বছর ধরে পা বাঁধা শিকলে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০৬ পিএম, ১৬ এপ্রিল,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:১৩ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
দীর্ঘ একবছর এ ভাবে পা শিকলে বাঁধা থাকায়, সেখানে ঘা হয়ে গিয়েছে। আজ শনিবার ঠাকুরগাঁও সদরের রাজাগাঁও ইউনিয়নের পাটিয়াডাঙ্গী বাজার থেকে খরিবাড়ী যাওয়ার রাস্তার পাশে গাছের সাথে পায়ে শিকল লাগানো পায়ে হেঁটে বেড়াতে দেখা যায় বছর পয়ত্রিশের আবু কালামকে। পরিবার ও প্রতিবেশীদের দাবি, মানসিক ভারসাম্যের সমস্যা রয়েছে তাঁর। একাধিকবার হারিয়ে যাওয়ার কারণেই এই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।
উত্তর বঠিনা গ্রামের বাসিন্দা আবু কালামের পিতা আবদুল গণী জানান, ছোট থেকে সুস্থ-স্বাভাবিক ছিলেন কালাম। রিকশা চালাতেন মাঝেমাঝে মিস্ত্রির কাজও করতেন। বছর চারেক আগে তাঁর মানসিক সমস্যা শুরু হয়, দাবি আবদুল গণীর। তাঁর কথায়, স্ত্রী ও তিন সন্তান সহ ঢাকা থাকতো কালাম। অসুস্থ তাই বাড়ি চলে এসেছে। সেখান থেকে ফেরার পরেই ছেলের ব্যবহারে পরিবর্তন দেখি। চিকিৎসা করিয়েছিলাম। কিন্তু টাকার অভাবে সেই চিকিৎসা চালানো যায়নি। পায়ে শিকল দেওয়া নিয়ে তাঁর দাবি, বছর খানেকের মধ্যেই ছেলেকে তিনবার হারিয়েছেন। মানুষ পাগল মনে করে মারধর করে। বাধ্য হয়েই পায়ে শিকল বাঁধতে হয়েছে। তিনি বলেন, ছেলেকে এ ভাবে দেখতে আমাদেরও ভাল লাগেনা। কিন্তু আমাদের সামর্থ্য নেই ভাল জায়গায় চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তোলার।
কালামের মা কুলসুম আক্তার জানান, ত্রিশ বছর আগে দশ বছর বয়সী মেয়ে কুলসুমকে সেতাবগঞ্জ রেল স্টেশনে হারিয়েছেন। এখন ছেলেকে হারালে আমি আর বাঁচবো না। কিছুদিন পরপরই ছেলে কালাম হারিয়ে যায়। তাই আটকে রেখেছি। ছেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কখনও হাঁটু মুড়ে বসে থাকতে দেখা যায় কালামকে। কখনও আবার রাস্তার পাশেই ঘুমিয়ে পড়েন। কেউ কিছু খেতে দিলে খান। আবু কালামের ছোট ভাই জুয়েল রানা জানান, কালাম বেশির ভাগ দিনই বাড়ির বাইরে কাটান। বেশ কিছু দিন তাঁর দেখা না মিললে বাড়ির লোকজন খোঁজ শুরু করেন। তিনি বলেন, ছেলের চিকিৎসায় সাহায্য করলে হয়তো আবার ও সুস্থ হয়ে যাবে, আর বেঁধে রাখতে হবে না।
প্রতিবেশী এনায়েত হোসেন বলেন, পা বাঁধা অবস্থায় কালামকে ঘুরে বেড়াতে দেখে কষ্ট হয়। কী ভাবে এই পরিস্থিতিতে এত দিন রয়েছে, অবাক হই! আমরা ওঁকে উত্তেজিত হয়ে উঠতে দেখিনি কখনও। মাঝেমাঝেই বাজারে বসে থেকে নীরবে কাঁদতে দেখেছি। খুবই কষ্টদায়ক।
এ ব্যাপারে রাজাগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি জানি। মাঝে-মধ্যে সহযোগিতাও করি। কিন্তু আমার মনে হয় ওর ভালো চিকিৎসা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মোঃ সামসুজ্জামান বলেন, ছেলেটি শেকলে বাঁধা অবস্থায় রয়েছে, এটা খুবই দুঃখজনক। আমি খোঁজ নিয়ে অবশ্যই তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো।