শ্রীলঙ্কায় চীনা সেনা ; তামিলনাড়ুর উদ্বেগ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৫:৩৬ পিএম, ২৩ অক্টোবর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৩২ এএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
শ্রীলঙ্কায় চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) উপস্থিতি নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারতের দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ু।
রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থার জারি করা একটি সতর্কবার্তা বলছে যে, প্রতিবেশী দেশে চীনাদের কার্যকলাপ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক এবং উপকূলরেখা বরাবর নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। রাজ্যের সমস্ত শহর/জেলায় পাঠানো নির্দেশিকায় বলা হয়েছে- পিএলএ ক্যাডারদের চলাচল এবং উত্তর শ্রীলঙ্কায় স্যাটেলাইট, ড্রোন এবং অন্যান্য যোগাযোগ সরঞ্জামের মতো হাইটেক গ্যাজেট স্থাপনের প্রেক্ষিতে উপকূলীয় জেলাগুলোতে অবিরাম নজরদারি প্রয়োজন।
একটি সূত্র জানাচ্ছে যে, পিএলএ সামুদ্রিক শসা চাষ শুরু করার আড়ালে অত্যাধুনিক গ্যাজেট স্থাপন করেছে। কয়েকদিন আগেই গোয়েন্দা সংস্থাটি একটি সতর্কবার্তায় জানায় মুষ্টিমেয় চীনা নাগরিকরা শ্রীলঙ্কাভিত্তিক রাজনৈতিক দলের ক্যাডারদের সহায়তায় সমুদ্রপথ দিয়ে গোপনে ভারতে প্রবেশ করেছে।
তামিলনাড়ু কোস্টাল সিকিউরিটি গ্রুপ একটি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার বরাতে জানায়, হাম্বানটোটা বন্দরে ডক করা চীনের স্যাটেলাইট, রকেট এবং আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের জন্য ব্যবহৃত চীনা জাহাজের উপস্থিতি নিয়ে একটি সতর্কতা জারি এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। মুল্লাইথিভু, পারুথিথিভু, আনালাইথিভু, মিসালাই এবং চাভাক্কাচেরিসহ উত্তর শ্রীলঙ্কার অনেক অংশে চীনা নাগরিকদের অবাধ বিচরণ তামিল মৎস্যজীবীদের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, চীনারা সমৃদ্ধ সমুদ্র সম্পদ শোষণ করছে, যা তাদের জীবিকার একমাত্র উৎস।
স্থানীয় তামিলদের ভয় ছিল, বিরাজমান পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের বিভাজনের দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং দ্বীপ রাষ্ট্রের উত্তর ও পূর্ব অংশে বসবাসকারী তামিলদের ওপর ভারতের প্রভাব কমিয়ে দিতে পারে। এই বছরের আগস্টে শ্রীলঙ্কা চীনা অর্থায়নে হাম্বানটোটা বন্দরে একটি চীনা স্যাটেলাইট-ট্র্যাকিং জাহাজের আগমন খোলসা করার পরে, ভারত এই সফরের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ভারত সতর্কতার সাথে নিরাপত্তা-অর্থনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছে।
পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং তামিলনাড়ু উপকূলীয় সুরক্ষা গ্রুপের প্রধান সন্দীপ মিত্তাল বলেছেন যে, শ্রীলঙ্কায় চীনা নাগরিকদের উপস্থিতি বাড়ছে, এ বিষয়টি অস্বীকার করার কিছু নেই। আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমার কাছাকাছি দ্বীপগুলোতে শ্রীলঙ্কার চীনা রাষ্ট্রদূতের ঘন ঘন সফর এবং সামুদ্রিক শসা সংগ্রহের ছদ্মবেশে এই অঞ্চলে ড্রোন সমীক্ষা, বিষয়টিকে আরও সন্দেহজনক করে তুলেছে। একদিকে যেখানে ভারতের স্নাতক প্রোগ্রামগুলো শ্রীলঙ্কার শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিচ্ছে। অন্যদিকে চীন তাদের নিজের দেশে অধ্যয়নরত শ্রীলঙ্কার স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের অর্থায়ন করছে। চীন তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যেতে শ্রীলঙ্কার যুবকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।
ডক্টর মিত্তাল, যিনি রাজ্য সামুদ্রিক নিরাপত্তা সমন্বয়কারীর পদেও রয়েছেন তিনি বলেছেন, শুধুমাত্র চীনারা ভারতীয় জলসীমায় অনুপ্রবেশ করবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাদের মিশনকে এগিয়ে নিতে তাদের দ্বারা পরিচালিত যে কেউ দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল বরাবর সীমান্তে প্রবেশ করতে পারে। তামিলনাড়ু সমস্ত উপকূলীয় জেলাগুলোতে তাদের গোয়েন্দা তথ্য সক্রিয় করতে এবং উপকূলরেখা বরাবর নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য একটি সতর্কতা জারি করেছে। তামিলনাড়ুর নিরাপত্তা সংস্থাগুলো বলেছে, উপকূলীয় সুরক্ষা প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের তহবিল সক্রিয় করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের জরুরিভিত্তিতে অনুমোদন প্রয়োজন।
২০২০ সালে দ্বিতীয় পর্যায় শেষ হওয়ার পরে, উপকূলীয় সুরক্ষা গ্রুপের জন্য তহবিল এবং অবকাঠামোগত সহায়তা বন্ধ হয়ে গেছে। তামিলনাড়ুর একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার বলছেন, কেন্দ্রের উচিত তামিলনাড়ুর ওপর ক্রমবর্ধমান হুমকি বিবেচনা করে উপকূলে অবস্থানের জন্য ভারতীয় মেরিটাইম রিজার্ভ ব্যাটালিয়ন বাড়াতে সাহায্য করা। তামিলনাড়ু কোস্টাল সিকিউরিটি গ্রুপে ৮০০ সদস্যের মধ্যে অর্ধেক পদ রয়েছে।
দলটি সীমিত জনবলসহ ৪২টি মেরিন পুলিশ স্টেশন, চেকপোস্ট এবং আঞ্চলিক জলসীমা পরিচালনা করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেছেন, ভারত সরকার এখনও একটি আঞ্চলিক উপকূলীয় সুরক্ষা প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করার অনুমোদন দেয়নি যদিও তামিলনাড়ু সরকার ইতিমধ্যেই রামেশ্বরমের কাছে ২৪০ একর জমি বরাদ্দ করেছে।