চৌগাছায় কপোতাক্ষ নদ খনন পুনরায় শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৫৭ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৪৯ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
প্রায় ৮ মাস বন্ধ থাকার পর চৌগাছার উপর দিয়ে বয়েচলা কপোতাক্ষ নদ খননের কাজ পুনরায় শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার পর পুনরায় কাজ শুরুতে উচ্চসিত এলাকাবসি। এদিকে নদ খননের কাজ বন্ধ থাকায় নদের জমি অবৈধ ভাবে দখলে রাখা ব্যক্তিরা জমি আগলে রাখতে বিভিন্ন দপ্তরে ব্যাপক দৌড়ঝাপ করেছেন বলে জানা গেছে। এলাকাবাসি নদের সমুদয় জমি উদ্ধার করে খননকাজ পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ঠদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সূত্র জানায়, উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর ব্রীজ সংলগ্ন হতে যশোরের মনিরামপুর উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ৭৯ কিলোমিটার নদ খনন হবে, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা। একাধিক প্রজেক্টের মাধ্যমে আগামী দুই বছরের মধ্যে খননকার্য শেষ করা হবে। নির্ধারিত পরিমাপে নদকে গভীর করা হবে আর খননকৃত নদের আড় হবে ৩০ থেকে ৩৫ মিটার।
গত অর্থ বছরের (২০২০-২০২১) শেষ সময়ে এসে অর্থাৎ জুন মাসে পৌরসভার হুদাচৌগাছা মহল্লার নিচ থেকে নদ খনন কাজ শুরু হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় খনন কাজ বন্ধ হয়ে যায়, শুস্ক মৌসুমে পুরোদমে খনন কাজ শুরু করা হবে, সে সময়ে এমনটিই জানান সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ।
মাসের পর মাস পার হলেও কাজ শুরু না হওয়ায় নদ খনন নিয়ে দেখা দেয় শংকা। অবশেষে পুনরায় সেই কাজ শুরু করা হয়েছে। এবার উপজেলার ধুলিয়ানী ইউনিয়নের মুকুন্দপুর গ্রামের পাশ থেকে এই খনন কাজ শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদার।
শনিবার সকালে সরেজমিন যেয়ে দেখা যায়, একাধিক এক্সেমিটারের মাধ্যমে নদের তল থেকে মাটি তুলে কিনারে জমা করা হচ্ছে। এই মাটি আর একটি মেশিনের মাধ্যমে নদের শেষ সীমানায় জড়ো করছে। নদে এখন পানি থাকায় বেশ বেগ পেতে হচ্ছে খনন কাজের সাথে নিয়োজিত ব্যক্তিদের। এজন্য তারা স্থানীয় ছোট কাবিলপুর গ্রামের পাশ থেকে নদের মাঝ বরাবর একটি বাঁধ নির্মান করেছেন। বাধ দেয়ার ফলে নদের পানি শুকিয়ে গেছে। এখন মাটি কাটতে তেমন কোন বেগ পেতে হচ্ছে না। নদ খননের খবরে এলাকার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ নদ পাড়ে আসছেন এবং খনন কাজ দেখে উচ্চসিত হচ্ছেন।
উপজেলার রামভাদ্রপুর গ্রামের ছবেদ আলী (৭৫) বলেন, কপোতাক্ষ খনন করা হচ্ছে এমন খবরে বাড়ি থেকে এখানে এসেছি খনন কাজ দেখার জন্য। দীর্ঘদিন পরে হলেও নদ যে খনন হচ্ছে এতে নিজের কাছে বেশ ভাল লাগছে। মুকুন্দপুর গ্রামের ৮৫ বছরের বৃদ্ধ ওয়জেদ আলী বলেন, জীবনের শেষ সময়ে এসে কপোতাক্ষ খনন কাজটি দেখতে পেরেছি এটি ভাল লাগার বিষয়। এক সময় নদে অঢেল পানি থেকেছে, গোসল করা, মাছ ধরা নিয়মিত চলত। কিন্তু বর্তমানে নদে পানি থাকেনা, তাই মাছ ধরা তো দুরের কথা গোসলও করা যায়না। ছোট কাবিলপুর গ্রামের শাহিনুর রহমান বলেন, কপোতাক্ষ খনন আমাদের প্রানের দাবি ছিল। সেই দাবি আজ বাস্তবে রুপ নিতে শুরু করেছে। নদ খনন করতে যেয়ে কোন ব্যক্তির যদি পুকুর বা ফসলি জমি নষ্ট হয় তাও ভাল, খনন কাজ যেন আর বন্ধ না হয়।
নদ খননের কাজ দেখা শুনার দায়িত্বে থাকা জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৪০টির মত ঠিাকাদার প্রতিষ্ঠান চৌগাছা থেকে মনিরামপুর পর্যন্ত নদ খনন করবেন। বর্ষায় নদে পানি বেড়ে যাওয়ায় কজ বন্ধ ছিল, তবে এখন কাজ শুরু হয়েছে। সকল ঠিকাদারই দ্রুতই কাজ শুরু করবেন বলে তিনি জানান। বর্তমানে উপজেলার ছোট কাবিলপুর হতে ঝিকরগাছার ছুটিপুর কদমতলা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার খনন কাজ করবেন মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক নামের ঠিকাদার। তিনি এই ঠিকাদারের কাজ দেখা শুনা করছেন। খনন কাজে এখন ১২টি এক্্েরমিটার নিয়োজিত আছে দ্রুতই এর সংখ্যা আরও বাড়বে। সকাল সাড়ে ৭ টাই কাজ শুরু হয়ে রাত ৮ টা পর্যন্ত খনন কাজ চলে।
এদিকে একাধিক সূত্র জানায়, গত অর্থ বছরের জুন মাসে নদ খননের কাজ শুরু হয়ে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নদের জমি দখলে রাখা ব্যক্তিরা শেষ সময়ের মত বিভিন্ন দপ্তরে ফাইল নিয়ে ব্যাপক দৌড়ঝাপ করেছেন। যে কোন মূল্যে নদের জমি তারা দখলে রাখতে মরিয়া। বিশেষ করে চৌগাছা বাজার সংলগ্ন নদের জমি দখলকারীরা বেশি দৌড়ঝাপ করেছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেন।
এ বিষয়ে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগে চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।