাঠাঁলের বাগান করছি এক একর জমিত। কিন্তু কিছুুদিন পরে পাকতো লিচু গুইলা। পাহাড়ে হাতি অনেকদিন থেকেই আছে। আর এহন তো পাহাড় থাইক্কা হাতি আমগর গ্রামে আইয়া পরছে। আর হাতির ভয়ে সব লিচু পাইরা বেইচ্চা দিতাছি।
তাওয়াকুচার তোতা মিয়া বলেন, এইবার হাতি আমগর ক্ষতি কম করবার পাবো। কারণ পাহাড়ে যা ধান লাগাইছিলাম এইবার তো আগেই কাইটা ফেলাইাছ। এহন ক্ষতি করলে ফলের বাগানের ক্ষতি হবো কিছু। কিন্ত হাতি তো আইতে আইতে আমাগর গ্রামে আইয়া পরছে এইডাই ডর। আমগর যেন জীবনের ক্ষতি না করে আবার।
নওকুচি গ্রামের ফজেন মারাক বলেন, আমগর পাহাড়ে এইবার হাতি গুইলা মেলাদিন থাইক্কা নামছে। কমপক্ষে ৩০-৪০ টা হাতি নামছে। আমরা খুব ভয়ে আছি। কহন যে আমগর উপর আক্রমণ করে। পাহাড়ে এহন আসলে খাবার অভাব তাই আমগর বাড়িঘরে হাতি নাইমা আহে। পাহাড়ে আগে মেলা পশুপাখির খাবারের গাছ আছিল আহন নাইক্কা। পশুপাখির খাবারের গাছ থাকলে আসলে আমাদের উপর আক্রমণ কম হতো।
শেরপুরের রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মুহাম্মদ মকরুল ইসলাম আকন্দ জানান, বেশ কিছুদিন থেকে পাহাড়ে হাতির বিচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। হাতি আসাই রাংটিয়া রেঞ্জের তাওয়াকুচা ও গজনী বিটে লোকালয়ে যেসকল লোকজন ধানের আবাদ করেছে তাদের এবার তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি পরিলক্ষিত হয়নি। যেহেতু এই এলাকা গুলো একসময়ের হাতির রাস্তা ও বিচরণ ভুমি। সেহেতু সেই রাস্তা ব্যবহার করার সময় হাতি লোকালয়ে ঢুকে পরছে। আমরা দিনরাত সকলকে নিয়ে চেষ্ঠা করতেছি হাতি যেন লোকালয়ে না আসে। তবে মানুষ এবং হাতিকে রক্ষা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমদের। হাতি ও মানুষের দ্বন্দ নিরসনের জন্য একটি অভয়ারণ্য করার উদ্যোগ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের কাজ চলছে বলে আরও জানালেন এ বন কর্মকর্তারা।
তবে সচেতন মহল চায় হাতি প্রকৃতিগতভাবেই আমাদের সম্পদ। এটাকে রক্ষা করা, আবার মানুষের জানমালের ক্ষতি থেকে রক্ষার কার্যকর উদ্যোগ।