চৌগাছায় তুচ্ছ ঘটনায় দা দিয়ে কুপিয়ে দু’ভাইকে হত্যা, আহত-১ গ্রেফতার-৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৪০ পিএম, ৮ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৩৩ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
যশোরের চৌগাছায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে দুই ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। মারাত্মক আহত হয়েছে এক ভাইয়ের ছেলে। পুলিশ নিহতদের মরাদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর আড়াইশয্যা হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের টেংগুরপুর গ্রামের খাপাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। হত্যার সাথে জড়িত চারজনকে আটক করেছে পুলিশ, উদ্ধার করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত দা।
নিহতের স্বজন ও থানা সূত্র থেকে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধায় টেংগুরপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মুজিদ খানের ছেলে আয়ুব হোসেন খান (৫৮) একই মহল্লার আফজেল হোসেন খানের ছেলে বিপুল হোসেনের বাড়িতে যায়। বিপুলকে জোন নিয়ে মাঠে কাজ করানোর জন্যই সেখানে আয়ুব হোসেন যায় বলে জানা গেছে। এসময় জোন দেয়া নিয়ে জমি মালিক আয়ুবের সাথে বিপুলের বাকবিতান্ড হয়। একপর্যায়ে বিপুল হোসেন আয়ুব আলীকে চরম অপমান করেন। তিনি বাড়িতে এসে তারাবি নামাজ আদায়ে মসজিদে চলে যায়। নামাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে বিষয়টি তার ছোট ভাই ইউনুচ আলী খান (৫৫) ও ছেলে আশাদুল ইসলাম খান রনিকে (২৭) বলেন। ওই রাতেই আনুমানিক ১০ টার দিকে দুই ভাই আয়ুব, ইউনুচ খান ও আয়ুবের ছেলে রনি বিপুলদের বাড়িতে যায় এবং কি কারনে আয়ুব খানকে অপমান করা হয়েছে তা জানতে চাই। এ সময় বিপুল চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই ঘর থেকে মাংস কাটা চাপট, গাছি দা ও লাঠি নিয়ে বিপুল হোসেন, বিল্লাল হোসেন ও মুকুল হোসেন হামলা চালায়। ধারালো দায়ের এলোপাতাড়ি কোপে ঘটনাস্থলের মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আয়ুব ও ইউনুচ আলী খা। মাথা ও হাতে কোপ লাগার পরও দ্রুত ছুটে বাড়িতে আসতে সক্ষম হয় ছেলে রনি। রনির ডাক চিৎকারে অন্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যায় এবং রক্তাক্ত জখম অবস্থায় আয়ুব, ইউনুচ ও রনিকে উদ্ধার করে চৌগাছা হাসপাতালে নিলে আয়ুর ও ইউনুচকে চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন। মারাত্মক আহত অবস্থায় যশোরে রেফার করা হয় রনিকে। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়া হযেছে।
নিহতদের চাচাত ভাই আব্দুর রউফ খান ও জুল ফিক্কার আলী ভুট্টো খান জানায়, আয়ুব আলী খান ও ইউনুচ আলী খান অত্যান্ত নিরিহ প্রকৃতির মানুষ। মাঠে জমি জয়গা দেখা শুনার পাশাপাশি কাঠের ব্যবসা করনে। মাঠের সকল জমিতেই জোনের কাজ করে হামলাকারী বিপুল, বিল্লাল ও মুকুল হোসেন। এছাড়া কাঠের গোলাতেও তারা কাজ করে। বৃহস্পতিবার ইফতারের পর বড় ভাই জোনের জন্য বিপুলের কাছে গেলে বিপুল তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে তার ভাইকে অপমান করে এমনকি শারিরিক ভাবে লঞ্চিত করে। তারাবি নামাজ শেষে বিষয়টি জানার জন্য ওই বাড়িতে গেলে তারা সকলে মিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে দুই ভাইকে হত্যা করে। ভাইপো রনি প্রানে বেঁচে গেলেও সে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।
নিহত সহোদরের বেঁচে থাকা একমাত্র ছোট ভাই শেরআলী (৫০) বিলাপ করতে করতে বলেন, যারা ভাইদের হত্যা করেছে তারা আমাদের জায়গা জমিতে কাজ করে বেঁচে আছে। যখন যে সমস্যা নিয়ে ছুটে আসে আমাদের কাছে, আমরা সাধ্যমত ওদের সেবা করার চেষ্টা করি। হত্যাকান্ডের ৩ ঘন্টা আগেও ভাইপো আয়ুব হোসেনের ছেলে আশাদুল ইসলাম খান রনি ইফতারের জন্য বিপুল হোসেনকে ১ হাজার টাকা দিলো। বলাচলে যারা আমাদের জায়গা জমিতে কাজ করে বেঁচে আছে তারাই আমার দুই ভাইকে খুন করলো, কোন ভাবেই মেনে নেয়া যাচ্ছে না।