উদ্বোধনের আগেই কাত হয়ে আছে ২ বছর, মানুষের দূর্ভোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৫৪ পিএম, ১ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:২৮ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার চরাঞ্চলের নগরজোয়ার এলাকায় একটি খালের উপর নির্মিত একটি সেতু উদ্বোধনের আগেই ভেঙ্গে ২ বছর যাবত কাত হয়ে রয়েছে। ব্রীজের এপ্রোচের মাটি বর্ষার পানির স্রোতে ভেসে ব্রীজের দুই পাশে সৃষ্ট হয়ে আছে গভীর গর্ত। নির্মাণের ২ মাস পরেই উদ্বোধনের আগেই বর্ষার প্রবল স্রোতে ব্রীজটি কাত হয়ে যায় সেই সাথে প্রচন্ড স্রোত ভাষিয়ে নিয়ে যায় ব্রীজের দু-পাশের গোড়ার মাটি। এতে ব্রীজ হলেও তা ব্যবহার করতে পারছে না ওই পথে যাতায়াত করা ৩ উপজেলার মানুষ। ওই চরাঞ্চলের যাতায়াতের এখোন একমাত্র অবলম্বন মটর সাইকেল যা ব্রীজ ভাঙ্গার করনে ব্রীজের পাশের জমির উপর দিয়ে যাতায়াত করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় টঙ্গীবাড়ী উপজেলার হাসাইল পদ্মা নদী ঘাট হতে শুরু হয়ে চরাঞ্চলের ভিতর দিয়ে একটি রাস্তা পাশের শরিয়তপুর জেলার জাজিরা পর্যন্ত সংযুক্ত হয়েছে। ওই রাস্তার প্রায় ৪ কিলোমিটার বিছানো রয়েছে ইট বাকি অংশ এখনো কাচা । ওই রাস্তার মধ্যের নগরজোয়ার এলাকায় খালের উপরে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জাইকার অর্থায়নে প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা ব্যায় নির্মাণ করা হয় এই সেতুটি। ওই সেতু দিয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা ছাড়াও শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার লোকজন মুন্সীগঞ্জ হয়ে ঢাকার সাথে যোগাযোগ করে থাকেন। শরীয়তপুর জেলার বাবুরচর, চিডারচর, নওপাড়া, জয়বাংলা বাজার এলকায় যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তাটি দিয়ে ডাইনগাঁও, আটিগাঁও, নগরজোয়ার, হাসাইল, বানারী, পাচনখোলা, মান্দ্রাসহ প্রায় ২০টি গ্রামের মানুষ এ পথ দিয়ে যাতায়াত করে থাকে।
গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চরাঞ্চলের ২০টি গ্রামের মানুষের। সেতুটি উদ্বোধনের আগেই ভেঙ্গে যাওয়ায় এলাকার জন্য সুফল তো দূরের কথা, বরং দুর্ভোগ বয়ে এনেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ অপরিকল্পিতভাবে যে স্থানে প্রশস্ত সেতু প্রয়োজন, সেখানে সরু সেতু নির্মাণ করায় বন্যার পানির স্রোতে ধসে গেছে সেতুটি। আর ২০২০ সালে ভরা বর্ষায় সেতুটি ধসে যাওয়ার পর সেতুর নিচ দিয়ে পানি চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সেতুর দুই পাশের রাস্তা ভেঙে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সেতুর পাশের রাস্তা ব্যাবহার না করতে পেরে পাশের জমি দিতে যাতায়াত করছে ওই পথে চলাচলকারীরা।
এতে জমির মালিকদের গালমন্দ শুনতে হচ্ছে তাদের। তাই সেতুটি তাদের জন্য উল্টো দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়রা জানান, নির্মাণের পরপরই ২ বছর আগে বন্যার পানিতে সেতুটিতে ভাঙন ধরে। ধীরে ধীরে অ্যাপ্রোচ সড়ক বিলীন হয়ে যায়। শুষ্ক মৌসুমে সেতুর পাশ দিয়ে জমির উপর দিয়ে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষাকালে তা সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মানের সময় এই সেতুটিতে এই স্থানের চরের মাটি মিশ্রিত বালু ব্যবহার করা