না’গঞ্জের নিতাইগঞ্জে ৩ মাস যাবত ঘাট বন্ধ, বিপাকে ব্যবসায়িরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫০ পিএম, ২ এপ্রিল,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৪৮ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজের ধীরগতির কারণে বিপাকে পড়েছে দেশের অন্যতম পাইকারী ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত নিতাইগঞ্জের ব্যবসায়িরা। ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য নিতাইগঞ্জের দু’টি ঘাটের জেটি সরিয়ে নেওয়ায় গত ৩ মাসের বেশি সময় ধরে ঘাট দু’টি বন্ধ রয়েছে। ফলে নিতাইগঞ্জের পাইকারী ব্যবসা কেন্দ্রে নদী পথে পণ্য আসা-যাওয়া বন্ধ রয়েছে।
এতে করে বিপাকে পড়েছেন এখানকার ব্যবসায়িরা। নিতাইগঞ্জের ঘাট দু’টি দিয়ে পণ্য উঠা-নামা বন্ধ থাকায় পাইকারী এ বাজারে আসা পণ্যগুলো খালাস হচ্ছে ১০ কিলোমিটার দূরে সিদ্ধিরগঞ্জের ল্যান্ডিং স্টেশন দিয়ে। সেখান থেকে ট্রাকে করে পণ্য নিতাইগঞ্জে আনতে হচ্ছে। একই ভাবে দেশের অন্য কোথাও নদীপথে পণ্য পাঠাতে হলে নিতাইগঞ্জ থেকে ট্রাকে করে সিদ্ধিরগঞ্জের ল্যান্ডিং স্টেশন পাঠাতে হয়। সেখান থেকে নৌযানে করে পণ্য গন্তব্যস্থলে যায়। এতে করে খরচ বেড়ে যাচ্ছে এবং এর প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে।
ব্যবসায়িদের তথ্যমতে, বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারী বাজার হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ। নিতাইগঞ্জ পাইকারী বাজার থেকে দেশের ৪০টি জেলায় চাল-ডাল, আটা-ময়দা, লবণ, চিনি, তেল, ভূষামালসহ নানা ভোগ্যপণ্য সরবরাহ করা হয়। নিতাইগঞ্জের এই পাইকারী বাজার থেকে দৈনিক প্রায় ২০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। গত দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে এমনিতেই ব্যবসায়িরা লোকসানের মুখে আছে। এরমধ্যে গত ৩ মাসের বেশি সময় ধরে নিতাইগঞ্জের দু’টি পণ্য খালাসের জেটি শীতলক্ষ্যার তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত পাইকারী ব্যবসা কেন্দ্র নিতাইগঞ্জে মালামাল লোড-আনলোডের জন্য বোট খাল (টানবাজার-কদমতলী লেবার হ্যান্ডলিং পয়েন্ট) ও মাছুয়া বাজার ঘাট ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমানে দু’টি ঘাটই ওয়াকওয়ে নির্মাণকাজের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে বর্তমানে দেশে নিত্যপণ্যের দাম প্রতিদিনই উঠা-নামা করছে। নিত্যপণ্যের দাম উঠা-নামার কারণে প্রতিদিনই লোকসানের হিসাব কষতে হচ্ছে পাইকারী এ বাজারের ব্যবসায়িদের।
নিতাইগঞ্জ চাল আড়ৎদার মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত হোসেন বলেন, এখন নতুন চালের আমদানি শুরু হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন মোকাম থেকে চাল নৌ পথে আনলে খরচটা কম পরে। আর আনা-নেওয়ার খরচ কম হলে খুচরা বাজারেও চাউলের দাম একটু কম থাকে। কিন্তু বর্তমানে নৌপথে মালামাল আনলেও নিতাইগঞ্জ বোটখাল ঘাট দিয়ে মালামাল উঠানো বা নামানো যাচ্ছে না। গত ৩ মাস যাবৎ নিতাইগঞ্জ খাল ঘাট থেকে শুরু করে শীতলক্ষ্যা কদমতলী ঘাট পর্যন্ত নদীর পশ্চিম পাড়ে বিআইডব্লিউটিএর ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ চলছে। এ কাজের জন্য আমাদের কোন মালামাল নৌপথে লোড-আনলোড বন্ধ রয়েছে। অন্য ঘাট দিয়ে মালামাল লোড-আনলোড করলে শ্রমিকদের অতিরিক্ত মজুরি দিতে হয়। এতে পণ্য মূল্য বাড়ছে।
