ফিলিস্তিনিদের গাজা ছাড়ার নির্দেশ ইসরায়েলের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩১ পিএম, ১১ জুলাই,বৃহস্পতিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৪:৫৭ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
অবরুদ্ধ গাজা সিটি থেকে ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। উত্তর গাজায় অভিযান জোরদার হওয়ার মুখে বুধবার ইসরায়েল বিমান থেকে লিফলেট ছড়িয়ে জরুরি ভিত্তিতে ফিলিস্তিনিদের সরে যেতে বলেছে।
তবে ফিলিস্তিনিরা বলছে, তাদের যাওয়ার নিরাপদ কোনও জায়গা নেই। দক্ষিণের বিভিন্ন স্থানেও তারা হামলার মুখে পড়ছে। বেশির ভাগ মানুষই তাঁবুতে গাদাগাদি করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
আরব নিউজ জানায়, গাজার মধ্য, দক্ষিণ এবং উত্তরে বোমা হামলা চলছে। ওদিকে, কর্মকর্তারা কাতারে বসে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
সেনাবাহিনীর বিলিকৃত লিফলেটে বলা হয়েছে, গাজা সিটি থেকে দেইর আল-বালা এবং আল-জাওয়াইয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে ‘দ্রুত ও বিনা তল্লাশিতে’ দুটি নিরাপদ সড়ক দিয়ে যাওয়া যাবে। ‘গাজা সিটির সবাইকে’ উদ্দেশ করে বিলি করা লিফলেটগুলোতে শহর থেকে নিরাপদ এলাকায় যাওয়ার রাস্তা নির্দেশ করা হয়েছে। এতে সতর্ক করা হয়েছে শহরটি একটি বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র থাকবে বলে। কারণ, সেনাবাহিনী হামাস লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানছে।
ইসরায়েল গত ২৭ জুন শহরের একটি অংশে প্রথম আনুষ্ঠানিক উচ্ছেদের নির্দেশ জারি করেছিল। পরে আরও দুটি নির্দেশ জারি করা হয়। এদিকে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে খান ইউনিস শহরের নিকটবর্তী আবাসন আল-কাবিরা শহরে এক স্কুল সংলগ্ন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের বিমান হামলায় অন্তত ২৯ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি চিকিৎসা কর্মকর্তারা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার খান ইউনিসের পূর্বদিকের আবাসন শহরের আল-আওদা স্কুলের গেটের পাশেই আঘাত হানে ইসরায়েলি বিমান। এই নিয়ে চার দিনের মধ্যে চতুর্থবারের মতো গাজার আরেকটি স্কুল ভবনে আঘাত হানল ইসরায়েল, যেটি একটি আশ্রয় শিবির হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ‘নির্ভুল অস্ত্র’ ব্যবহার করে ‘হামাসের সামরিক শাখার এক সন্ত্রাসীর’ অবস্থান লক্ষ্য করে হামলাটি চালানো হয়েছে। গাজার হামাস পরিচালিত গণমাধ্যম দপ্তরের পরিচালক ইসমাইল আল-থাওয়াবতা জানান, মঙ্গলবার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে, ৯ মাস ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান অভিযান এবং সীমান্ত অবরোধের কারণে খাদ্যসামগ্রীর প্রবেশ ও সরবরাহ ব্যবস্থা রীতিমতো ভেঙে পড়েছে গাজায়। ফলে ইতোমধ্যে সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে এবং সময় যত গড়াচ্ছে, দুর্ভিক্ষও তত ছড়িয়ে পড়ছে। খাদ্যের দুষ্প্রাপ্যতা এবং তার ফলে সৃষ্ট অপুষ্টি ও এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় এ পর্যন্ত গাজায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩৩ শিশুর। মৃত এই শিশুদের অধিকাংশই গাজার উত্তরাঞ্চলীয় বিভিন্ন এলাকার। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে এ তথ্য।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই তথ্যকে সমর্থন করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের প্যানেলও। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে প্যানেলের সদস্যরা জানিয়েছেন, সফরের সময় তারা গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিস এবং মধ্যাঞ্চলীয় উপশহর দেইর আল-বালাতে অপুষ্টিজনিত কারণে বেশ কয়েক শিশুকে মৃত ও মুমূর্ষু অবস্থায় দেখেছেন। গাজার মধ্যাঞ্চলে জরুরি স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও এই শিশুদের মৃত্যু গাজায় ছড়িয়ে পড়তে থাকা দুর্ভিক্ষের পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।