ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাস ভাঙচুর, ‘দলবদ্ধ আত্মহত্যার হুমকি’ প্রবাসীদের
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৮:৩৪ এএম, ১৭ আগস্ট,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৩০ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২৪
ইতালিতে হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশী রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে দিনভর বিক্ষোভ করেছেন। সংক্ষুব্ধ শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী চ্যান্সরি কমপ্লেক্সে ঢুকে পড়েন। তারা সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। এতে প্রধান ফটকের দুটি দরজা এবং মূল্যবান আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ইতালির পুলিশ এসে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
পরে রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাস কর্মকর্তাদের সাথে টানা সাড়ে ৪ ঘণ্টার দেন-দরবার শেষে বিক্ষোভকারীরা ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট না পেলে দলবদ্ধ আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে সেখান থেকে চলে যান। তারা বাংলাদেশের সরকার প্রধান বরাবর দুটি স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
রোমে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান (সচিব পদমর্যাদার গ্রেড-১ অ্যাম্বাসেডর) ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, বয়সসহ পাসপোর্টের তথ্য সংশোধনে দীর্ঘদিন ধরে কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী অনিয়মিতভাবে চ্যান্সরি কমপ্লেক্স এলাকায় বিক্ষোভ করে আসছেন। তাদের অন্তত ৭০ শতাংশের বয়স ৬-১২ বছর কমানোর আবেদন রয়েছে। যা সরকারের বিদ্যমান নীতিমালা এবং সিস্টেমে কভার করে না।
আবেদনকারী ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশিদের বয়স কমানোর দাবির বিষয়টি দূতাবাস বাংলাদেশ সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে উত্থাপন করছিল, যার প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত বয়স কমানোর বিশেষ সুবিধা দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেই সুযোগও নিতে পারেননি বর্তমানে বিক্ষোভরত বাংলাদেশীরা। তাছাড়া সেই বিশেষ সুবিধার মেয়াদও গত ২৭ এপ্রিল শেষ হয়ে গেছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, আবেদনকারীদের প্রতি দূতাবাস সহানুভূতিশীল, কিন্তু অনেকে ৬-১২ বছর পর্যন্ত বয়স কমাতে চান, যা অসম্ভবই বটে। তারপরও তাদের দাবিগুলো এবং স্মারকলিপি গ্রহণ করা হয়েছে এবং মানবিক বিবেচনায় সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে তা উত্থাপনের আশ্বাস দিয়ে আপাতত বিক্ষোভকারীদের থামানো গেছে।
‘ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশীদের তথ্য পরিবর্তন-সংশোধনের আবেদন গ্রহণের সময়সীমা বাড়ানোর অনুরোধ’ শীর্ষক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর প্রেরিত স্মারকলিপিতে বিক্ষোভকারীরা লিখেন- ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের সালাম গ্রহণ করবেন। বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ইউরোপের উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করি। মধ্যস্থতাকারীরা আমাদের পাসপোর্টের তথ্য পরিবর্তন করে আমাদের ঠিকই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। আমরা বন-জঙ্গল এবং সাগর পথে মৃত্যুর হাতছানিকে উপেক্ষা করে অবশেষে কাঙ্ক্ষিত স্থানে এসে পৌঁছাতে পেরেছি ঠিকই, কিন্তু তথ্য পরিবর্তনের সেই ভুলের কারণে আমরা আজ পাসপোর্ট পাচ্ছি না। ফলে আমরা অবৈধ হয়ে যাচ্ছি। আমাদের পাসপোর্ট থাকলে আমরা এখন বৈধতা অর্জন করতে পারি। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এ রকম প্রায় ১০-১২ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী রয়েছেন এই পাসপোর্ট জটিলতায়। আমরা চরম দুর্ভোগ এবং হতাশায় নিমজ্জিত। দেশে আমাদের পরিবার ঋণগ্রস্ত। অনেকের বাবা-মা গুরুতর অসুস্থ। কারো কারো মা-বাবার মৃত্যু ঘটেছে দেখারও সুযোগ পায়নি। পাসপোর্ট থাকলে আমরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারি, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
বর্তমানে আমরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছি না। পাশাপাশি আমরা কাজ-কর্ম হারিয়ে দিনে দিনে বেকার হয়ে পড়ছি। এর কুফল গিয়ে পড়ছে দেশে থাকা আমাদের পরিবারের উপর। দারিদ্র্যতা বাড়ছে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমাদের ছোট ছোট ভাই-বোনদের লেখাপড়া। তাই আমরা আজ বিশেষ আর্জি নিয়ে এসেছি আপনার কাছে, যদি আমাদের (১০-১২ হাজার) পাসপোর্ট সংশোধন করার সুযোগ দেয়ার কোনো পদক্ষেপ না নেয়া হয় তবে আমরা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দূতাবাসের সামনে আসব এবং ধুঁকে ধুঁকে না মরে দলবদ্ধভাবে স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করবো।’
এদিকে ‘ইতালি প্রবাসী কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাসপোর্ট (এম আর পি) জটিলতায় আটকে আছে, তাদের এই জটিলতা নিরসন করে পাসপোর্ট প্রদান করার আবেদন’ বিষয়ক পৃথক স্মারকলিপিতেও ভুক্তভোগীরা ১৫ দিনের মধ্যে কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশীর এমআরপি জটিলতা নিরসনের দাবি জানান। অন্যথায় তারাও গণহারে আত্মহননের হুমকি দিয়েছেন।