চাল আড়ৎদার মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম লিটন বলেন, আমি চালের ব্যবসা করি। তার পাশাপাশি যে দু’টি ঘাট দিযে মালামাল লোড আনলোড হয় সেদুটি ঘাটের ইজারার সঙ্গেও যুক্ত আছি। পণ্য খালাসের ঘাট বন্ধ থাকায় একদিকে পাইকাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি ঘাটের ইজারাদাররাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আগামী ৬ মাসেও এই ওয়াকওয়ের কাজ শেষ হবে বলে মনে হয় না। এজন্য ঘাটের ইজারাদার বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানের কাছে দ্রুত ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ শেষ করার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। পাশাপাশি ইজারাদাররা যেন তাদের লোকসান পুষিয়ে নিতে পারে সে ব্যবস্থা করারও আবেদন জানিয়েছেন তারা।
ভূষি মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আল-আমিন বলেন, বোট খাল ঘাট ও মাছুয়া বাজার ঘাট দিয়ে প্রতিদিন আমাদের কয়েক হাজার ভূষির বস্তা নৌযানে লোড-আনলোড হয়। আর আমাদের ভূষির ঘরগুলো এই সব ঘাটের সামনে অবস্থিত। কিন্তু বর্তমানে ঘাটের এই সমস্যার কারণে আমাদের মালামাল লোড-আনলোড করা যাচ্ছে না। আমরা বস্তা প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা লাভ করি। কিন্তু বর্তমানে ঘাটের সমস্যার কারণে লাভের বেশির ভাগ অংশ লেবারকে দিয়ে অন্য ঘাট দিয়ে মালামাল লোড-আনলোড করানো হচ্ছে।
নিতাইগঞ্জের বোটখাল ও মাছুয়া বাজার ঘাটের ইজারাদার তমিজ উদ্দিন বলেন, আমরা গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত ঘাট দু’টি ৪ কোটি টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছি। আমাদের এই ঘাট গুলো দিয়ে মূলত গম লোডÑআনলোড হয়। চট্রগ্রাম থেকে বড় বড় জাহাজের মাধ্যমে গম নিতাইগঞ্জে আনা হয়। বর্তমানে নদীর পাড়ে বিআইডব্লিউটি’র ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজের জন্য জাহাজ থেকে মালামাল লোড-আনলোড করা যাচ্ছে না। ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য প্রতিটি ঘাটের জেটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। সে কারণে জাহাজ গুলো কাঁচপুর দিয়ে মালামাল লোড আনলোড করছে। বর্তমানে আমাদের ঘাটে কোন জাহাজ নেই, জাহাজ না থাকার কারণে আমাদের এ বছর কম বেশি ২ কোটি টাকা লোকসান হতে পারে। আমরা চাই দ্রুত ওয়াকওয়ের কাজ শেষ করে ঘাট দু’টি চালু করে দেওয়া হোক।
ওয়াকওয়ে নির্মাণকাজের প্রকল্প পরিচালক শাহনেওয়াজ কবীর বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জের প্রিমিয়ার সিমেন্ট কারখানা পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করছি। এরমধ্যে কোন কাজের প্যাকেজ এক কিলোমিটার আবার কোন প্যাকেজ তারও বেশি রয়েছে। নিতাইগঞ্জ থেকে প্রিমিয়ার সিমেন্ট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার অংশের কাজ চলছে। নিতাইগঞ্জ অংশের কাজ চলমান রয়েছে। আমরা নিতাইগঞ্জের ব্যবসায়িদের সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজটি করছি। এজন্য তাদের কিছু সমস্যা হবে। এ কাজটি শুস্ক মৌসুমে করতে হয়। কিন্তু এখন নদীর পানি বেড়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিও হচ্ছে। ফলে আগামী শুস্ক মৌসুমের আগে এ কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। আমরা চেষ্টা করছি নিতাইগঞ্জের ব্যবসায়িদের স্বার্থ রক্ষা করেই যাতে এ কাজটি শেষ করা যায়। তবে তিনি দাবি করেন ঘাট দু’টিতে ওয়াকওয়ের কাজ চললেও ঘাট বন্ধ নেই।