যে ছবি নাড়িয়ে দিয়েছিল দস্তয়েভস্কিকে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৩৩ পিএম, ৫ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২৪ | আপডেট: ০৮:২৪ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
মিতব্যয়িতার অপবাদ রুশ সাহিত্যিক ফিওদর দস্তয়েভস্কিকে তাঁর পরম শত্রুও দিতে পারবে না। লেখালেখি করে টাকাপয়সা একদম কম কামাননি, কিন্তু এর প্রায় সবটাই উড়িয়ে ফেলতেন জুয়ায়। তারপর দেখা যেত, সারা মাস তাঁর চলা লাগছে ধারদেনা করে।
তো এ রকমই এক ঋণগ্রস্ত মৌসুমে ১৮৬৭ সালের আগস্টে দস্তয়েভস্কি তাঁর নতুন স্ত্রী অ্যানাকে নিয়ে ঘুরতে চলে গেলেন জেনেভায়। উদ্দেশ্য যতটা না মধুচন্দ্রিমা, তার চেয়ে বেশি পাওনাদারদের হাত থেকে বাঁচা। পথিমধ্যে এই নবদম্পতি বাসেলে থামলেন ওখানকার জাদুঘর দেখার জন্য। এমনিতে এসব জাদুঘরের প্রতি দস্তয়েভস্কির খুব টান ছিল না, এগুলো খুব সচেতনভাবেই এড়িয়ে চলতেন তিনি। কিন্তু এ জাদুঘরে দস্তয়েভস্কি এসেছিলেন একটা বিশেষ ছবির আকর্ষণে—‘কবরের ভেতর মৃত খ্রিষ্ট’, যা হান্স হোলবাইন দ্য ইয়াঙ্গারের আঁকা।
এ ছবির কথা তিনি ঢের শুনেছিলেন। এরপর নিজের চোখে ছবিটা দেখার পর এই রুশ ঔপন্যাসিকের কী অবস্থা হয়েছিল, তা তাঁর স্ত্রী অ্যানার দিনপঞ্জিতে কিছুটা পাওয়া যায়। ছবিটার সামনে দাঁড়িয়ে দস্তয়েভস্কি নাকি স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিলেন, যাকে বলে পুরোপুরি নিশ্চল। থরথর করে কাঁপছিল তাঁর মুখ। দস্তয়েভস্কির মৃগীরোগ ছিল, তাই অ্যানা ভেবেছিলেন বোধ হয় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কিছুক্ষণ পর অবশ্য স্বাভাবিক হয়ে উঠলেন দস্তয়েভস্কি। তারপর আরেকবার গেলেন ছবিটার সামনে।
তাঁর স্ত্রী অ্যানার কাছে অবশ্য এ ছবি খুব কুৎসিত মনে হয়েছিল। ছবিতে যিশুখ্রিষ্টের হাতে-পায়ে শুকানো রক্তের ক্ষত, বীভৎস নীল ঠোঁট-চিবুক-গাল, বুকের চামড়া ফেটে যেন বের হয়ে আসতে চাইছে পাঁজরের হাড়, তার পাশে ঝুলে আছে একটুখানি আলগা মাংস। নিষ্প্রাণ চোখ দুটো আধখোলা বটে, কিন্তু তা আর দেখতে পায় না কিছুই। যিশু নিথর শুয়ে আছেন। আর তাঁর লাশের সারা শরীরে পচন।