দুই পরাশক্তির রেষ এবার ঢাকা ছাড়িয়ে মস্কোয়
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০:৩৫ এএম, ২৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৩৮ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ঢাকায় গত সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি আর বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে সীমিত থাকল না। এবার তার রেষ মস্কো পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিষয় তুলে মস্কোয় বসে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা মস্কোর স্থানীয় সময় অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার নিয়মিত ব্রিফিং করেন। ব্রিফিংয়ে তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের চেষ্টা শিরোনামে বিবৃতি দেন।
তাঁর বিবৃতিতে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাজ্যের বার্ষিক মানবাধিকার-গণতন্ত্রবিষয়ক প্রতিবেদন, আফগানিস্তানে যুক্তরাজ্যের সেনাবাহিনীর অপরাধের তদন্ত, তুরস্কে খুন হওয়া রুশ রাষ্ট্রদূতের মৃত্যুবার্ষিকীসহ অন্যান্য বিষয়ও উঠে আসে।
আজ রবিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে এই বিবৃতি প্রচার করেছে ঢাকার রুশ দূতাবাস।
মস্কোর দৃষ্টিতে ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের কী ভূমিকা এবং ইউরোপে তার প্রভাব কেমন, তা তুলে ধরতে টুইটারে একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করেছে ঢাকায় রুশ দূতাবাস
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত ১৪ ডিসেম্বর সকালে রাজধানীর শাহীনবাগে প্রায় এক দশক ধরে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলামের বাসায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময় বাসার বাইরে একদল লোক তাঁকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করেন। তিনি নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় সেখান থেকে বেরিয়ে যান। সেদিন দুপুরে শাহীনবাগের ঘটনা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক করেন পিটার হাস। সেখানে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার কথা উল্লেখ করে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানান।
পিটার হাসের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ঘটনাটি নিয়ে ওয়াশিংটনেও আলোচনা হয়েছে। গত ১৫ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের সঙ্গে আলোচনায় পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মার্কিন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, তাঁরা বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা ঘিরে ব্যাপকভাবে প্রচারিত ঘটনাটি লক্ষ করেছেন। তিনি ২০১৩ সালে নিখোঁজ বিরোধী দলের এক নেতার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি সংগঠনের লোকজনের কারণে তাঁর নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। সংগঠনটির লোকজন রাষ্ট্রদূতের সেখানে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন না।
মারিয়া জাখারোভা বলেন, ঘটনাটি মার্কিন কূটনীতিকের তৎপরতার প্রত্যাশিত ফল। যিনি বাংলাদেশের নাগরিকদের মানবাধিকার সুরক্ষার নামে ক্রমাগত দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন। সম্প্রতি তাঁর যুক্তরাজ্য ও জার্মান কূটনৈতিক মিশনের সহকর্মীরা একই লক্ষ্যে যুক্ত থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনের স্বচ্ছতা, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার বিষয়ে খোলামেলাভাবে বাংলাদেশ সরকারকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
পিটার হাসের শাহীনবাগে নিখোঁজ বিএনপি নেতার বাসায় যাওয়ার সমালোচনা করেন মারিয়া জাখারোভা। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার মৌলিক নীতি লঙ্ঘন করে, এমন পদক্ষেপগুলো মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
মারিয়া জাখারোভো প্রশ্ন করেন, ‘কেউ যদি জানতে চান, কূটনীতিক, দায়মুক্তি, দূতাবাস, নিরাপত্তা—শব্দগুলো কেমন হবে? আমরা সব সময় আন্তর্জাতিক আইন, কূটনৈতিক ও কনস্যুলার সম্পর্কে ভিয়েনা সনদ অনুযায়ী এই বিষয়গুলো অনুসরণের আহ্বান জানাই। এটাই যে মূলনীতি, সেটাই সত্য। আমরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশগুলোকে শুধু তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই যত্নবান ও মন্তব্য করার জন্য বলব না, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ বিভিন্ন দেশ ও তাদের প্রতিনিধিরা যখন তাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে, তখন তাঁদের সহকর্মীদের সমর্থন করার আহ্বান জানাই।’
মারিয়া জাখারোভো বলেন, বিভিন্ন দূতাবাস, কনস্যুলেট জেনারেল, সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলা করা হচ্ছে, বা তারা হুমকি পাচ্ছে, এটা যুক্তরাষ্ট্র দেখতে বা শুনতে চায় না। এতে যেন তাদের কিছু আসে যায় না।
মারিয়া জাখারোভা বলেন, বড়জোর তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নীরব থাকে। আর সবচেয়ে খারাপ হলো, তারা ঘটনাগুলোর (হুমকি বা হামলা) পক্ষে যুক্তি দাঁড় করায়। যখন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীরা সিরিয়ায় রুশ দূতাবাসের বিরুদ্ধে একের পর এক হামলা চালিয়েছিল, তখন তাঁরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে মার্কিনিদের এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু রুশ প্রস্তাবকে ওয়াশিংটন সমর্থন করেনি।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন ঘিরে ওয়াশিংটন-মস্কোর মধ্যে বড় পরিসরে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়। দুই পরাশক্তির এই উত্তেজনার ঢেউ বাংলাদেশে এসেও পড়ে। গত মঙ্গলবার হঠাৎ ঢাকায় রুশ দূতাবাস একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না করার নীতির প্রতি রাশিয়া অবিচল।
এর এক দিন পর ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস তাদের টুইটে ওই বিবৃতি উল্লেখ করে বলে, রাশিয়া কি একই নীতি ইউক্রেনে অনুসরণ করেছিল? গত বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকায় রুশ দূতাবাস টুইটে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার সমালোচনা করে একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে। এতে ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র যে পশ্চিমা বলয়ের নেতৃত্বে রয়েছে, তা তুলে ধরা হয়।