সাতকানিয়ায় প্রকাশ্যে গুলির হুমকি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৪৬ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:০০ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
‘আঁতুন মাল দুনোবা থাকে এবং আঁই অর্ডার দির যে অইব অক আগে কাম গড়ি ফেলাইবা। তারপর পরের খেলা দেখা যাইবো। সব সময় লোড থাকে। সব সময় আঁর মালও লোড এবং আঁইও প্রস্তুত (আমার দুটি অস্ত্রই থাকে এবং আমি নির্দেশ দিচ্ছি যে হবে হোক আগে কাজ সম্পাদন করে ফেলবে। তারপর পরের খেলা দেখা যাবে। সব সময় আমার অস্ত্র গুলি ভর্তি থাকে, আমিও প্রস্তুত)।’
কথাগুলো বলেছেন সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আকতার হোসেন।
গত বৃহস্পতিবার আকতার হোসেন প্রকাশ্যে সভায় প্রতিপক্ষকে এ হুমকি দেন। হ্যান্ড মাইকে দেওয়া তাঁর এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তবে এই ভিডিও এডিটিং করে করা হয়েছে বলে দাবি করেন খাগরিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আকতার হোসেন। যদিও ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তাঁর দুটি অস্ত্র পুলিশ থানায় জমা নিয়েছে।
আগামী সোমবার সাতকানিয়ার এ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনের প্রচার শুরুর পর সহিংসতা লেগেই রয়েছে। সবশেষ গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে সোনাকানিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম চৌধুরীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়। বাড়ির চেয়ার, টেবিলের কাচ, দরজা ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া সাতকানিয়ার অন্য ইউনিয়নেও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ তুলে যাচ্ছেন বিদ্রোহীসহ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। পাশাপাশি আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটছে। চরতী ও নলুয়া ইউনিয়নে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা—এ অভিযোগও রয়েছে।
এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি আকতার হোসেন ও প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক এলডিপি নেতা জসিম উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় অন্তত ১০ জন আহত হন। ওই দিন লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে গ্রামবাসীর ওপর গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে আকতার হোসেনের বিরুদ্ধে।
এরপর বৃহস্পতিবার নির্বাচনী সভায় যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আকতার হোসেন প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজির হুমকি দিলেন।
এই হুমকি প্রসঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জসিম উদ্দিন বলেন, ‘প্রকাশ্যে সভায় নৌকার প্রার্থী যে ঘোষণা দিচ্ছেন, তা ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এই হুমকির বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
আকতার হোসেন আরও বলেন, ‘এ ধরনের কথা আমি বলিনি। এটা সত্য ঘটনা নয়। এডিট করে এই ভিডিও ছেড়েছে জসিমের লোকজন। এ ব্যাপারে আমি থানায় জিডি করে গতকাল আমার লাইসেন্স করা অস্ত্র জমা দিয়েছি।’
জানতে চাইলে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল জলিল বলেন, ‘এ রকম হুমকির ভিডিও দেখার পর থানায় অস্ত্র দুটি জমা নিয়েছি।’
২৩ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের পর সাতকানিয়া সহিংস হয়ে ওঠে। সাতকানিয়ার ১৬ ইউনিয়নের ৪টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। বাকি ১২টির মধ্যে ১১টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা চোখ রাঙাচ্ছেন। এ কারণে প্রায় প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।