হয়। আমরা সে সময় বাধা দিলেও ঠিকাদার অনেক প্রভাবশালী হওয়ায় আমাদের কোন কথাই কর্ণপাত না করে এই ব্রীজের পাশ হতে নিন্মমানের বালু নিয়ে এই ব্রীজ নির্মাণ করে। নির্মানের পরে উদ্বোধন না করতেই ব্রীজটি কাত হয়ে গেলো আমরা ব্রীজটি ব্যবহার করতে পারলাম না। এখন দু বছর যাবৎ বর্ষা আসলে ব্রীজের পাশ দিয়ে নৌকা চলে। সব সময় নৌকা পাওয়া যায়না। মাঝে মধ্যে সাতরিয়ে পার হতে হয়। ব্রীজের দু-পাশে ইট বিছানো রাস্তা রয়েছে ব্রীজটি ঠিক থাকলে আমরা গাড়ি দিয়ে এ পথে যাতায়াত করতে পারতাম। কিন্তু এখন আমাদের শুক্ত মৌসুমে ব্রীজের পাশের অন্য মানুষের জমির আইল দিয়ে হেটে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
স্থানীয় নগর জোয়ার গ্রামের বৃদ্ধ আ. মজিদ বেপারী (৬৫) বলেন, বৃদ্ধ বয়সেও ৪ কিলোমিটার হেটে বাজারে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বাজার হতে মালামালও হাতে করে আনতে হচ্ছে। ঠিকাদার লোকাল বালু দিয়ে ব্রীজটি নির্মাণ করলো। আমরা বাধা দিলাম শুনলো না। এখোন ব্রীজটি ভেঙ্গে পড়লো। ২ বছর হয় কাত হয়ে আছে ঠিকও করছে না। ব্রিজটি ঠিক করলে আমরা গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতে পারতাম।
চরাঞ্চলের ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা বানারী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী ইভা বলেন, আমরা চর হতে ৩/৪ কিলোমিটার হেটে স্কুলে যাই। ব্রীজটা বানানোর ২ মাস না হতেই ভেঙ্গে গেছে। ব্রীজটি হলে আমরা গাড়ি দিয়ে নিয়মিত স্কুলে যাতায়াত করতে পারতাম। আমাদের এখন পরিশ্রম করে হেটে গিয়ে পড়ালেখার অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
ওই পথের বাইক রাইডার পারভেজ সর্দার বলেন, ব্রীজটা তৈরী করছিলো কিন্তু আমরা ব্রীজটি দিয়ে একদিনও গাড়ি চালাইতে পারিনাই। এখোন ব্রীজের পাশের জমির উপর দিয়ে বাইক চালাই। অনেক সময় জমির উপরের গর্ত দিয়ে বাইক চালাইতে গিয়ে আমাদের হাত পা ভাঙ্গে। পেটের দায়ে চালাই আমরা চাই ব্রীজটা দ্রুত ঠিক হউক। অপর বাইক চালক হৃদয় বলে, ব্রীজ না থাকায় জমির ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাই। মানুষ গাড়িতে উঠে আর বলে চেয়ারম্যান মেম্বাররা কি করে রাস্তা ঠিক করেনা।
কাইচমালধা ওয়াহিদ আলি হাওলাদার দাখিল মাদ্রাসর ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী ইতি আক্তার বলেন, আমার বাড়ি হতে আমি যে মাদ্রাসায় পড়ি তা ৫ কিলোমিটার দূরে। এখানে একটি ব্রীজ হলো হওয়ার ২ মাস পরেই ভেঙ্গে গেলো। ব্রীজটা আবার যদি ঠিক করে দিতো তাহলে আমরা গাড়ি দিয়ে যেতে পারতাম।
এ ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাজেদা রহমান জানান, আমি এখন এখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। এ ব্রিজটি তৈরির সময় আমি এখানে ছিলাম না। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ব্রিজটি নির্মান হয়েছে। ব্যয় আমার জানা নেই। তবে জানা মতে ওই ব্রীজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ৮ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিলো। ব্রিজটি ভাঙার কারণে আর কোন টাকা দেওয়া হয়নি৷ আমি এখানে যোগদানের পর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ব্রীজটি সম্পর্কে অবহিত করে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এখনো তার কোন জবাব পাইনি।