কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ভবন আজও হস্তান্তর হয়নি!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫১ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারী,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:০৪ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের নতুন ক্যাম্পাসে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার কথা বলা হলেও নতুন বছরের দুই মাস পার হতে চলছে। কার্যক্রম শুরু করা তো দূরের কথা ভবনই হস্তান্তর করতে পারেনি গণপূর্ত বিভাগ।
অক্টোবরে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পর গত ৪ মাসে কোন টেন্ডারও নিষ্পত্তি করতে পারেনি বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী। বরং পুরো অর্থ বিল ছাড়ার নামে ঠিকাদারদের জিম্মি করে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে গণপুর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এদিকে ভবন বুঝে নিতে বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) কমিটির সদস্যরা পরিদর্শন করেছেন। তারা বেশ কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।
গণপূর্ত অফিসের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২০১২ সালে কুষ্টিয়া হাউজিং এলাকায় মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শুরুতেই নানা অসঙ্গতি ও অনিয়মের অভিযোগ আনে আইএমইডি'র একটি তদন্ত দল। এরপর দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। মেয়াদ বাড়িয়েও এখনো ৭০ ভাগও শেষ হয়নি। ২০১৮ সালের এ প্রকল্পের প্রথম রিভিশন হয়। নতুন করে চলতি বছরের ৫ অক্টোবর আবার রিভিশন করা হয়েছে। এ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। এর মধ্যে ৪৮৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে স্থাপনা নির্মাণে। বাকি ফার্নিচার ক্রয়সহ অন্যান্য খাতে ব্যয় হবে।
সর্বশেষ একনেক সভায় প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হলেও প্রধানমন্ত্রী কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ প্রকল্প নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন। তিনি সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন। দীর্ঘদিন দিন পর ভবন বুঝে নেওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। চলতি মাসের ১৯ জানুয়ারি অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) ডা. আফরিনা মাহমুদ স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। কলেজ অংশের একাডেমিকসহ তিনটি ভবন বুঝে নেওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির সভাপতি করা হয়েছে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শারমিনা আফতাবকে। এ কমিটিতে দুইজন প্রকৌশলী ছাড়াও সব মিলিয়ে ৭ জন চিকিৎসক রয়েছে। তারা মেডিকেল কলেজ প্রকল্প সরেজমিন ঘুরে ভবন বুঝে নিবেন। বুধবার কমিটির সদস্যরা মেডিকেল প্রকল্প ঘুরে দেখেন। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি প্রদান করেছেন।
প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, একাডেমিক ভবনটি রং করে প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে ভেতরের ফিটিংস এর কাজ এখনো হয়নি। সামনের সড়কের কাজও চলমান। শ্রমিকরা ইট ও রড বিছিয়ে সড়ক নির্মানের জন্য প্রস্তুত করছেন। সড়ক প্রস্তুত করতে এখনও কয়েক সপ্তাহ লাগবে। পাশাপাশি এখনো ফিটিংসের কাজ শুরুই করা হয়নি। এর মধ্যে ভবন হস্তান্তর করার জন্য তোড়জোড় চলছে। তবে ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেল প্রস্তুত হয়েছে হস্তান্তরের জন্য। এখানে কোন কাজ বাকি নেই বলে দাবি করেছে গণপূর্ত। আপাতত একাডেমিক ভবন, ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেল হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে। এরপর ডরমেটরি, অন্যান্য আবাসিক ভবনসহ স্থাপনা হস্তান্তর করা হবে। সব শেষে হস্তান্তর করা হবে হাসপাতাল ভবনটি। এখনো যে কাজ বাকি আছে সেটা শেষ হরে ভবন হস্তান্তর নিতে মাসখানেক লেগে যেতে পারে বলে মনে করছেন একাধিক চিকিৎসক।
এদিকে গণপূর্ত ও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে বারবার সময় দিয়েও নতুন ক্যাম্পাসে উঠতে পারছেন না শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। প্রধানমন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারির পরও প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ার পর নতুন করে গত ৪ মাসে নতুন করে কোন টেন্ডার নিষ্পত্তি করতে পারেনি গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী। ঠিকাদাররা অভিযোগ করেছেন, গণপূর্তের বিরুদ্ধে। নানা ভাবে হয়রারি করা হচ্ছে ঠিকাদারদের। সর্বশেষ মেডিকেল কলেজের পুরাতন বিল ছাড় করার জন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ অন্য প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে। এসব কারণে ক্ষুব্ধ ঠিকাদাররা।
ভবন হস্তান্তর, টেন্ডারসহ ঠিকাদারদের অভিযোগের বিষয়ে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, 'দুই বছর ধরে ভবন বুঝিয়ে দেওয়া নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। এখন ভবন বুঝিয়ে দিয়ে তারপর আমরা হালকা হতে চাই। কথা বলতে চাই ভবন বুঝিয়ে দেওয়ার পর।' তিনি আরো জানান, একাডেমিক ভবনে কিছু কাজ বাকি আছে। আর ছাত্র-ছাত্রী হোস্টেল তারা প্রস্তুত রেখেছেন।
টেন্ডার নিষ্পত্তির বিষয়ে বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে সকল টেন্ডার নিষ্পত্তি করা হবে। আর ঠিকাদারদের অভিযোগ অমূলক বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে কথা হলে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দেলদার হোসেন বলেন, 'নতুন ক্যাম্পাসে যাওয়াটাই বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা জানুয়ারিতে যেতে চেয়েছিলাম। সেটা পারিনি। গণপূর্ত এখনো কোন ভবন আমাদের বুঝিয়ে দেয়নি। একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা পরিদর্শন করে মতামত দিয়ে ভবন বুঝে নিবেন।'
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে কুষ্টিয়ার হাউজিং এলাকায় মেডিকেল কলেজের মূল ক্যাম্পাসের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে কুষ্টিয়া শহরের জেনারেল হাসপাতালের সামনে মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুলে অস্থায়ী ক্যাস্পাসে কার্যক্রম চলছে।