রাশিয়ার নির্বাচনে কীভাবে জয়ী হন পুতিন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:১৫ পিএম, ১৬ মার্চ,শনিবার,২০২৪ | আপডেট: ০২:৫০ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া মানে সেখানে শুধু একজন প্রার্থী এবং ওই একজনই বিজয়ী: ভ্লাদিমির পুতিন
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের করা এই মন্তব্য যেন ভোটের মাঠে খোদ পুতিনের অব্স্থানকেই প্রকাশ করছে। দেশটির এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও পুতিন যেন একাই প্রার্থী এবং তিনিই বিজয়ী
শুক্রবার সকালে রাশিয়ায় আনুষ্ঠানিক ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। দেশটির ১১টি টাইম জোনে এই ভোটগ্রহণ চলবে ১৭ মার্চ পর্যন্ত। ইউক্রেনে রাশিয়াকে যুদ্ধে জড়িয়েও দেশটিতে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে রয়েছেন ৭১ বছর বয়সী সাবেক এই কেজিবি লেফটেন্যান্ট কর্নেল।
দক্ষিণ মস্কোর একটি বৃহত্তম পাইকারি বাজারে কেনাকাটা করতে আসা ৪৬ বছর বয়সী লিডমিলা পেত্রোভা বলেছেন, ‘আমি পুতিনের সমর্থক। অবশ্যই আমি তাকেই ভোট দেবো।’
তিনি রয়টার্সকে বলেন, পুতিন রাশিয়াকে নতজানু অবস্থা থেকে নিজ পায়ে ভর দিয়ে দাঁড় করিয়েছেন। পশ্চিমা ও ইউক্রেনকে রাশিয়া পরাজিত করবে। রাশিয়াকে আপনারা পরাজিত করতে পারবেন না, কখনও না।’
এ সময় লিডমিলা আরও বলেন, ‘আপনারা পশ্চিমারা কি পাগল হয়ে গেছেন? ইউক্রেনের সঙ্গে আপনাদের কাজ কী?’
পশ্চিমাদের কাছে পুতিন একজন স্বৈরশাসক, একজন যুদ্ধাপরাধী, একজন খুনি। এমনকি গত মাসে পুতিনকে ‘ক্রেইজি এসওবি (সান অব অ্যা বিচ)’ বলেও মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, তার স্বৈরতন্ত্র রাশিয়াকে দাসত্বে পরিণত করেছে।
রাশিয়ায় করা একাধিক জনমত জরিপ ও দেশটির কয়েকটি সিনিয়র সূত্রের সাক্ষাৎকার অনুসারে, ইউক্রেনের যুদ্ধ রাশিয়ায় পুতিনের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর পাশাপাশি তার অবস্থান আরও পাকাপোক্ত করেছে।
ক্রেমলিনের উচ্চ পর্যায়ের এক সূত্র বলেছেন, ‘কোনও সন্দেহ নেই, এটি জীবন পাল্টে দেওয়ার মতো একটি ঘটনা ছিল।’
রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি তার পরিচয় গোপন রাখার শর্ত দিয়েছেন ওই সূত্র।
রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, ‘পুতিনের কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, তিনি একেবারে অন্য উচ্চতায় চলে গেছেন। নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে রাশিয়াকে একঘরে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে পশ্চিমার একটি মারাত্মক ভুল করেছে। এর মাধ্যমে দেশটির জনগণ এবং অভিজাত শ্রেণির একটি বিশাল অংশের মধ্যে আরও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি।
বিশেষ সামরিক অভিযান
আরেক সিনিয়র সূত্র বলেছেন, নেতা হিসেবে পুতিনের শাসনের মেয়াদ কোনও রাজনৈতিক প্রশ্ন নয় বরং তার স্বাস্থ্যগত বিষয়। তার স্বাস্থ্য বেশ সবল। বাস্তবিকই তার কোনও দৃশ্যমান উত্তরসূরি নেই।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়া সর্বাত্মক হামলায় চালায়, যেটিকে তারা ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ নামে অভিহিত করেছিল। পূর্বাঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে রুশপন্থি ইউক্রেনীয় ও রুশ সমর্থিতদের মধ্যে আট বছরের সংঘাত শেষে এই সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া।
সর্বশেষ এই যুদ্ধে উভয়পক্ষের হাজার হাজার সেনা নিহত ও আরও অনেক সেনা আহত হয়েছেন। এই যুদ্ধে ইউক্রেনের হাজার হাজার বেসামরিক হতাহতের পাশাপাশি তাদের অর্থনীতি ও অবকাঠামো কোটি কোটি ডলার মূল্যের ক্ষয়ক্ষতির মুখের পড়েছে।
পশ্চিমারা ইউক্রেনে শত শত কোটি ডলার মূল্যের মানবিক ও সামরিক সহযোগিতা পাঠিয়েছে। পশ্চিমা নেতারা পুতিনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার বৈশ্বিক প্রভাব পুনরুদ্ধারের জন্য ইউক্রেনে নৃশংস সাম্রাজ্যবাদী ধাঁচের যুদ্ধ পরিচালনার অভিযোগ করেছেন।
পশ্চিমাদের সঙ্গে যুদ্ধ
ইউক্রেনের যুদ্ধকে পুতিন ক্ষয়িষ্ণু পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে হাজির করছেন। তার দাবি, ১৯৮৯ সালে বার্লিন দেয়ালের পতনের পর পশ্চিমারা রাশিয়াকে অপদস্থ করেছে ইউক্রেনসহ তাদের বলয়ের দেশগুলোতে অনধিকার প্রবেশ করে।
পণ্য নয়, পশ্চিমাদের রাজনীতি ও উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহে থাকা রুশদের মধ্যে পুতিনের এই অবস্থানের আবেদন রয়েছে। ক্রেমলিনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনেকে–যারা পুতিনের টিম হিসেবে পরিচিত– তারা প্রকাশ্যে ন্যাটোর সঙ্গে যুদ্ধের কথা বলে আসছেন।
রুশ জরিপকারী লেভাডা সেন্টারের জরিপ অনুসারে, ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পূর্বে পুতিনের পক্ষে সমর্থন ছিল ৭১ শতাংশ, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৮৬ শতাংশ। ২০০৮ সালে জর্জিয়া ও ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের সময়ও পুতিনের জনপ্রিয়তা বেড়েছিল।