জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৫৮ এএম, ২৫ মে,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ১০:১০ এএম, ১৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী। দিনটি উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করনে। তার ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মা জাহেদা খাতুন।
তিনি মূলত বিদ্রোহী কবি হলেও তার প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম। চির প্রেমের এ কবি প্রেম নিয়েছিলেন, প্রেম চেয়েছিলেন। তাই তো মানুষটি অনায়াসেই বলতে পারেন ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।’ পৃথিবীতে এমন কয়জন আছেন যিনি প্রেমের টানে রক্তের সম্পর্ককে অস্বীকার করে পথে বেরিয়ে পড়তে পারেন?
অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছিল তার সাহিত্যের আরেকটি উল্লেখযোগ্য উপজীব্য। আর তাই ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং নজরুল’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে এবার। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেছেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে নজরুলের কবিতা ও গান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কবি নজরুল তার প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তি সংগ্রামে অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপ্ত করেছেন। নজরুল সাহিত্যের বিচিত্রমুখী সৃষ্টিশীলতা আমাদের জাতীয় জীবনে এখনো প্রাসঙ্গিক।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত তিন দিনব্যাপী (২৫ থেকে ২৭ মে) অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী। শনিবার (২৫ মে) বিকেল ৪টায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হবে। এ ছাড়া সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খানের নেতৃত্বে আজ সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কবির সমাধিতে অর্পণ করা হবে পুষ্পস্তবক।
এ ছাড়া ময়মনসিংহ ও জাতীয় কবির স্মৃতি বিজড়িত কুমিল্লার দৌলতপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
জাতীয় পর্যায়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানমালা বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেলসমূহ সম্প্রচার করবে। কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালির চিরায়ত মনন ও চেতনার কবি। বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল প্রেম-দ্রোহ ও সাম্যের কবি হিসেবে পরিচিত। তার কালজয়ী লেখনিতে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে মন্ত্র শাণিত ছিল। কুসংষ্কার, ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কবি মানবতার জয়গান গেয়েছেন। ব্রিটিশ শাসকদের শোষণ, নির্যাতন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কলম ধরে তিনি বাঙালির জাতীয়তা বোধের জাগরণ ঘটিয়েছিলেন।
বিবৃতিতে তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, অনুরাগীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে। এ ছাড়া বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে স্থাপিত নজরুল প্রতিকৃতিতেও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কবির মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও সঙ্গীতানুষ্ঠান।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল সোয়া ৬টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা শোভাযাত্রা নিয়ে সকাল সাড়ে ৬টায় কবির সমাধিতে যাবেন। পরে তারা জাতীয় কবির মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন ও রুহের মাগফেরাত কামনায় ফাতেহা পাঠ করবেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাপতিত্বে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও কাজী নজরুল ছিলেন একাধারে কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগৎকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন তিনি। তার কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে তার লেখনি। তার কবিতা ও গান যুগ যুগ ধরে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে মানুষকে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়ে বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন। রাজধানীর ধানমন্ডিতে একটি বাড়িও দেন কবির জন্য।