মীরসরাইয়ে আওয়ামী দলীয় ইউপি চেয়ারম্যান বন্ধ করলেন বৈশাখী মেলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০১ পিএম, ১৬ এপ্রিল,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৩৭ এএম, ১১ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
উত্তর চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের আয়োজনে একটি বৈশাখী মেলা (গড়িয়া মেলা) বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয় ২নং হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি সোনা মিয়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সকালে ২নং হিঙ্গুলী ইউনিয়নের পূর্ব হিঙ্গুলী গ্রামে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ মেলাটি একক সিদ্ধান্ত ক্রমে বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি।
মেলা বন্ধের জন্য চেয়ারম্যান নিরাপত্তার অজুহাত দেখালে ও পুলিশ বলেছে, মেলাস্থলে নিরাপত্তার ঝুঁকি আছে এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। তা ছাড়া মেলার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশের একটি দল ও প্রস্তুত রাখা হয়েছিলো। পূর্ব কোনো ঘোষণা ছাড়া-ই মেলাটি বন্ধ করে দেয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। হঠাৎ মেলাটি বন্ধ করে দেয়ায এতে মালপত্র নিয়ে দুর-দুরান্ত থেকে আসা বিভিন্ন ব্যবসায়িরা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
মেলার আয়োজনের সাথে যুক্ত থাকা লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় খীল হিঙ্গুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনেক বছর ধরে পয়লা বৈশাখে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের চড়কপূজাকে কেন্দ্র করে একটি বৈশাখী মেলার আয়োজন হয়ে আসছিলো। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের আয়োজনে এক দিনের এ মেলায় উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। কিন্তু, ‘করোনা’র কারণে গত ২বছর ওই স্থানে মেলা বন্ধ থাকার পর এ বছর আবার মেলা উদ্যাপনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু, বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যালয় মাঠে দোকানিরা যখন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছিলো তখন হঠাৎ হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামী দলীয় উক্ত চেয়ারম্যান সোনা মিয়া এসে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে মেলা বসাতে নিষেধ করেন।
চেয়ারম্যানের বাধা পেয়ে মেলায় পণ্য বিক্রি করতে আসা প্রায় ১০০ দোকানি মালপত্র নিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন। মেলা আয়োজনের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের একজন সঞ্জয় মজুমদার স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, চড়কপূজাকে কেন্দ্র করে কোনো কমিটি বা কারও অনুমতি ছাড়াই এ বৈশাখী মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিলো বেশ কয়েকবছর যাবত। কিন্তু, এবার অনুমতি না নেয়ার কথা বলে মেলার দিন সকালে হঠাৎ চেয়ারম্যান মেলাস্থলে উপস্থিত হয়ে মেলা বন্ধের নির্দেশে দেন।
তারা জানান, যুগ যুগ ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসা এ মেলা বন্ধ করে দেয়ায় এলাকার সাধারণ মানুষ চরম ভাবে হতাশ হয়েছেন এবং অনেকে ক্ষোভ ও প্রকাশ করেছেন। উপজেলার ১নং করেরহাট ইউনিয়ন থেকে মেলায় খেলনা সামগ্রী বিক্রি করতে আসা মোঃ আবদুল হালিম বলেন, ‘আমি বেশ কয়েক বছর ধরে এই মেলায় এসে খেলনা সামগ্রী বিক্রি করে আসছি। লাভের আশায় এবার ও এসেছিলাম। কিন্তু, পূবর্ ঘোষণা ছাড়া-ই মেলা বন্ধ করে দেয়ায় আমার বড় ক্ষতি হয়েছে।’
ঐতিহ্যবাহী মেলাটি বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানতে চাইলে হিঙ্গুলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোনা মিয়া বলেন, ‘পূর্ব হিঙ্গুলী এলাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মেলাটির কোনো পরিচালনা কমিটি নেই। মেলায় আইন শৃঙ্খলার অবনতি হলে বা কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে স্থানীয় চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে। তা ছাড়া মেলার নামে সেখানে মাদকের আড্ডা সহ বিভিন্ন অপকর্ম হয়। পূর্ব প্রস্ততি ছাড়া মেলা আয়োজন করলে যে কোনো বড় দুর্ঘটনা ও ঘটতে পারে। তাই নিরাপত্তার কথা ভেবে মেলা পরিচালনার জন্য তাদের একটি কমিটি গঠন করতে বলেছি তাদেরকে।’
তিনি আরও বলেন, মেলা একেবারে বন্ধ করার কথা বলিনি। যে সকল ব্যবসায়ী নিরাপত্তাশঙ্কা করেছেন তারা চলে গেছেন বাকীরা এখনো রয়েছেন।’
স্থানীয় জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নূর হোসেন মামুন এ বিষয়ে বলেন, ‘পূর্ব হিঙ্গুলী এলাকায় মেলা আয়োজনে নিরাপত্তার ঝুঁকি আছে, এমন কিছু কেউ জানাননি আমাকে। বরং ওই মেলার আয়োজন হলে সেখানে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আমাদের পুলিশ সদস্যের একটি দলকে প্রস্তুত ও রাখা হয়েছিলো।
তিনি আরো বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেছেন মেলাটি এবার হবে না। মেলায় নিরাপত্তা দেয়ার প্রস্তুতি ছিলো আমাদের।’
এ বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মিনহাজুর রহমান বলেন, নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের বৈশাখী মেলা বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টি তার জানা নেই। মেলা করা বা বন্ধ করার বিষয়ে কেউ অভিযোগ ও দেয়নি তার দপ্তরে।