ভৈরবে মানব প্রাচারকারীরা ফের সক্রিয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৩৮ পিএম, ২ ফেব্রুয়ারী,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১২:১২ পিএম, ২১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২৪
২০২০ সালে ২৬ বাংলাদেশী লিবিয়ায় গুলিতে নিহত হওয়ার পর দীর্ঘ দিন লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর সাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধ ভাবে ইউরোপ প্রবেশের পথে মানব প্রাচার বন্ধ থাকে। ইতালী প্রবেশের আশায় শত শত তরুণ-যুবক দেশান্তরী হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে মানব পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা হয় দালাল চক্রের বিরুদ্ধে। ঐ সময় ভৈরবে ও একটি মামলা হয়। সেই মামলায় মানব প্রাচারের অভিযোগে গ্রেফতার হয় পৌর এলাকার লক্ষীপুর গ্রামের কাওছার,তাতার কান্দির হবি, লক্ষীপুরের হাজী সহিদ ওরফে লেংড়া সহিত, জগন্নাথ পুরের হযরত আলী। সম্প্রতি হবি অসুস্থ হয়ে মারা যায় জেল হাজতে, কাওছার রয়েছে জেলে আর জামিনে ছাড়া পায় হাজী সহিদ ওরফে লেংড়া সহিদ ও হযরত আলী। হাজত থেকে ছাড়া পেয়ে লেংড়া সহিদ এ কাজ ছেড়ে দিলেও লিবিয়া প্রবাসী সজীব ওরফে উজ্জ্বলের পিতা হযরত আলী পূনরায় জড়িয়ে পড়ে মানব পাচারে।
গোপন সূত্রে জানা যায়, হযরত আলীর ছেলে সজীব লিবিয়াতে বসবাস করছে দীর্ঘ দিন যাবৎ। সেখানে থেকে সে ইউরোপে মানব পাচারের কাজ করছে। সজীবের পিতা হযরত আলী ভৈরব ও পার্শ্ববর্তী এলাকার তরুন যুবকদের সংগ্রহ করে ৩/৪ লাখ টাকা চুক্তিতে শত শত তরুন যুবক কে টুরিস্ট ভিসার মাধ্যমে দুবাই দিয়ে লিবিয়ায় পাঠাচ্ছে। ভৈরব পৌর এলাকার জগন্নাথ পুর কমলার মোড়ের আনোয়ার, শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুরের আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে অবৈধ পথে লিবিয়া দিয়ে ইউরোপে মানব প্রাচার। ৩/৪ লাখ টাকার বিনিময়ে লিবিয়ার দালালরা ভূমধ্যসাগর সাগর দিয়ে নৌকা করে অবৈধ ভাবে ইতালীতে পাঠাচ্ছে।
লিবিয়ায় যারা মাফিয়াদের কবলে পড়ে তাদের গুনতে হয় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা।
গোপন সূত্রে জানা যায়, বিগত ৩/৪ মাসে ভৈরব ও পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে অনুমান ৫ শতাধিক তরুন অবৈধ পথে ইউরোপ প্রবেশের উদ্দেশ্য দালালের মাধ্যমে টুরিস্ট ভিসায় দুবাই হয়ে লিবিয়ার দালালদের বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থান করছেন।
লিবিয়ায় ক্যাম্পে থাকা এক যুবকের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, চলতি বছরের ২২ জানয়ারি ৬০০ জন কে বহন কারী একটি নৌকা ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া উপকূল থেকে ইতালির ল্যাম্পাডুসা দ্বীপের উদ্দেশ্য রওয়ানা দিয়ে ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দেয়ায় অভিবাসী বহনকারী নৌকাটি লিবিয়া উপকূলে ফিরে আসে। এদের অধিকাংশের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব ও পার্শ্ববর্তী এলাকা।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার প্রয়োজনে দালালের খপ্পরে পড়ে দেশ ছাড়ছেন তরুণ যুবকরা। তারা রুট হিসাবে ব্যাবহার করছে দুবাই কিংবা মিশরের বৈধ টুরিস্ট ভিসা। তারপর লিবিয়ায় যান। টাকা বেশী দিলে চার্টার প্লেনে করে লিবিয়ার বেনগাজিতে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর গাড়িতে করে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় লিবিয়ার ত্রিপোলী। ত্রিপোলীর দূর্গম এলাকায় পাচারকারীদের আস্তানা রয়েছে। ইউরোপে নেয়ার জন্য তরুণ - যুবকদের সেই আস্তানায় নিয়ে রাখা হয়। এরপর ত্রিপোলি থেকে নৌকায় তুলে ভূমধ্যসাগরে ছেড়ে দেয়া হয়। ত্রিপলীর ভূমধ্যসাগরের একটি স্রোত সরাসরি ইতালীয় ল্যাম্পাদুসা দীপে গিয়েছে। সেই স্রোত কে কাজে লাগিয়ে নৌকা ছেড়ে দেয়া হয়। প্রাকৃতিক দূর্যোগ কিংবা স্রোত ভুল করলে ভূমধ্যসাগরেই এসব মানুষের হয়ে যায় সলিল সমাধি।
জাতিসংঘের শরনার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) তথ্য অনযায়ী ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে যারা ইতালী প্রবেশের চেষ্টা করেন তাদের মধ্যে এখন শীর্ষে থাকা চারটি দেশের একটি হলো বাংলাদেশ।
গত ২১জুলাই লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালী যাওয়ার পথে নৌকা ডুবিতে ১৭ বাংদেশীর মৃত্যু হয়। এর আগে ২৪ জুন ভূমধ্যসাগর থেকে ২৬৪ বাংলাদেশী কে জীবিত উদ্ধার করা হয়। গত ২৮ ও ২৯ জুন নৌকায় অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়া উপকুলে নৌকা ডুবিতে ৪৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি ডাংকী দেয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে তীব্র শীতে ৭ জন বাংলাদেশী মারা যায়। এদের একজন ভৈরবের পাশ্ববর্তী রায়পুরা উপজেলার বেগমাবাদ ঝাওকান্দি গ্রামের সাইফুল।
ভৈরব ও পার্শ্ববর্তী এলাকার তরুন যুবকদের অবৈধ পথে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপ যাত্রা ঠেকাতে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে আইন শৃংখলা বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যগণ।