নারায়ণগঞ্জে পত্রিকা অফিসে আজমেরী ওসমানের ক্যাডার বাহিনীর সশস্ত্র হামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:১১ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৫৪ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
নারায়ণগঞ্জে একটি দৈনিক পত্রিকা অফিসে হামলা চালিয়েছে প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান বাহিনীর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। শতাধিক মটরসাইকেলে শহরে প্রায় কয়েক দফা মহড়ার পর ওই সন্ত্রাসীরা অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে চাষাঢ়ায় দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জ অফিসে হানা দিয়ে সেখানে থাকা সাংবাদিক ও স্টাফদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হত্যার হুমকি দেয়। প্রায় ১৫ মিনিট অফিসে হৈ চৈ এর পর তারা সেখানে থাকা সিসিটিভির ডিভাইস নিয়ে যায় ও সিসি ক্যামেরা ভাংচুর করে।
আজ শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ১২টা ২৫ মিনিটে শহরের চাষাঢ়ায় প্রেসিডেন্ট রোডে সিরাজ ম্যানশনের চারতলায় ওই ঘটনা ঘটে। ওই সময়ে অফিসে সময়ের নারায়ণগঞ্জের চার সংবাদকর্মী বসা ছিলেন।
অফিসের প্রহরী হাফিজউদ্দিন জানান, হঠাৎ করে শতাধিক লোকজন উপরে উঠতে চায়। আমি তখন বাধা দিতে গেলে আমাকে মেরে ফেলবে হুমকি দিয়ে সবাই উপরে উঠে। আমি একা সকলের সঙ্গে পারছিলাম না।
অফিসে থাকা সময়ের নারায়ণগঞ্জের স্টাফ রিপোর্টার আরিফ হোসাইন কনক বলেন, বেলা ১২টা ২৫ মিনিটে অফিসের নিচে শতাধিক মটরসাইকেল অবস্থান করে। পরে মটরসাইকেল থেকে শতাধিক লোকজন সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে। অফিসে ঢুকেই আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে। তারা ১১ ফেব্রুয়ারি সময়ের নারায়ণগঞ্জ পত্রিকার লিড নিউজ ‘যা ছিল খসড়া চার্জশীটে’ সংবাদটি কেন প্রকাশ হয়েছে তার কৈফিয়ত জানতে চান। তারা বলতে থাকেন, ‘তোরা আজমেরী ওসমানের বিরুদ্ধে নিউজ করস। কালকের মধ্যে পত্রিকায় এর জন্য ক্ষমা না চাইলে পত্রিকা অফিস জ্বালিয়ে দিব ও সম্পাদককে গুলি করে মেরে ফেলবো।’ তারা প্রায় ১৫ মিনিট অফিসে অবস্থান করে হুমকি দিতে দিতে চলে যায়। যাওয়ার সময়ে তারা অফিসে বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে দেয়। সেই সঙ্গে অফিসে থাকা সিসি ক্যামেরার ডিভিআর ডিভাইস খুলে নিয়ে গেছে। এছাড়া একটি পিসির হার্ডডিস্কও খুলে নিয়ে গেছে। ক্যামেরা ভাংচুর করেছে।
এদিকে ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ওই হামলায় নাসির, আক্তার নূর, সুমন, সানি, ইসমাইল, আন্নান, কাজল, রুবেল, সিনাফি, রবিন, মনির, লক্ষণ, কৃষ্ণা, রাতুল প্রমুখকে চিহ্নিত করা গেছে।
তাদের মধ্যে নাসির ও আক্তার নূর এর আগে একাধিকবার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য গ্রেপ্তার হয়েছিল। সে এখন আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবেই পরিচিত। এছাড়া অপর একটি ফুটেজে দেখা গেছে, অফিসে হামলার আগে শতাধিক লোকজন মটরসাইকেলে করে শহর মহড়া দেয়। ওই মহড়া শেষ করেই সময়ের নারায়ণগঞ্জ অফিসে হানা দেয়।
এ ব্যাপারে সময়ের নারায়ণগঞ্জের প্রকাশক ও সম্পাদক জাবেদ আহমেদ জুয়েল বলেন, সম্প্রতি ত্বকী হত্যা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। ১১ ফেব্রয়ারি একটি র্যাবের সেই প্রকাশিত খসড়া চার্জশীট নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। মূলত সেই খসড়া চার্জশীট র্যাব প্রকাশ করে এবং ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি গণমাধ্যম কর্মীদের সরবরাহ করে। সেটাই হুবহু তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে আমাদের নিজেদের মনগড়া বক্তব্য নাই। কিন্তু তারা যেভাবে অফিসে হানা দিয়েছে সেটা ন্যাক্কারজনক। তারা অফিসের সিসি ক্যামেরার ডিভিআর মেশিন ও একটি পিসির হার্ডডিস্ক নিয়ে গেছে। ভাংচুর করেছে ক্যামেরা।
পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, বিষয়টা সম্পর্কে আমি অবগত। পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ, অফিসের লোকজনদের সঙ্গে থাকা ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।