ভয়াবহ বিপদে শ্রীলঙ্কা, নাগরিক বিপর্যয় অব্যাহত থাকবে বছরের শেষ পর্যন্ত : রনিল বিক্রমাসিংহে
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৬:৩০ পিএম, ৪ আগস্ট,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৪৭ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
ভয়াবহ বিপদে শ্রীলঙ্কা। বছরের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে নাগরিক দুর্ভোগ। গত বুধবার পার্লামেন্টে উদ্বোধনী ভাষণে এ কথা বলেছেন নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি এখনও দেশ পরিচালনায় বিরোধী দলগুলোর সমর্থন প্রত্যাশা করছেন। তবে তারা সরকারে যোগ দিতে অনিচ্ছুক। ২০ জুলাই তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এরপর গত বুধবারই প্রথম পার্লামেন্টে ভাষণ দেন।
এ সময় রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘আমরা ভয়াবহ বিপদে। আমরা সবাই যদি একজন মানুষ হয়ে একত্রিতভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করি, তাহলেই দেশকে বিপদ থেকে উদ্ধার ও নিরাপদ করতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই পার্লামেন্টের সম্মানিত সদস্যদের পাশাপাশি দেশের সমগ্র জনতার উচিত দেশ গঠনে তাদের নিজস্ব শক্তি প্রয়োগ করা। তাদের এ অবদান অত্যাবশ্যক।’ রনিল বিক্রমাসিংহেকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে ভারতের অনলাইন দ্য হিন্দু। অনাকাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক সংকট শ্রীলঙ্কাকে ভয়ঙ্কর এক অবস্থায় ফেলেছে। দেশটি এরই মধ্যে ঋণখেলাপি হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দিয়েছে। জনতার রোষে পালিয়ে গেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবাইয়া রাজাপাকসে। শুধু তিনিই নন, তার বড় ভাই ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্র রাজাপাকসেসহ রাজাপাকসেরা, যারা শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে পারিবারিক আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন, তারা সবাই বিদায় নিয়েছেন। দল পার্লামেন্টে এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকার পরও তারা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারেননি। সব মিলে দেশটির রাজনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের সর্বোচ্চ পদ, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় এসেছেন ৬ বারের প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে।
তবে এখানে উল্লেখ্য, তিনি ৬ বার প্রধানমন্ত্রী থাকলেও একবারও মেয়াদ পূরণ করতে পারেননি। তাকে সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার মধ্যে কেউ কেউ আশা দেখতে পাচ্ছেন। আবার অনেকে মনে করছেন তিনি রাজাপাকসেদের স্বার্থ রক্ষা করছেন এবং সমালোচকদের টার্গেট করে তাদের কন্ঠরোধ করছেন। পার্লামেন্টে বক্তব্যে তিনি আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফের সঙ্গে চলমান আলোচনা নিয়ে মন্তব্য করেন। তার পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে ২৫ বছর মেয়াদি জাতীয় অর্থনৈতিক নীতি।
প্রেসিডেন্ট রনিল বলেন, তিনি আশা করছেন আইএমএফের সঙ্গে স্টাফ লেভেলের আলোচনা দ্রুত এবং সফল হবে। আইএমএফ থেকে একটি ‘এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি’র জন্য অপেক্ষা করছে কলম্বো। কিন্তু শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে পর্যাপ্ত আর্থিক নিশ্চয়তা চাইছে আন্তর্জাতিক এই ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান। এই নিশ্চয়তা হলো ঋণ পুনরুদ্ধারের।
বিক্রমাসিংহে বলেছেন, এ উদ্দেশ্যে কলম্বো নিয়োগ করেছে আন্তর্জাতিক অর্থ ও আইনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ল্যাজার্ড অ্যান্ড ক্লিফোর্ড চান্স’কে। তাদের সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা ৫১০০ কোটি বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে নিজেকে ঋণখেলাপি ঘোষণা করে। এরপরই এমন পন্থা বেছে নেয়া হয়। তার ভাষায়, ‘আমরা অদূর ভবিষ্যতে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করব আইএমএফের কাছে। এ ছাড়া যারা আমাদের ঋণ সহায়তা দিয়েছে তাদের সঙ্গে সমঝোতামূলক আলোচনা করব। একই সঙ্গে বেসরকারি ঋণদাতাদের সঙ্গেও সংলাপ শুরু হবে একটি ঐকমত্যে আসার জন্য।’
তবে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন যে, শ্রীলঙ্কায় ঋণ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ভীষণ জটিল এবং তাতে প্রচুর সময় লাগবে। দেশে কমে আসা মধ্যবিত্তের সংখ্যা এবং ব্যাপক আয় বৈষম্যের দিকে ইঙ্গিত করে প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে ঝুঁকিতে থাকা সম্প্রদায়কে টার্গেট করে পদক্ষেপ নেয়ার ওপর জোর দেন। তবে তিনি কোনো সুনির্দিষ্ট রিলিফ কর্মসূচির উল্লেখ করেননি। আইএমএফের সহায়তা কর্মসূচির জন্য অপেক্ষায় শ্রীলঙ্কা। তবে তা চূড়ান্ত করতে বেশ কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে। এই সময়ে ভারত ও চীনসহ অন্যদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে তারা। এ বছর এরই মধ্যে শ্রীলঙ্কাকে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে ভারত। যদিও শ্রীলঙ্কার জন্য করোনা মহামারির বছরগুলোতে বেইজিং মোট ২৮০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে, তবু কলম্বো যে আরও সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে, মে মাসের ৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার ঋণ ঘোষণা বাদে এ বিষয়ে তারা কোনো সাড়া দেয়নি। ভারত যে সহায়তা দিয়েছে তাকে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বের অধীনে ভারত সরকার আমাদের জীবনে শ^াস-প্রশ^াস টিকিয়ে রেখেছে। জনগণ এবং আমার নিজের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদি, তার সরকার ও ভারতের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।