ঘুষ লেনদেনের অডিও ফাঁস, সুন্দরগঞ্জের সেই ওসিকে বদলি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৩৮ পিএম, ৩১ মে,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:৫২ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
আসামির স্বজনের সঙ্গে ঘুষ লেনদেনের ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানার সেই ওসি মো. তৌহিদুজ্জামানকে বরিশাল বিভাগে বদলি করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে তাঁকে বদলি করা হলেও আজ মঙ্গলবার স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা বিষয়টি জানতে পারেন।
বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ওই ওসিকে বরিশাল রেঞ্জে বদলি করা হয়। তবে ঘুষ লেনদেনের ফোনালাপের অডিও ফাঁসের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে কি না, সে বিষয়ে পুলিশ সুপার কোনো মন্তব্য করেননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তদন্তে যা পাওয়া গেছে, সেগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
গত ১৫ মার্চ ‘গাইবান্ধার ওসির ঘুষ নেওয়ার অডিও ফাঁস’ শিরোনামে পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই দিন রাতে সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি তৌহিদুজ্জামানকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করে গাইবান্ধা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। পরদিন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) আবদুল আউয়ালকে আহ্বায়ক করে এক সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। পরে তদন্ত প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়।
গত বছরের ১০ এপ্রিল গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত উপদপ্তর সম্পাদক মাসুদ রানার (৪২) বাসা থেকে ব্যবসায়ী হাসান আলীর (৪৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ নিয়ে নিহতের স্ত্রী বীথি বেগম বাদী হয়ে সদর থানায় মাসুদ রানা, রুমেল হক, খলিলুর রহমানসহ তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। নিহত হাসানের সঙ্গে তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে রানার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নেন শহরের স্টেশন রোডের জুতা ব্যবসায়ী হাসান আলী। এই টাকা সুদসহ ১৯ লাখে দাঁড়ায়। সুদের টাকা দিতে না পারায় গত বছরের ৬ মার্চ লালমনিরহাট থেকে হাসানকে মোটরসাইকেলে তুলে আনেন মাসুদ। তিনি হাসানকে নিজ বাসায় এক মাসের বেশি আটকে রেখেছিলেন।
প্রথমে মামলার তদন্ত করেন গাইবান্ধা সদর থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অভিযান) সেরাজুল ইসলাম। পরে গাইবান্ধা ডিবি পুলিশের তৎকালীন ওসি, বর্তমানে সুন্দরগঞ্জের কঞ্চিবাড়ি তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক মানস রঞ্জন দাস দায়িত্ব পান। সবশেষ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন সদ্য বদলি হওয়া ওসি মো. তৌহিদুজ্জামান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৌহিদুজ্জামানের সঙ্গে আসামির দুই স্বজনের ঘুষ লেনদেনের ফোনালাপের অডিও ফাঁস হয়। অভিযোগপত্র থেকে দুই আসামির নাম বাদ দেওয়া ও আইনের ধারা কমিয়ে দিতে টাকা লেনদেনের কথাবার্তা হয়। কিন্তু এক আসামির নাম বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দিলে ঘুষের টাকা ফেরত দিতে ফোনালাপ হয়।
এদিকে আন্দোলনের মুখে সদর থানার তৎকালীন ওসি মাহফুজার রহমান, পরিদর্শক (তদন্ত) মজিবর রহমান ও উপপরিদর্শক মোশারফ হোসেনকে অন্যত্র বদলি করা হয়। ঘটনার দিনই মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মাসুদসহ তিন আসামি বর্তমানে জামিনে আছেন।
ঘটনার ৯ মাস ৬ দিন পর মাসুদ, খলিলুরসহ দুজনের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৌহিদুজ্জামান আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ১৮ জানুয়ারি তিনি সুন্দরগঞ্জের ওসি হিসেবে বদলি হন। গাইবান্ধা কোর্ট পুলিশ ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে অভিযোগপত্রটি সংশোধনের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে ফেরত পাঠায়। গত ৬ মার্চ মাসুদ রানাসহ তিন আসামিকেই অভিযুক্ত করে আদালতে সংশোধিত অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।