করোনা ঊর্ধ্বগতিতেও কুষ্টিয়ায় বাণিজ্য মেলা, নেই প্রশাসনের অনুমতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৪৮ পিএম, ২৪ জানুয়ারী,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৫২ পিএম, ১০ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
করোনার ডেল্টা ও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বিস্তার রোধে সরকার আরোপিত বিধি-নিষেধ মানার বালাই নেই কুষ্টিয়ায়। নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসনের তদারকিও চোখে পড়ার মত নয়। ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতির পরও শহরের প্রাণকেন্দ্র কুষ্টিয়া হাইস্কুলের মাঠে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার চূড়ান্ত আয়োজনে চরমভাবে উদ্বিগ্ন শহরবাসী। জেলা প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই বাণিজ্য মেলার আয়োজনে সচেতন মহলে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৮৬১ সালে স্থাপিত ঐতিহ্যবাহী কুষ্টিয়া হাইস্কুলের বিশাল মাঠের চারদিকজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে শতাধিক স্টল। দর্শকের দৃষ্টি ও মেলার আকর্ষণ বাড়াতে মাঠের মাঝখানে রঙিন বাতির সুউচ্চ টাওয়ার, পানির ফোয়ারাসহ নির্মিত হয়েছে নানা স্থাপনা। এছাড়া ইট বিছিয়ে অভ্যন্তরীণ রাস্তাসহ স্টল নির্মাণের ফলে খেলার মাঠটি পরিণত করা হয়েছে বিপনি-বিতানে।
করোনার প্রাদুর্ভাবে দুই বছর বাদে বিগত প্রায় ৮/১০ বছর যাবত চিহ্নিত একটি মহল বাণিজ্য মেলার নামে র্যাফেল ড্র, যাত্রা ও পুতুল নাচের নামে অশ্লীলতাসহ জুয়ার আসর বসিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা। বিগত বছরের সবকটি মেলাতেই র্যাফেল ড্রতে মোটরসাইকেলসহ আকর্ষণীয় পণ্যের চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে জেলার বিভিন্ন উঠতি যুবকসহ শ্রেণি-পেশার মানুষ জুয়ার কবলে হয়েছেন সর্বস্বান্ত।
সচেতন মহলের অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষ মোটা অঙ্কের টাকার ভাগ পেয়ে বারবার মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে বলে রয়েছে অভিযোগ। ফলে মাঠটি ব্যবহার করতে না পেরে স্কুলের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা থেকে হচ্ছে বঞ্চিত বছরের পর বছর। করোনার নতুন রিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনসহ সরকার ঘোষিত ১১টি নির্দেশনার কোনো তোয়াক্কা না করে ভারতের সীমান্তঘেঁষা জেলা কুষ্টিয়ায় বাণিজ্য মেলার নামে জন-সমাগমসহ আবারও জুয়ার সেই আসর বসানোর পাঁয়তারা করছে সুবিধাভোগী মহল।
এতে স্কুলের শিক্ষার্থীসহ শহরের সচেতনমহল চরমভাবে ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন। মাঠে মেলার আয়োজনে স্কুলের ছাত্রদের খেলাধুলা চরম ব্যাহতের পাশাপাশি শরীরচর্চাসহ বন্ধ হয়ে গেছে শহরবাসীর বৈকালিক হাঁটাচলা। বাণিজ্য মেলার আয়োজনে এখনো কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি বলে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের কোনো অনুমোদন ছাড়া মেলা আয়োজনের নেপথ্যে কারা কল-কাঠি নাড়ছে, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ২০ জানুয়ারি এ বাণিজ্য মেলা চালু করা হবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছে।
ওমিক্রন ঊর্ধ্বগতিসহ করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতির ভয়ানক পরিস্থিতিতে মেলা চালু হলে এ জেলার লাখ লাখ মানুষ করোনা সংক্রমণের চরম ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে সচেতন মহল।
নাগরিক কমিটির সভাপতি ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক এসএম মুস্তানজিদ বলেন, 'করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতি পরিস্থিতিতে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এছাড়া মাস্ক ব্যবহারসহ মেলা, সমাবেশ ও গণ-জমায়েত এড়িয়ে না চললে সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে।'
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সভাপতি আলহাজ্ব রফিকুল আলম টুকু বলেন, 'করোনার ঊর্ধ্বগতিতে মেলার আয়োজন কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এই বিষয়ে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত ডিসি সম্মেলনে যোগদান করায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশসক মো. সাইদুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) ও ডিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত মৃণাল কান্তি দে জানান, কুষ্টিয়ায় বানিজ্য মেলা আয়োজনে জেলা প্রশাসনের পক্ষে কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।