উত্তরপ্রদেশে জেতা আসন ধরে রাখাই মোদির চ্যালেঞ্জ!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৫০ এএম, ১৫ মে,
বুধবার,২০২৪ | আপডেট: ০১:১০ এএম, ১৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
ভারতের উত্তরপ্রদেশে লোকসভার প্রথম চার দফার নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি যে বেশ কিছু জেতা আসন হারাতে চলেছে, সে বিষয়ে দলটির নেতারা এক রকম নিশ্চিত।
ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে বাকি তিন দফায় পাঁচ বছর আগে দল যে ফল করেছিল, তা ধরে রাখতেই এখন মরিয়া তারা।
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের লড়াই শেষ। আগামী তিন দফায় নির্বাচন হতে চলেছে উত্তরপ্রদেশের বুন্দেলখণ্ড ও পূর্বাঞ্চল এলাকায়, যা প্রথাগত ভাবে বিজেপির গড় বলেই পরিচিত। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
২০১৪ সালে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি জিতেছিল ৭১ আসনে। ২০১৯ সালে সেই আসন কমে দাঁড়ায় ৬২তে। এ যাত্রায় ৮০টি আসনের লক্ষ্য নিয়ে প্রচারণা চালালেও, আগামী তিন দফায় নতুন করে আসন জিতে ঘাটতি মেটানো দূরে থাক, জেতা আসন ধরে রাখাই প্রধান লক্ষ্য বিজেপি নেতৃত্বের।
প্রথম চারটি পর্বে মূলত কৃষক ও মুসলিম অধ্যুষিত পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের ৩৯টি আসনে ভোট হয়েছে। আগামী সোমবার বুন্দেলখণ্ড ও মধ্য উত্তরপ্রদেশে ১৪টি আসনে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। পাঁচ বছর আগে ওই ১৪টি আসনের মধ্যে রায়বরেলী ছাড়া বাকি সব ক’টিতেই জিতেছিল বিজেপি।
বাকি দু’টি পর্বে যে ২৭টি আসন আছে, সেখানে বিজেপি ও তার শরিক দলগুলি মোট ২৩টি আসন জিতেছিল। বাকি চারটি আসন পেয়েছিল মায়াবতীর দল বিএসপি।
সব মিলিয়ে বাকি থাকা ৪১টি আসনের মধ্যে পাঁচ বছর আগে গেরুয়া শিবির জেতে ৩৬টি আসনে। ফলে দল বিলক্ষণ বুঝতে পারছে ওই এলাকায় নতুন করে ভাল ফল করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য।
উপরন্তু এবারে দেশের অন্য প্রান্তের মতোই মোদি ঝড়ের কোনও অস্তিত্ব নেই যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে। সুতরাং বুন্দেলখণ্ড ও পূর্বাঞ্চলে দলের ফল কেমন হবে, তা নিয়েও উদ্বিগ্ন বিজেপি নেতৃত্ব।
বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের অন্তত ২০টি লোকসভায় জয়ের ব্যবধান ১০ হাজারেরও কম ছিল। সেই আসনগুলিতে মোদি ঝড়ের অভাবে দলীয় প্রার্থীরা নিজের ক্যারিশ্মায় কতটা ভোট টানতে পারেন, তার ওপরই ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করছে।
তা ছাড়া পাঁচ বছর আগে বিজেপিকে অনেকটাই স্বস্তি দিয়ে উত্তরপ্রদেশের ৩৭টি আসনে প্রার্থী দেয়নি বিএসপি। ফলে গত লোকসভা নির্বাচনে দলিত ও জাটভ ভোটের একটি বড় অংশ বিজেপির প্রার্থীর ঘরে পড়ে। কিন্তু এ পর্বে দলিত সমাজের বড় অংশ মুখ ফিরিয়েছেন বিজেপি থেকে।
তা ছাড়া বিজেপি চারশো আসন পেলে সংবিধান পরিবর্তন করে সংরক্ষণ তুলে দিতে পারে, বিরোধীদের ওই প্রচারও প্রভাবিত করেছে দলিত সমাজকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গতবার বিজেপি প্রার্থীরা ঢেলে দলিত ভোট পেলেও, এবার তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বলেই প্রাথমিক প্রবণতায় লক্ষ করা যাচ্ছে। এমনকি যে আসনে বিএসপি প্রার্থী নেই, সেখানে ‘শ্রেণি-শত্রু’ হলেও সমাজবাদী পার্টির প্রার্থীকে ভোট দিতে দ্বিধা করছেন না দলিত প্রার্থীরা।
তবে বিজেপির জন্য ইতিবাচক হল, দারা সিংহ চৌহান ও সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টির নেতা ওমপ্রকাশ রাজভড়ের এনডিএ-তে অন্তর্ভুক্তি। বিজেপি নেতৃত্বের মতে, দারা সিংহের অন্তর্ভুক্তির ফলে গোটা উত্তরপ্রদেশে বিভিন্ন স্থানে যে ননিয়া-চৌহান ভোট রয়েছে, তা বিজেপির পক্ষে যাবে। আর ওমপ্রকাশ রাজভড় পিছনে থাকায় পূর্বাঞ্চলে রাজভড় তথা পিছিয়ে থাকা সমাজের ভোট বিজেপি প্রার্থীরা পেতে যাচ্ছেন।
তবে বিজেপির কাছে বাড়তি চ্যালেঞ্জ হল পূর্বাঞ্চলে মায়াবতীর মোকাবিলা করা। গতবার মোদি ঝড় থাকা সত্ত্বেও পূর্বাঞ্চলে চারটি আসন দখল করে নিয়েছিল মায়াবতীর দল। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। মোদি ঝড় তো নেই-ই,উল্টে বিরোধিতার হাওয়া সর্বত্র।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিভাজনের রাজনীতিও এবারের ভোটে সেভাবে হাওয়া তুলতে ব্যর্থ। উল্টো দিকে নানাবিধ কারণে বিজেপির বিরুদ্ধে যাদব ভোটের মতো দানা বেঁধেছে দলিত ভোটও। বিজেপি নেতৃত্ব ভাল করেই জানেন, সঙ্ঘবদ্ধ ওই দলিত ভোট অনেক হিসেব গুলিয়ে দিতে পারে। সে কারণে এখন মোদি ৪০০ আসনের লক্ষ্য ছেড়ে ভিন্ন বিষয়ে প্রচারে জোর দেয়ার কৌশল করেছেন। আর ৪০০ আসনের কথা বললেও, তিনি যে ক্ষমতায় এসে সংবিধান পরিবর্তন করবেন না, তা-ও একই সঙ্গে জানিয়ে রাখছেন।