সুইডেনে কোরআন পুড়িয়ে কট্টরপন্থিদের বিক্ষোভ, ক্ষুব্ধ তুরস্ক
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৮:২২ এএম, ২২ জানুয়ারী,রবিবার,২০২৩ | আপডেট: ০৫:৩৭ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সুইডেনে বিক্ষোভ করেছে উগ্র কট্টরপন্থি সমর্থকরা। আর এই বিক্ষোভে ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে তুরস্কের দূতাবাসের সামনে উগ্র কট্টরপন্থিরা এই ঘটনা ঘটায়।
এদিকে এই ঘটনায় নিন্দা জানানোর পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তুরস্ক। শনিবার (২১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টকহোমে তুর্কি দূতাবাসের সামনে উগ্র ডানপন্থি সমর্থকদের বিক্ষোভে কোরআন পোড়ানোসহ কুর্দিদের পৃথক বিক্ষোভের ঘটনায় সুইডেনের নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক। শনিবার আঙ্কারা জানিয়েছে, তারা সুইডেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর একটি সফর বাতিল করে দিয়েছে।
মূলত মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোতে সুইডেনের সদস্যপদ পাওয়া নিয়ে তুরস্কের আপত্তি কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে সুইডিশ ওই প্রতিরক্ষামন্ত্রীর আঙ্কারা সফর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কারণ ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর ইউরোপে রুশ আতঙ্ক বেড়ে যাওয়ায় সামরিক এই জোটটিতে প্রবেশের জন্য তুরস্কের সমর্থন প্রয়োজন সুইডেনের।
আল জাজিরা বলছে, রাজধানী স্টকহামে শনিবার উগ্রপন্থি সুইডিশ রাজনীতিবিদ রাসমুস পালুদানকে তুরস্কের দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করার অনুমতি দেয় সুইডেন। আর সেখানেই বিক্ষোভের নামে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর কাজটি পরিচালনা করেন ড্যানিশ উগ্র ডানপন্থি রাজনৈতিক দল হার্ড লাইনের নেতা রাসমুস পালুদান।
এর আগে গত বছরের এপ্রিলে মুসলিমদের পবিত্র রমজান মাসে পালুদানের কোরআন পোড়ানোর ঘোষণা সুইডেনজুড়ে দাঙ্গার জন্ম দিয়েছিল।
কাতারভিত্তিক এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, পুলিশ দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পালুদান একটি লাইটার দিয়ে পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সেখানে তিনি সুইডেনে ইসলাম এবং অভিবাসনকে আক্রমণ ও সমালোচনা করেন। তবে এই ঘটনায় শান্তিপূর্ণভাবে পাল্টা বিক্ষোভের জন্য প্রায় ১০০ জন লোক কাছাকাছি স্থানে জড়ো হয়েছিলেন।
সেখানে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি মনে করেন মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকা উচিত নয়, তবে আপনাকে অন্য কোথাও থাকতে হবে।’
এদিকে এই ঘটনায় বিবৃতি দিয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানায়।
মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমরা আমাদের পবিত্র গ্রন্থের ওপর জঘন্য হামলার সম্ভাব্য সবচেয়ে জোরালো ভাষায় নিন্দা জানাই... মত প্রকাশের স্বাধীনতার আড়ালে এই ইসলাম বিরোধী কাজের অনুমতি দেওয়া সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু করে পরিচালিত এই কাজ আমাদের পবিত্র মূল্যবোধের অবমাননা করে।’
এছাড়া তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করতে সুইডিশ কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এটি একটি বর্ণবাদী কাজ, এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নয়।’
এদিকে সৌদি আরব, জর্ডান এবং কুয়েতসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশও পবিত্র কোরআন পোড়ানোর নিন্দা জানিয়েছে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, সৌদি আরব সংলাপ, সহনশীলতা এবং সহাবস্থানের মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে এবং ঘৃণা ও চরমপন্থাকে প্রত্যাখ্যান করছে।
এছাড়া ছোট একটি দল আঙ্কারায় সুইডিশ দূতাবাসের বাইরে কোরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে জড়ো হয়েছিল। একইসঙ্গে শনিবার সন্ধ্যায় ইস্তাম্বুলেও বিক্ষোভ হওয়ার কথা ছিল।
মূলত গত বছরের জুনে সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দিতে তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি করে ফিনল্যান্ড-সুইডেন। ওই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, কুর্দি সন্ত্রাসীদের কোনও প্রশয় দিতে পারবে না এই দু’টি দেশ। একইসঙ্গে ফিনল্যান্ড-সুইডেনে বসবাসরত পলাতক কুর্দি সন্ত্রাসীদের তুরস্কের হাতে তুলে দিতে হবে। তবে সুইডেন সেসব শর্ত ভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সামরিক জোট ন্যাটোতে তুরস্ক যোগ দেয় ১৯৫২ সালে। নিয়ম অনুযায়ী, মার্কিন নেতৃত্বাধীন এই জোটে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের সম্মতির প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে এই জোটে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করার সুযোগ রয়েছে তুরস্কের।