ভিজিএফের চাল পাচ্ছেন সচ্ছলরা, কুড়িয়ে ব্যাগ ভরেন অসহায় বৃদ্ধা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২৯ পিএম, ২৯ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৩০ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের ভিজিএফ কার্ডের চাল নিয়ে গেলেন সচ্ছল ব্যক্তিরা। কেউ মোটরসাইকেলে করে, আবার কেউ পিঠে করে বস্তা ভর্তি করে নিয়ে যান সেই চাল। কিন্তু সারাদিন রোজা রেখে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ভাগ্যে সরকারি চাল জুটেনি ওই ইউনিয়নের হতদরিদ্র বৃদ্ধা মহেসিনা বেগম ও ফাতেমার। অবশেষে মেঝেতে পরে থাকা চাল কুড়িয়ে ব্যাগে ভরে বাড়িতে ফেরেন ওই দুই বৃদ্ধা।
শুধু আকচা ইউনিয়নে নয়। জেলা সদরের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে এমন চিত্র দেখা যায়। এতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে জেলা সদরের বেশ কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত বুধবার নামমাত্র হতদরিদ্রদের মাঝে ভিজিএফ কার্ডের চাল বিতরণ করা হয়েছে। আর বেশিরভাগ চাল স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলীয় কিছু নেতাকর্মীর মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইউনিয়নের একাধিক ব্যক্তি। তারা বলেন, সারাদিন রোদে পুড়ে অসহায় দরিদ্ররা যদি চাল না পায়, তাহলে ভিজিএফের চাল পেলেন কারা?
আকচার ইউনিয়নের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মণ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজের পছন্দ অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনা করে আসছেন। এতে সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন অসহায় অসচ্ছল হতদরিদ্ররা।
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মণ। তিনি বলেন, ‘শুধু সচ্ছল নয়, অসচ্ছলদেরও চাল দেয়া হয়েছে।’
একই চিত্র সুখানপুখুরি ইউনিয়নে দেখা গেছে। সেখানে চাল বিতরণের সময় প্রত্যেক কার্ডধারীদের আধা কেজি থেকে এক কেজি পর্যন্ত ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন অধিকাংশ সুবিধাভোগী। তবে বিষয়টি বরাবরের মতো অস্বীকার করেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান।
অপরদিকে ঢোলারহাট ইউনিয়নে ভিজিএফ কার্ডের বরাদ্দ না পেয়ে নিজ অর্থায়নে হতদরিদ্রদের মাঝে চাল বিতরণ করেছেন ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হোসেন আলী।
তিনি বলেন, ভিজিএফ চাল বিতরণের সভায় আমি বৃষ্টির কারণে উপস্থিত থাকতে পারিনি। আমার ওয়ার্ডে ৬১৯ জনের মধ্যে ২২টি ভিজিএফের কার্ড বরাদ্দ দিলে আমি বলি ২২টি কার্ড কাকে দেব? কিছু বাড়ায় দেন। একথা বলার পর ইউপি চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায় আমাকে বলেন, ‘তোমাকে চাল বিতরণ করার দরকার নাই। আমার লোক গিয়ে বিতরণ করবে।’
এ অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান অখিল চন্দ্র রায় জানান, হোসেন মেম্বার একজন বিএনপিপন্থী লোক। সব সময় মিথ্যা কথা বলে। হোসেনের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেব। ওই ওয়ার্ডের মাসুদ, রশিদুল ও হাসিবুলের মাধ্যমে ভিজিএফের চাল বিতরণ করেছি।
অন্যদিকে জগন্নাথপুর ইউনিয়নে চাল বিতরণের সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গ্রাম্য চিকিৎসক দেবেশ চন্দ্র শর্মা দুই বস্তা চাল নিয়ে যান। পরে ইউপি চেয়ারম্যান ওই চাল উদ্ধার করে পরিষদের নিয়ে আসেন।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন, সরকারি ভিজিএফ চাল বিতরণে অনিয়ম হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।