আইসিজের রায়ের পরেই রাফায় ইসরায়েলের হামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৯ পিএম, ২৫ মে,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ১০:২৫ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইসিজে) রায় ঘোষণার কয়েক মিনিট পরেই ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার দক্ষিণের শহর রাফায় একটি শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
শুক্রবার (২৪ মে) আইসিজে রাফায় হামলা বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার পরপরই রাফার শাবৌরা শরণার্থী শিবিরে এই হামলা চালানো হয়। খবর বিবিসি।
পাশের হাসপাতালে কাজ করা এক কর্মী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, বোমা হামলার শব্দ ছিল ভয়ঙ্কর ও হামলার পর শাবৌরা ক্যাম্প কালো ধোঁয়ার মেঘে ঢেকে যায়। হামলার তীব্রতার কারণে এখনো উদ্ধারকারী দলগুলো সেখানে পৌঁছাতে পারেনি।
এর আগে, শুক্রবার (২৪ মে) গাজায় যুদ্ধাপরাধের শুনানি চলাকালে ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার রাফা শহরে হামলা বন্ধের নির্দেশ দেন আইসিজে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এই আদালেতের ১৫ বিচারকের একটি প্যানেল এই নির্দেশ দেয়।
রায়ে আইসিজের প্রধান বিচারপতি নওয়াফ সালাম বলেন, ‘বর্তমানে রাফায় মানবিক পরিস্থিতি বিপর্যয়কর। ইসরায়েলকে অবশ্যই অবিলম্বে রাফায় তার সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি এমন যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, যা গাজাবাসীর জীবনকে আরও মর্মান্তিক করে তুলতে পারে।’
রয়টার্স জানিয়েছে, সামরিক অভিযান বন্ধের পাশাপাশি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছে আইসিজে।
আইসিজে কর্তৃক আদেশকৃত ব্যবস্থা প্রয়োগের অগ্রগতি সম্পর্কে ইসরায়েলকে এক মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি মানবিক সহায়তা প্রবেশের জন্য ইসরায়েলকে রাফা সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আইসিজের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেনা বলেছেন, আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাই। এটি গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শেষ করার জন্য আন্তর্জাতিক ঐকমত্যের প্রতিনিধিত্ব করে।
অন্যদিকে, এই রায় ঘোষণার পরপরই ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেছেন, ইসরায়েল তার অস্তিত্বের জন্য যুদ্ধ করছে। যারা ইসরায়েলকে যুদ্ধ বন্ধ করার কথা বলে, তারা আমাদের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে চায়। আমরা কোনোভাবেই তাতে রাজি হবো না ও যুদ্ধ চালিয়ে যাব।
এর আগে, দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক এই আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে মামলা করেছিল। সেই মামলার অংশ হিসেবেই পরে রাফায় অভিযান বন্ধে এই জরুরি ব্যবস্থা চেয়েছে দেশটি।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে এই দশকের সবচেয়ে বড় হামলা চালায় হামাস। এর পরপরই গাজায় বিমান হামলা ও স্থল হামলা শুরু করে ইসরায়েল। আট মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত ৭৯ হাজার ছাড়িয়েছে। এ গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা।
জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, গাজার ২২ লাখ অধিবাসী দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে। দ্রুত ত্রাণ পৌঁছাতে না পারলে বিশ্বকে জবাবদিহি করতে হবে।
এদিকে, ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরের বিভিন্ন শহরেও ছড়িয়ে পড়তে থাকে সহিংসতা। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, গত ৭ মাসে মোট ৮০০টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে পশ্চিম তীরের বিভিন্ন শহরে। এসব সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ।