কুড়িগ্রামে অসময়ে তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৯ পিএম, ১০ এপ্রিল,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৪৪ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
কুড়িগ্রামে অসময়ে তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা হয়েছে ভাঙন কবলিতরা। দুয়ারে এসেছে নদী। যে কোন মুহুর্তে বাপ-দাদার স্মৃতিমাখা বসতবাড়ী বিলিন হয়ে যেতে পারে। এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডে দেন দরবার করেও প্রতিকার মিলছে না।
জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম মন্ডলপাড়া গ্রামের মৃত: শরাফত মাস্টারের ছেলে মোস্তাক আহমেদ (৫৬) হতাশা ব্যক্ত করে জানান, ‘গতবার নদী বাড়ীভিটা সউগ খায়া গেইল। হালের গরু বিক্রি করি নতুন বাড়ি করনু। এবারো ভাঙবের নাগছে। কামলা দিয়া খাং। এই বাড়ী গেইলে করিম কি। মোর পকেটোত বিষ খাওয়ার মত টেকা নাই।’ গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। এই তিন দিনে ভেঙেছে ৬টি বাড়ী। হুমকীতে রয়েছে আরো ৭০/৮০টি বাড়ী।
ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াসাম এলাকার সাবেক মেম্বার শহিদুল ইসলাম জানান, বর্ষা আসার আগেই হঠাৎ করে ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ী, গাছপালাসহ আধাপাকা বোরো ধান ক্ষেত। ভাঙনের হুমকীতে রয়েছে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ৮টি মসজিদ ও একটি মাদ্রাসাসহ শত শত বিধা আবাদী জমিন। বর্তমানে এই ইউনিয়নে গতিয়াসাম, রামহরি, কালিরহাট ও মেদনীপুর গ্রামে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে সহায়তা চেয়েও পাওয়া যায় নি। তারা বলছে এই মুহুর্তে তাদের কাছে কোন বাজেট নাই।
কুড়িগ্রাম জেলার ৩টি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে আগ্রাসি তিস্তা নদী। প্রায় ৪০ কিলোমিটার ব্যাপী এই নদীটির ভাঙন কবলিত বাম তীরে মাত্র ৫কিলোমিটার জায়গা পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাকী ৩৫ কিলোমিটার উন্মুক্ত নদীর অনেক জায়গায় চলছে এখন ভাঙন। গত তিন দিনে বৃষ্টির ফলে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিঘার পর বিঘা বোরো ধান, ফলদ ও কাঠের গাছসহ ভেঙে যাচ্ছে বিল্ডিং বাড়ী। এখন হুমকীতে রয়েছে প্রায় ৭০ থেকে ৮০টি পরিবার।
গত কয়েক বছর ধরে তিস্তার ভয়াবহ আগ্রাসনে রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা, মন্দির, ডাংরারহাট, রামহরি, পাড়ামৌলা ও গাবুর হালান গ্রামের একাংশ নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আরো গ্রামের পর গ্রাম। বসতভিটা ও জমি হারিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে বুক ফাঁটা কান্নায় ভারী হয়ে আসছে এখানকার আকাশ-বাতাস। মেগা প্রকল্পের নানান আশ^াসের পর নদী ভাঙনের হুমকীতে থাকা মানুষ এখন জরুরী ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
রাজারহাট উপজেলার ঘরিয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কুদ্দুছ প্রামাণিক জানান, আমার ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ড চরম হুমকীতে রয়েছে। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে গিয়েছি। তাদের কোন বাজেট নেই বলে তারা জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ আমাদের ভাঙন কবলিত পরিবারগুলোকে বাঁচান। নাহলে আমরা বিশাল ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, হঠাৎ বৃষ্টির ফলে তিস্তায় অরক্ষিত এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। সমীক্ষা প্রকল্প অনুমোদন করা হলেও এখনো প্রকল্প চুড়ান্ত করা হয়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা। জরুরী ভিত্তিতে কাজ করার সুযোগ আছে জানালেও পাউবো থেকে ভাঙন প্রতিরোধে নতুন ভাঙন কবলিত এলাকায় এখনো কোন ব্যবস্থা গ্রহন শুরু হয়নি।