দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব, মন্দিরে ১৪৪ ধারা জারি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:২৩ পিএম, ১ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:৫৬ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুরে শ্রীশ্রী রশিক রায় জিউ মন্দিরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। শিবরাত্রি ব্রত ও পূজা উৎসব নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) পন্থীদের সঙ্গে ইসকন ব্যতীত অন্য অংশের সংঘর্ষের আশঙ্কায় এ ব্যবস্থা নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান গতকাল সোমবার রাতে মন্দির এলাকায় এই ১৪৪ ধারা জারির আদেশ দিয়েছেন, যা আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে কার্যকর হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে মন্দিরের জমির ভোগদখল নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই দুই অংশের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। ২০০৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রশিক রায় জিউ মন্দিরে দুর্গাপূজা নিয়ে ইসকনপন্থী ও ইসকন ব্যতীত অন্য অংশের সংঘর্ষ হয়। সে সময় ইসকনভক্তদের হামলায় মন্দিরের সেবায়েত ফুলবাবু নিহত হন। সেই থেকে ওই মন্দিরে দুর্গাপূজার সময় স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে আসছে। তবে শিবরাত্রি ব্রত ও পূজা উৎসব ঘিরে মন্দিরে এবারই প্রথম ১৪৪ ধারা জারি করা হলো।
ইউএনও আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন, মন্দিরের জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। বিরোধের জেরে একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটে। এ বছর শিবরাত্রি ব্রত ও পূজা উৎসব নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেন অবনতি না ঘটে, তাই পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারির আদেশ দেওয়া হয়েছে। শিবরাত্রি ব্রত শেষ হওয়ার দু–এক দিনের মধ্যে ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়ার চিন্তা রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, শ্রীশ্রী রশিক রায় জিউ মন্দিরে কোনো পক্ষই শিবরাত্রি ব্রত ও উৎসব পালন করে না। কিন্তু এবার ইসকনপন্থীরা মন্দিরে শিবরাত্রি ব্রত ও উৎসব পালনের উদ্যোগ নেন। এ নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা থেকে প্রশাসন সেখানে এ ব্যবস্থা নিয়েছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মন্দিরে ১৪৪ ধারা জারি করার পর থেকে সেখানে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০০ বছর আগে এলাকার জমিদার বর্ধামণি চৌধুরানী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মাদারগঞ্জ মৌজায় শ্রীশ্রী রশিক রায় জিউ মন্দিরটি নির্মাণ করেন। মন্দির পরিচালনার জন্য তিনি ৮১ একর সম্পত্তি দান করেন। এর পর থেকে সেবায়েতের মাধ্যমে এই মন্দিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজা উদ্যাপন করে আসছিলেন। ২০০৯ সালের দিকে মন্দিরের আয়-ব্যয় নিয়ে সেবায়েত ফুলেন চন্দ্র রায়ের সঙ্গে গ্রামবাসীর ভুল–বোঝাবুঝি হয়। সেই থেকে ওই গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। বর্তমানে ওই মন্দির প্রশাসনের হেফাজতে রয়েছে।