যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হলে পদত্যাগ করবেন ইসরায়েলি দুই মন্ত্রী!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:২৫ এএম, ২ জুন,রবিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৪:০৫ এএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব খোলাসা করেছেন তাতে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রাজি হলে ইসরায়েলের দুই উগ্র ডানপন্থী মন্ত্রী ক্ষমতাসীন জোট ছাড়ার ও ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিস এবং জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বলেছেন যে, হামাসকে ধ্বংস করার আগে যেকোনো চুক্তি ইসরায়েলের স্বার্থবিরোধী।
তবে পাল্টা অবস্থান ইসরায়েলের বিরোধী জোটের। যুদ্ধবিরোধী এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করলে বিরোধী নেতা ইয়ার ল্যাপিড ক্ষমতাসীন নেতানিয়াহু সরকারকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
নেতানিয়াহুর ডানপন্থী জোট সংসদে একটি ছোটখাটো সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আছে। মি. বেন-গভিরের ওটজমা ইয়েহুডিত (ইহুদি শক্তি) পার্টির ছয়টি আসন রয়েছে। আর মি. স্মোট্রিসের ধর্মীয় জায়োনিজম পার্টির রয়েছে মাত্র সাতটি আসন। তারা ক্ষমতায় থাকতে জোটবদ্ধ হিসেবে সংসদে রয়েছে।
অপরদিকে, ইসরায়েলের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিরোধী রাজনীতিবিদদের একজন ইয়ার ল্যাপিড। এই সংকটে তিনি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে তার সমর্থনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তার দল ইয়েশ আতিদ ২৪টি আসন নিয়ে সংসদে রয়েছে। রাজনীতিতে যাদের ভবিষ্যতও বেশ ভালো। তিনি বলেছেন, ‘বেন-গভির এবং স্মোট্রিস সরকার ছেড়ে দিলে জিম্মি চুক্তির জন্য নেতানিয়াহুর জন্য আমাদের সমর্থন আছে।’
বাইডেনের দেওয়া প্রস্তাবে ইসরায়েলি সরকারকে রাজি হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তেল আবিবে কয়েক হাজার মানুষ সমাবেশ করে। তারা এসময় নেতানিয়াহুর পদত্যাগও দাবি করেছে। এসময় বিক্ষোভকারী এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। তখন কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটকও করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
শনিবার এক যৌথ বিবৃতি মিশর কাতার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থ্যতাকারীরা ইসরায়েল ও হামাস উভয়কেই বাইডেনের দেওয়া যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব চূড়ান্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছেন, গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি ও বন্দিদের মুক্তির জন্য চলমান আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসাবে তারা জো বাইডেনের রূপরেখার মূল বিষয়গুলোকে চূড়ান্ত করতে হামাস এবং ইসরায়েল উভয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও এই যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবনার প্রতি তার সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘হামাস যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা গ্রহণ করলে তার সরকার গাজায় বিপুল পরিমাণ সহয়তা পাঠাতে পারবে।’
এর আগে হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ বিবিসিকে বলেছিলেন, ইসরায়েল যদি রাজি থাকে তাহলে তারা এই চুক্তিতে যাবে। তবে শনিবার এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, যুদ্ধ শেষ করতে ইসরায়েল যে নীতি গ্রহণ করেছিল তাতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
হামাসের সামরিক ও শাসন ক্ষমতার ধ্বংস, সমস্ত জিম্মিকে মুক্ত করা এবং গাজা যাতে আর তাদের জন্য হুমকি না হয় তা নিশ্চিত করতেই যুদ্ধ নীতি গ্রহণ করেছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী অফিসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার আগে ইসরায়েল ‘এই শর্ত পূরণের জন্য জোর দিতে থাকবে।’
অন্যদিকে মিসর সীমান্তে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরে রাফাহতে শনিবারও ইসরায়েলি বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের উত্তরে গাজা শহরেও গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ৩৬ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা এবং প্রায় ২৫২ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে বন্দি করে গাজায় নিয়ে আসে হামাস।