টানা ছুটিতেও আশানুরূপ পর্যটক নেই কক্সবাজারে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ১৭ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০২:৩৪ এএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস, শবেবরাত এবং সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে তিনদিনের ছুটি চলছে। এরপরও বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারে পর্যটকের উপচেপড়া ভিড় চোখে পড়েনি। পর্যটন মৌসুমের শেষদিকে এমন টানা ছুটির পরেও আশানুরূপ পর্যটক আসেননি বলে দাবি করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরেও হোটেল-মোটেলের কক্ষ ফাঁকা থাকার তথ্য জানালেন কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ।
তিনি বলেন, প্রকৃতিতে চৈত্রের দাবদাহ শুরু হয়েছে। রাতে হালকা ঠান্ডা পড়লেও দিনের বেলা উষ্ণ। এমন দিনে পর্যটক আসেন কম। তবুও মৌসুমের শেষ টানা তিনদিনের ছুটি পেয়ে বিপুল পরিমাণ পর্যটক আসবে বলে আশা করেছিলাম আমরা। তবে, তেমনটি হয়নি। অনেক হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজে আগাম কিছু বুকিং হলেও অনেক কক্ষ এখনো খালি।
তিনি আরও বলেন, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ৬০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। বাকি কক্ষ এখনো ফাঁকা। শুক্রবার পর্যন্ত সেগুলো ভরে কি না সেই প্রতীক্ষা রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে সৈকত নগরী কক্সবাজারে পর্যটক আগমন এমনিতেই কম ছিল। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখেই রয়েছেন। পর্যটকের পাদচারণা বাড়লে ক্ষতি কিছুটা কাটানো যেত বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হোয়াইট অর্কিড হোটেলের মহাব্যবস্থাপক রিয়াদ ইফতেখার বলেন, কক্সবাজারে পর্যটকদের রাতযাপনে প্রায় সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস রয়েছে। টানা ছুটি থাকলে আগে কমপক্ষে ৮০ শতাংশ রুম বুকিং হতো। কিন্তু এবার আমার হোটেলেই হয়েছে ৫৫ শতাংশ। কিছু তারকা হোটেলে ৮০-৯০ শতাংশ আর গেস্ট হাউজ-কটেজে ৭০-৮০ শতাংশ বুকিং হয়েছে যা গড় ধরলে ৬০ শতাংশ হয়।
তিনি আরও বলেন, শবেবরাতে অধিকাংশ মানুষ বাড়িতেই ইবাদত করেন। এ কারণে হয়তো পর্যটক উপস্থিতি কম। তবুও প্রায় হোটেল-গেস্ট হাউজ ও কটেজে পর্যটক উপস্থিতি হতাশাগ্রস্ত পর্যটন ব্যবসায়ীদের কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে। এদিকে, দিগন্ত ট্যুরিজমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) ইয়ার মুহাম্মদ বলেন, মোটামুটি পর্যটক আগমন ঘটেছে। বৃহস্পতি থেকে শনিবার পর্যন্ত সেন্টমার্টিনগামী জাহাজগুলোর টিকিট আগাম বিক্রি হয়ে আছে। যারা আগে যোগাযোগ করেননি তারা স্ট্যান্ডবাই টিকিটও পাচ্ছেন না। জাহাজের টিকিটের মতো পর্যটন জোনের সাড়ে ৪০০ আবাসন প্রতিষ্ঠানও আগাম বুকিং হয়েছে। আগাম ভাড়া হয়েছে প্রাইভেট যানবাহনও। সব মিলিয়ে মৌসুমের শেষ টানা ছুটিটা আশানুরূপ না হলেও কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে। ঢাকার ডেমরা থেকে আসা পর্যটক ডা. নজরুল ইসলাম দম্পতি বলেন, করোনার কারণে কোথাও তেমন যাওয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনসহ টানা তিনদিনের ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে এসেছি। রবিবার ফিরবো ঢাকায়। বৃহস্পতি থেকে শনিবার কক্সবাজার ঘুরে দেখবো। আমাদের মতো আরও অনেকে এসেছেন। বেশ ভালো লাগছে। তবে কয়েকজন পর্যটকের অভিযোগ, সৈকতে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা পর্যটক একটু বাড়লেই বেপরোয়াভাবে দাম বাড়িয়ে ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করেন। বাস টার্মিনালে নেমে সৈকতে পৌঁছানো পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় তারা এই সমস্যায় পড়েছেন বলে অভিযোগ করেন।
সি সেইফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, ঋতু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের প্রকৃতিও পাল্টেছে। উত্তাল সাগরে নিয়ম মেনে গোসলে নামতে বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে যেখানে লাইফ গার্ডকর্মীরা অবস্থান করছেন সেখানে গোসল করা নিরাপদ। কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, জাতীয় শিশু দিবসসহ সপ্তাহিক মিলিয়ে টানা কয়েকদিনের ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটক সমাগম বাড়বে, সেটি মাথায় রেখে সৈকত ও পর্যটন স্পটে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এরপরও কোথাও কেউ অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার শিকার হলে পুলিশ বক্স, তথ্য কেন্দ্র বা টুরিস্ট পুলিশ ভবনে এসে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।