বগুড়ায় ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা, সরকারি নিষেধাজ্ঞায় অসন্তোষ ব্যবসায়ীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫২ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারী,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৩৪ এএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
বগুড়া গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দফায় দফায় সরকারি বাধা-নিষেধ এবং বাঘাইড় মাছের উপস্থিতির ওপড় নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মেলায় লাখো মানুষের উপচে পড়া ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিকে প্রতিবছরের মতো ১০ফেব্রুয়ারি গাবতলীর ত্রিমহিনী পশ্চিম মহিষাবান গ্রামে অনুষ্ঠিত হবে বউমেলা।
পোড়াদহ মেলার মূল আকর্ষণ হলো বাঘাইড় মাছ। সরকারিভাবে নিষিদ্ধ থাকায় মেলায় কেউ বাঘাইড় মাছ কেনাবেচা করতে পারেনি। এ জন্য এবার বাঘাইড় মাছের ক্রেতা-বিক্রেতাদের মনে আনন্দের আমেজও ছিল অনেকটা কম। তবে বাঘাইড় মাছ বিক্রি করতে না পেরে অনেক মাছ বিক্রেতাদের ক্ষোভপ্রকাশ করতে দেখা গেছে। এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা মাছ ব্যবসায়ী আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলার মূল আকর্ষণ হলো বাঘাইড় মাছ। এ মাছটা এবার বিক্রি করতে না পেরে আমার মনে কোন আনন্দ নেই। দেশের সব জায়গায় বাঘাইড় মাছ কেনাবেচা হচ্ছে। অথচ এ মেলায় বিক্রি করতে নিষেধ করা হলো!’
তবে মেলায় বাঘাইড় মাছ না পাওয়া গেলেও দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছ ছিল অনেক। মেলার সবচেয়ে বড় মাছ ছিল ২৫কেজি ওজনের নদীর একটি কাতলা মাছ। যার মূল্য ছিল কেজি প্রতি ১৮’শ টাকা। ১৪’শ টাকা কেজি দরে চিতল, ১৬’শ টাকা কেজি দরে নদীর বোয়াল, গুজি (আইর) কেজি প্রতি ১৪’শ টাকা, বড় রুই কেজি প্রতি ১২’শ টাকা, ব্লাডকাপ ৭’শ টাকা কেজি এবং বড় সিলভারকার্প কেজি প্রতি সাড়ে ৫’শ টাকা। এছাড়াও সামদ্রিক মাছের মধ্যে গাংচিল সাড়ে ৫’শ টাকা কেজি, কোরাল মাছ সাড়ে ৮’শ টাকা কেজি এবং কাকলে সাড়ে ৫’শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
মেলায় দ্বিতীয় আকর্ষণ হিসাবে ছিল ঐ এলাকার মহিষাবান গ্রামের আব্দুল লতিফ মৎস্য আকৃতির ১৫ কেজি ওজনের মিষ্টি। যার মূল্য ছিল ৩হাজার টাকা। এছাড়াও তার দোকানে প্রায় ৮শত মন মিষ্টি বিক্রি করা হয়েছে। অপরদিকে কাঠ বা ষ্টীলের যাবতীয় ফার্ণিচার মেলার দিন কেনাবেচা করা হলেও মেলার পরের দিন পুরোদমে বিক্রি হয়ে থাকে।
মেলায় বিভিন্ন জেলা থেকে বড়ই (কুল), আচার, কৃষি সামগ্রীসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ও খাদ্য দ্রব্য হাট-বাজারের ন্যায় বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া বিনোদন মূলক সার্কাস, নাগরদোলা, জাদু খেলা, মোটর সাইকেল খেলার আয়োজন ছিল। এবার মেলা পরিচালনা কমিটির দায়িত্বে ছিলেন মহিষাবান ইউপির নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মন্ডল। উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দর সংলগ্ন পোড়াদহ নামকস্থানে প্রায় চারশত বছর পূর্বে থেকে স্থানীয় সন্ন্যাসী পূঁজা উপলক্ষে গাড়ীদহ নদী ঘেঁষে সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানা জমিতে একদিনের জন্য মেলাটি হয়ে থাকে। প্রতি বছর বাংলা সনের মাঘ মাসের শেষ অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার মেলাটি হয়ে থাকে। এদিকে প্রতিবছরের মতো আজ গাবতলীর মহিষাবান গ্রামে স্থানীয় যুব সমাজের উদ্দ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে বউমেলা। এ মেলায় শুধু মেয়েরাই ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে। দুপুরে মেলায় গিয়ে হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বারবার তাগিদ দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মাদ সালাউদ্দিন আহম্মেদ, গাবতলীর ইউএনও মোছা: রওনক জাহান ও এ্যাসিল্যান্ড মিজানুর রহমান। এ সময় এক ঘন্টার মধ্যে মেলা বন্ধ করার নির্দেশও দেন প্রশাসনিক ওই কর্মকর্তারা।
পোড়াদহ মেলা প্রসঙ্গে ইউএনও মোছা: রওনক জাহান ও মডেল থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, করোনার কারণে মেলাটি আগেভাগেই শেষ করতে বলা হয়েছে।