নারায়ণগঞ্জ সিটির বাবুরাইল খাল : ৩৫ মাসের প্রকল্প ৪৫ মাসেও শেষ হয়নি, ভোগান্তি চরমে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০৩ পিএম, ২৮ মার্চ,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১২:২৫ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইল খাল পুনরুদ্ধারের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ৩৫ মাসের মধ্যে। কিন্তু প্রায় ৪৫ মাস পেরুলেও শেষ হয়নি প্রকল্পের কার্যক্রম। এই প্রকল্পের একাংশের কাজ চলছে নারায়ণঞ্জের মন্ডলপাড়া ব্রিজ সংলগ্ন ব্যস্ততম বঙ্গবন্ধু সড়কে। সড়ক কেটে চলছে খালের পুনরুদ্ধার কার্যক্রম।
এদিকে কাজের ধীর গতির ফলে প্রতিদিন চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। সরু সড়ক ও সার্বক্ষনিক যানযটে অসহনীয় হয়ে উঠেছে তাদের জীবনযাত্রা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সূত্রমতে, বাবুরাইল খাল পুনরুদ্ধারসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শোভাবর্ধন ও আলোকিতকরণ শীর্ষক প্রকল্পের ৯৫ শতাংশ কার্যক্রম শেষ। ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই শুরু হয় পুরো প্রকল্পের কার্যক্রম। প্রকল্পের সমাপ্তি সময় ২০২১ সালের ৩০ মে।
নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০২০ সালের বছরের জুন মাসে বঙ্গবন্ধু সড়ক কেটে প্রকল্পের এ অংশের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রায় ২ বছর পেরুলেও এখনো এ অংশের কাজ শেষ হয়নি।
বাবুরাইল খাল পুনরুদ্ধার প্রকল্প সংক্রান্ত মামলা, অবৈধ দখল উচ্ছেদে বাধা সহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রকল্পের কাজ সম্পাদনের গতি হ্রাস পেয়েছে বলে জানান নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শোভাবর্ধনের জন্য খালের পুনঃখননের প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও কাজের ধীর গতির ফলে প্রকল্পটি মানুষের দূভোর্গের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। শিল্প নগরী খ্যাত নারায়ণগঞ্জের বানিজ্যিক এলাকা টানবাজার ও নিতাইগঞ্জের নিকটবর্তী ব্যস্ততম বঙ্গবন্ধু সড়কটি সরু হওয়ায় মানুষের দূভোর্গ বেড়েছে দ্বিগুণ।
প্রতিদিন শত শত পন্যবাহী যান এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। এদিকে নারায়ণগঞ্জ শহর ও মুন্সিগঞ্জের সংযোগপথ হওয়ায় দুই জেলার হাজার হাজার মানুষ এই সড়কে চলাচল করে। কিন্তু সরু সড়কে মাত্রাতিরিক্ত যানযটে বাড়ছে নগরবাসীর ভোগান্তি।
আজ সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, নগর ভবন থেকে মন্ডলপাড়া ফায়ার স্টেশন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সড়কজুড়ে শতাধিক ট্রাকে পণ্যের লোড-আনলোড হচ্ছে। এসব যানবাহন বঙ্গবন্ধু সড়ক হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পণ্য পৌছে দেয়। সরু পথে অধিক যানবাহনের চলাচলে ব্যাপক যানযটের সম্মুখীন হচ্ছে যাত্রীরা।
বিশেষ করে হাসপাতাল ও ফায়ারসার্ভিসের গাড়ি যানজটে পড়ে মাত্রাতিরিক্তি ভোগান্তিতে রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
ভুক্তভোগী পাইকপাড়ার বাসিন্ধা আব্দুল মানিক বলেছেন, খালের কাজ শুরু হওয়ার পর সড়ক সরু হয়ে পড়লেও প্রথম দিকে দুর্ভোগের এমন বাড়াবাড়ি ছিল না। সড়কের এক পাশের কাজ করে চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
