মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে সরকারের প্রতি ১২ মানবাধিকার সংস্থার আহ্বান
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪:২৪ পিএম, ৯ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:৪৮ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে হবে বলে দাবি জানিয়েছে দেশি-বিদেশি ১২টি মানবাধিকার সংস্থা। ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, এ বছরের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের স্লোগান হচ্ছে ‘সকলের জন্য মর্যাদা, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার।’ কিন্তু এমন সময় এই দিবসটি পালিত হতে যাচ্ছে যখন বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হওয়ার দিকে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা মানবাধিকার সংস্থাগুলো হচ্ছে- অ্যান্টি-ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক, এশিয়ান ফেডারেশন এগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স, এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রোজেক্ট, সিভিকাস : ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, মায়ার ডাক, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস, অধিকার এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন এগেইনস্ট টর্চার।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, অগণতান্ত্রিক চর্চা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে কার্যকর প্রতিষ্ঠানের অনুপস্থিতির কারণে ব্যাপক দায়মুক্তি দেখা দিয়েছে। বর্তমানের কর্তৃত্ববাদী সরকার বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকরণের মাধ্যমে জনগণকে সুশাসন ও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করেছে। পাশাপাশি তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারকে চরমভাবে দমন করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ইউনাইটেড ন্যাশন্স কনভেনশন এগেইনস্ট টর্চার’সহ মোট আটটি প্রধান আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশ সরকার এসব চুক্তির অধীনে থাকা বাধ্যবাধকতা উপেক্ষা করে চলেছে। বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নির্যাতনের ঘটনাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি সরকার গুমের ঘটনাগুলোকে অস্বীকার করে চলেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দায়মুক্তি ভোগ করে, কারণ বর্তমান সরকার এসব বাহিনীকে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো দাবি করেছে, কঠোর আন্তর্জাতিক সমালোচনা সত্ত্বেও সরকার সুশীল সমাজ এবং মানবাধিকার রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন বৃদ্ধি করেছে। উদাহরণ হিসেবে ‘অধিকারের’ মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে হয়রানির কথা উল্লেখ করা হয় ওই বিবৃতিতে৷ বলা হয়, সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির অভিযোগের মতো দমনমূলক আইন প্রয়োগ করে ভিন্নমতের কন্ঠকে দমন করছে। তদুপরি, ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিরোধী রাজনৈতিক দল ও ভিন্নমতাবলম্বীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নিয়মিত হামলা ও বাধা দিচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরাও বিরোধী দলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা করছেন। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযান ও নির্বিচারে গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করে চলেছে।
বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে, বাংলাদেশে সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমগুলো প্রায়ই মামলা, হয়রানি, গুরুতর শারীরিক আক্রমণ এবং সহিংসতার মতো অনেক ধরনের দমন-পীড়নের সম্মুখীন হয়। সেন্সরশিপ, হুমকি, ভয়ভীতি এবং নিপীড়ন গণমাধ্যমগুলোর জন্য একটি সাধারণ বিষয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ২০২২ উপলক্ষে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদ অবসানের আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি সরকারের প্রতি গণতান্ত্রিক নীতি, মানবাধিকার, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কথাও বলা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে অপরাধীদের বিচার নিশ্চিতে চাপ দিতে জাতিসংঘের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাগুলো।
বিবৃতির শেষে বলা হয়, ‘আমরা বাংলাদেশ সরকারকে একটি স্বাধীন ও বিশেষায়িত ব্যবস্থা তৈরি করার আহ্বান জানাই, যা ভুক্তভোগী-পরিবার এবং সুশীল সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। এটি জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের সুপারিশ অনুযায়ী মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমস্ত অভিযোগ তদন্ত করবে এবং অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনবে।’