ডা: মন্দিরার আত্মহত্যা, খুমেক এর আবাসিক কর্মকর্তা লাপাত্তা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৪৫ পিএম, ১৫ মে,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:৩১ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
শিক্ষানবিশ চিকিৎসক মন্দিরা মজুমদারের আত্মহত্যার পর থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপতালের আবাসিক কর্মকর্তা সুহাস রঞ্জন হালদার লাপাত্তা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে ২ মে থেকে ১১ মে পর্যন্ত ছুটি নিয়েছেন তিনি। এরপর থেকে অনুপস্থিত রয়েছেন। তবে গতকাল শনিবারও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাম্পাসে ডা: সুহাস রঞ্জনকে দেখা গেছে বলে একাধিক ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।
মন্দিরা মজুমদার আত্মহত্যা প্ররোচণার মামলায় সুহাস রঞ্জনের বড় বোন সিথি মনি হালদারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গত শুক্রবার (১৩ মে) গভীর রাতে তাকে মোংলা উপজেলার চটেরহাট এলাকার দুর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে আদালতে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক রবিউল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, এপ্রিল মাসের শেষের দিকে আবাসিক কর্মকর্তা সুহাস রঞ্জনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যা প্ররোচণার অভিযোগ ওঠে। ২৯ এপ্রিল থেকে অনুপস্থিত। ২ মে তার নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে ১১ মে পর্যন্ত ছুটির আবেদন করেন। খুমেক হাসপাতালের অপর আবাসিক কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী তার এ ছুটির আবেদন গ্রহণ করেন। ১১ মের পর থেকে তিনি অনুপস্থিত রয়েছেন। তার খোঁজ বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হচ্ছে। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় বর্ণিত তথ্য অনুযায়ী, গেল বছরের ডিসেম্বরে খুলনা গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মন্দিরা এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বাসায় থেকে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এর আগে ওই চিকিৎসকের পিতা অসুস্থ হয়ে খুমেক হাসপাতালে ভর্তি হলে আবাসিক কর্মকর্তার সাথে পরিচয় হয। এরপর প্রেমের প্রস্তাব দিলে মন্দিরা সাড়া দেন। আবাসিক কর্মকর্তার সাথে সম্পর্ক গভীর থেকে গভীর হয়। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে দৈহিক সম্পর্ক হয়। যেখান থেকে ফিরে আসা আর সম্ভব হয়নি মন্দিরার।
মৃতের পিতা প্রদীপ মজুমদার বলেন, সুহাসের বড় বোনের বাসায় গিয়ে তারা শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতো। অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে অন্তসত্ত্বা হয়ে পড়লে বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানান মন্দিরা। সবকিছু জেনে পিতা খুমেক হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা সুহাসের কাছে যান। সুহাস মৃতের পিতার সাথে দুর্ব্যবহার করেন। এক সময়ে ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে মন্দিরাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করা হয়। পরে সম্মানের ভয়ে মন্দিরা আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন। এপ্রিল মাসের ২৮ তারিখ সন্ধ্যায় বাসায় কেউ না থাকায় নিজ ঘরে ফ্যানের হুকের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। মেয়ের আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে পিতা সুহাস রঞ্জন হালদার ও বড় বোন সিথি মনি হালদারের নামে মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই সুকান্ত দাস বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকে সুহাস ও তার বোন সিথি মনি হালদার আত্মগোপনে চলে যায়। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে সুহাসের বড় বোন সিথির অবস্থান নিশ্চিত করা হয়।
তবে গুঞ্জন রয়েছে একজন বড় কর্মকর্তার মাধ্যমে নিহত ডা: মন্দিরার পরিবারের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে মামলাটি নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে। যদিও এখবর হাসপাতালের দায়িত্বশীল কেউ স্বীকার করেন নি।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৩ টার দিকে মোংলা উপজেলার চটেরহাট নামক স্থানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে প্রেরণ করলে আদালত শুনানির দিন ধার্য করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মমতাজুল হক বলেন, রাতে সুহাসের বোন সিথিকে মোংলা উপজেলার চটেরহাট এলাকার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু তার কাছ থেকে কোন তথ্য বের করা সম্ভব হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছেন আদালতে।