আজ সিনহা হত্যাকান্ডের রায় : যা বললেন আইনজীবীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৬ পিএম, ৩০ জানুয়ারী,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৫১ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
কক্সবাজারের টেকনাফে শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার দেড় বছরের মাথায় রায় ঘোষণা হচ্ছে সোমবার। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈল রায় ঘোষণা করবেন। মাত্র ২৯ কর্মদিবসে আদালত আলোচিত এ মামলাটির বিচারকার্য সম্পন্ন করেছেন।
মামলার রায় নিয়ে রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষ বলছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামি টেকনাফ থানা পুলিশের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী এবং টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সর্বোচ্চ ও দৃষ্টান্তমূলক সাজা চায় পরিবার। এ ছাড়া অন্য আসামিদেরও অপরাধের ভিত্তিতে সাজা হবে বলে প্রত্যাশা করেছেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।
নিহত সিনহার বোন শারমিন বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ হবে বলে আশা করি। অপরাধী যেই হোক না কেন, অপরাধ করলে কেউ আইনের হাত থেকে রেহাই পাবে না- এই রায়ের মাধ্যমে সেটি প্রতিষ্ঠিত হবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম বলেন, আমরা অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। ষড়যন্ত্র করে এবং পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। তাই আমরা আদালতে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছি। পুলিশি আবরণে, আইনি আবরণে এমন নিষ্ঠুর ঘটনা যাতে আর না ঘটে, যেন আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা থাকে; রায়ের মাধ্যমে তার প্রতিফলন দেখতে চাই আমরা। আসামি পক্ষের আইনজীবী মহিউদ্দিন খান বলেছেন, আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে বাদীপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। আমরা চাই এই মামলায় ন্যায় বিচার নিন্ডিত করা হোক।
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। এই সড়কে গত ২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ছয় দিন পর ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কক্সবাজার আদালতে মামলা করেন। মামলাটি টেকনাফ থানায় নথিভুক্ত করার পর আদালত তদন্তভার দেয় র্যাবকে। র্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এরপর ২০২১ সালের ২৭ জুন আদালত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেন। তারপর ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ দফায় ৮৩ জনের মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষ্য দেন। ৬ ও ৭ ডিসেম্বর আসামিরা ফৌজদারি কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন। সবশেষে ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত মামলায় দু পক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত ৩১ জানুয়ারি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। তবে মামলার রায় নিয়ে রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষের আইনজীবীর প্রত্যাশা ভিন্ন। রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষ বলছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, প্রদীপ যখন নিন্ডিত হলো যে মরে যায়নি তখন বাম পাশের পাঁজোরে পর পর বুট জুতা দিয়ে লাথি দিয়েছে খুব জোরে, যাতে করে তিনটা হাড় ভেঙে গেছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আছে।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম বলেন, পূর্বপরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করে মেজর সিনহাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। সেটা আমরা আদালতের সামনে স্পষ্টভাবে, সন্দেহাতীতভাবে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি। আর আসামিপক্ষের আইনজীবী বলছেন, ঘটনাটি প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষ। তাই ন্যায়বিচার না পেলে উচ্চ আদালত আপিলে যাবেন তারা। আসামিপক্ষের আইনজীবী মহিউদ্দিন খান বলেন, বিজ্ঞ আদালতের কাছে আমরা ন্যায়বিচার পাব যদি আমরা আমাদের আশানুরূপ ফল যদি না আসে বা প্রত্যাশিত না হয় তাহলে আইনগতভাবে আমাদের ওপরে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আমরা আপিলে যাব। মামলার ১৫ আসামির মধ্যে ১২ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এদের মধ্যে পুলিশের ৯ জন ও এপিবিএনের ৩ জন। আর অপর ৩ জন পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী ও স্থানীয় বাসিন্দা।