যতটুকু করছে তা আগের চেয়েও সরু। এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে দিনের বেশির ভাগ সময় যানজট লেগে থাকে। এজন্য এই এলাকায় সিএনজি, অটোরিকশা কিংবা রিকশা সব বাহনে চালকেররা অধিক ভাড়া রাখে।
নিতাইগঞ্জের ব্যবসায়ী মো. রফিক বলেন, প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করি। ব্যবসায়িক পণ্যের কাভার্ড ভ্যান ও অটোরিকশায় পুরো রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের পণ্যের আনা নেওয়াতেও সমস্যা হয়। যানজট খুলতে অনেক সময় লাগে।
বহু বছর যাবৎ এখানে ব্যবসা করতাছি। এই রাস্তায় কখনো যানজট হতো না। খালের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে রাস্তা কাটছে। রাস্তা ছোট হয়ে গেছে। এই কারণে যানজট হয়। এই কাজ শুরু হইছে অনেক সময়। বছরের পর বছর পার হইয়া যাইতাছে এই সমস্যায় আছি।
দ্রুত খালের কাজ শেষ করে রাস্তার সংস্কার করলে আমরা ব্যবসায়ীরা অনেক উপকৃত হবো। কিন্তু যদি সামনের বর্ষার আগে কাজ শেষ না হয় তাহলে পুনরায় কাজ বৃষ্টির কারণে বন্ধ হতে পারে।
দূষণমুক্ত ও পরিবেশ রক্ষায় নারায়ণগঞ্জবাসীর দাবির পরিপেক্ষীতে ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি নাসিক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বাবুরাইল খাল পুনরুদ্ধার প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। শুরু হয় শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদীর তিন কিলোমিটার বাবুরাইল সংযোগ খালের কার্যক্রম।
জানা যায়, বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। খালের পাশে ২.০৫ কিলোমিটার সড়ক সহ ৫.৫০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন, ১০টি আরসিসি গার্ডার ও স্লাব ব্রীজ, ৫টি মেটাল ফুট ব্রীজ, ৩টি আরসিসি ভিউইং ডেক, ১টি আরসিসি ঘাটলা ও ১টি পাবলিক টয়লেট।
একইসাথে খালটি অধিক বৃষ্টির পানি ধারণের জন্য সংরক্ষিত জলাধার ও অগ্নিকান্ড নির্বাপনের জন্য পানি সরবরাহের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এই খালে ময়লা পানি কিংবা ড্রেনের পানি ফেলা হবে না। কেবলই বৃষ্টি ও ভূগর্ভের পানিতে পরিপূর্ণ থাকবে খালটি।
খালের দুই পাশে থাকবে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে। ওয়াকওয়েতে থাকবে সবুজের সমারোহ। রাতের সৌন্দর্যের বৃদ্ধিতে ওয়াকওয়েতে লাগানো হবে এলইডি লাইট।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষনা অনুষ্ঠানে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সড়কটিতে মানুষের দূর্ভোগের বিষয়টি জানানো হলে তিনি প্রকৌশলী বিভাগ ও ঠিকাদারকে বাবুরাইল খাল পুনঃখনন, সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ, আলোকিতকরণ ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পাদনের নির্দেশ দেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী বিভাগের ওয়ার্ক অ্যাসিসটেন্ট শাহরিয়ার বঙ্গবন্ধু সড়কে এই প্রকল্পের কার্যক্রম পরিদর্শনকালে জানান, মন্ডলপাড়া ব্রিজ সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু সড়কে খালের কাজ সম্পন্ন হতে আরো দুইমাস লাগবে বলে জানান।
যদিও প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী এ এস এম মশিউর রহমান বাবুরাইল খাল প্রকল্পের ধীরগতি প্রসঙ্গে বলেন, বাবুরাইল খালের কাজ প্রায় ৯৫ শতাংশ সম্পূর্ন হয়ে গেছে। কাশিপুরের দিকে একটি মামলার কারণে খালের কাজ করতে কিছুটা দেরি হয়েছে।
তবে মন্ডলপাড়া ব্রিজের এখানে প্রকল্পের যতটুকু কাজ রয়েছে, সেটা আর কয়েকদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ন হবে।